পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় বিএনপি নেতারা খুশি হননি দাবি করে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান অভিনন্দন জানালেও বিএনপি অভিনন্দন জানাতে পারেনি। এর মাধ্যমে তারা পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে করার কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছে।
রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ২৩তম সভার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ড. হাছান মাহমুদ এসব মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণটি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সারা দেশ এবং পৃথিবীর সব মানুষের কাছে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়াতে দেশ ও বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সব বাংলাদেশি আনন্দিত হলেও বিএনপি নেতারা খুশি হতে পারেনি এবং অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়ে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন যে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এরপরও প্রধানমন্ত্রী এই পদ্মা সেতু সবার জন্যই নির্মাণ করেছেন, যারা প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে তারাও এই সেতু ব্যবহার করবে।”
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি আমাদের একজন জননেত্রী শেখ হাসিনা না থাকতেন, তাহলে পদ্মা সেতু কখনোই হতো না। কারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনারই সব রক্তচক্ষু, ষড়যন্ত্র, প্রতিবন্ধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সৎসাহস আছে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা একসময় পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনা করেছিল, নিজস্ব অর্থায়নের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, তাদের অনেকেই আজ প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন এবং জাতির এ সক্ষমতায় আনন্দিত হয়েছেন। যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করেছিল, সেই বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাড়ি পরে গিয়ে আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।”
সাংবাদিকদের প্রশংসা করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। জাতির সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক হিসেবে পদ্মা সেতুকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গর্ব আমাদের সবার। সাংবাদিক বন্ধুরা প্রতিটি টেলিভিশন এবং পত্রিকায় জুন মাসের শুরু থেকেই ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন এবং জাতির আবেগ-উচ্ছ্বাস গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এজন্য সব গণমাধ্যমকর্মীকে ধন্যবাদ।”
জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন- এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘের ৮০ জন র্যাপোর্টিয়ারের মধ্যে আইরিন খান এমন একজন, যিনি আগে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি দেশে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যার সময় নিশ্চুপ ছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করার সময় বিবৃতি দেননি। তিনি একচোখা নীতি নিয়ে কী বললেন সেটি গুরুত্বহীন।”
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “আইরিন খান যে দেশের বাসিন্দা, সেই যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে একটি-দুটি নয়, কমপক্ষে ৮টি আইন রয়েছে। সেগুলো হলো- ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট ২০১৮, কমিউনিকেশন্স অ্যাক্ট ২০০৩, প্রাইভেসি এন্ড ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশন্স রেগুলেন্স ২০০৩, নেটওয়ার্ক এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম রেগুলেন্স ২০১৮, রেগুলেন অভ ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস অ্যাক্ট ২০০০, কমিউটার মিসইউজ অ্যাক্ট ১৯৯০, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯৮৯ ও ম্যালিশিয়াস কমিউনিকেশন্স অ্যাক্ট ১৯৮৮। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর এমনকি অস্ট্রেলিয়ার আইনেও রয়েছে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এবং অনেক সাংবাদিকও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আশ্রয় নিয়ে মামলা করে ফল পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেখতে হবে যাতে এই আইনের কোনো অপপ্রয়োগ না হয়। শুধু সাংবাদিক না, কেউই যেন অহেতুক নিগৃহীত বা হয়রানির শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন। সেটির সঙ্গে আমি শতভাগ একমত।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার নজরে এলে আমি নিজ থেকে প্রোঅ্যাকটিভলি সমাধান করার চেষ্টা করি। তাছাড়া, এখন আর আগের মতো কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করা যায় না, সেজন্য অনুমতিরও প্রয়োজন হয়।”
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ২৩তম সভায় তথ্যমন্ত্রী জানান, এ বছর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে সাংবাদিকদের কল্যাণার্থে সাধারণ খাতে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল, তার মধ্যে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ইতোমধ্যেই বিতরিত হয়েছে। বাকি অর্থ বিতরণে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মহামারিকালীন বিশেষ সহায়তার ১০ কোটি টাকার তহবিলের প্রায় ৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। আর ৪ কোটি টাকার সিংহভাগ আগামী ঈদ-উল-আযহার আগেই বিতরণ করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে।
ডিএম/এমএইচ