ঢাকা,  বুধবার
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

চা-বিক্রি করে সংসার চালান চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া

আদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চা-বিক্রি করে সংসার চালান চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া

ছবি : টিডিএম

যে বয়সে বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সেই জীবন-জীবিকার তাগিতে ৪র্থ শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী শিশু সুমাইয়া হাতে তুলে নিয়েছে (চা-তৈরীর) গরম কেতলী। শিশু সুমাইয়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ পূর্বের হাটখোলা এলাকার যক্ষা রোগে আক্রান্ত মো: সায়েম আলী ফকিরের (৬৫) মেয়ে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে গাড়াদহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, গত বছর ধরে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু সুমাইয়ার বাবা সায়েম আলী ফকির শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। তার মেয়ে। কোনো পুত্র সন্তান নেই। এরমধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। সে গার্মেন্টস শ্রমিক স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকে। মেজ মেয়ে মারা গেছে। ৩য় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৪র্থ মেয়ে সুমাইয়া বাড়ির পাশেই ব্র্যাক স্কুলে পড়ালেখা করছেন।

ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী আরও বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিতে সংসারে আয় উপার্জনের আর কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় শিশু শিক্ষার্থী সুমাইয়া স্কুল ছেড়ে তার বাবার দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালানো শুরু করে। গত মাস আগে তার বাবার যক্ষা রোগ শনাক্ত হয়। শেষ সময়ে রোগ ধরা পড়ায় চিকিৎসার খরচ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সুমাইয়ার পরিবার।

সুমাইয়ার দিনমজুর বাবা সায়েম আলী ফকির বলেন, সরকারি খাস জায়গায় এলাকাবাসি একটি ঘর তুলে দিয়েছেন। সেই ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকি। এর মধ্যে মরণঘাতি যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছি। সংসার চালানোর মত আর কোনো উপায় না থাকায় শিশু মেয়ে সুমাইয়াকে চা বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন।

সুমাইয়ার মা মমতা বেগম জানান, সবাই যদি আমাদের পাশে দাঁড়ান সাহায্যে করেন এবং একটা গরু খাদ্য সামগ্রী দেন এবং স্বামীর ওষুধের ব্যবস্থা করেন তাইলে সুমাইয়া আবার স্কুলে যেতে পারবে।

বিষয়ে শিশু সুমাইয়া বলেন, ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে বাবার চায়ের দোকানে যায়। একদিন চা বিক্রি না করলে মা-বাবার মুখে খাবার জোটে না এবং অসুস্থ্য বাবার ওষুধ কেনা হয় না। এ কারনে লেখাপড়া বাদ দিয়ে চায়ের দোকানে চা বিক্রি করি।

এতে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ২২০ কাপ চা বিক্রি করে থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয়। দিয়ে চাল-ডাল কেনার পর বাকি টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনতে হয়। ভাবেই গত বছর ধরে চলছে আমাদের অতিকষ্টের সংসার।

৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আরও বলেন, আমি লেখাপড়া করতে চাই। আবারও স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার। সমাজের বিত্তবান মানুষেরা আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করলে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পাড়তাম।

দ্যা বার্ড সেফটি হাউজের চেয়ারম্যান মানবতাবাদী পরিবেশকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের সিরাজগঞ্জনামে ফেসবুক গ্রুপে সাড়ে চার লক্ষ সদস্য আছে তারাই মূলত আমাকে ফেসবুক ইনবক্সে, ইমেইলে আর ফোন করে মানুষের সমস্যার কথা জানান। এরপর দেশ-বিদেশ থেকে আসে আর্থিক সহায়তা। সেই অর্থেই অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

শিক্ষার্থী সুমাইয়ার জন্য আমার ফেসবুক পেইজে সহযোগিতার জন্য পোস্ট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪৩১ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। আরও ৬৬ হাজার টাকা ম্যানেজ হলেই সুমায়ার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সরকারি ভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব, করা হবে। সরকারী ভাবে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এছাড়া সুমাইয়াকে আবারও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

টিডিএম/এএম

×
Nagad