ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

গাইবান্ধা সরকারি কলেজে বেড়েছে ছিনতাই, টার্গেট মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৩:১৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

গাইবান্ধা সরকারি কলেজে বেড়েছে ছিনতাই, টার্গেট মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা

ছবি : মেসেঞ্জার

গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে  আসা শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গাইবান্ধা সরকারি কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কলেজটি। তবে সম্প্রতি এ বিদ্যাপীঠ চত্বরে প্রকাশ্যে ছিনতাই , নারী  উত্ত্যক্তের মতো  ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের আতংক বিরাজ করলেও অদৃশ্য কারনে নিশ্চুপ  প্রশাসন।

কলেজটিতে অধ্যয়নরত ১৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিবেদকের কাছে জানান, প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে ও কলেজে ঢোকার রাস্তায় দিনে দুপুরে সুযোগ বুঝে একা পেয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে থাকা নগদ অর্থ, ঘড়িসহ মূলব্যান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিচ্ছে একটি চক্র। 

ছিনতাইকারী এই চক্রের সদস্যরা সবাই বহিরাগত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগে বেপোরোয়া হয়ে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চক্রটি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন প্রবীন শিক্ষক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বখাটেরা কলেজে এসে ছাত্র ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। তারা রাতে কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটতে আসা নারী-পুরুষকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। এরা পুরোনো ক্যান্টিনের আশেপাশে থেকে নেশা করে।

গাইবান্ধা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম সরকার জানান, গত  ৯ ফেব্রুয়ারি কলেজ থেকে মেসে যাওয়ার সময় গাইবান্ধা কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কয়েকজন যুবক আমার পথ আটকিয়ে কাছে যা আছে তাই দিতে বলে , আমি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে মারপিট করে পকেটে থাকা মেস ভাড়া ও খাওয়ার সব টাকা হাতিয়ে নেয়। কলেজের সিনিয়র ভাইদের কাছে জানতে পারলাম এরা খুব প্রভাবশালী এদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কোন লাভ নেই।

ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা পয়সা খুইয়েছেন এমন ভুক্তোভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে অনেক ছাত্র ছাত্রীরা হাঁটাহাঁটি করতে আসে ও আড্ডা দেয় এই সুযোগে ঐ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা কৌশলে ছেলে ও মেয়ের বসে আড্ডা দেওয়ার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক প্রকার জিম্মি করে প্রকাশ্যে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। 

ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী নাম পরিচয় গোপন রাখা শর্তে জানান, কলেজ থেকে মেসে যাওয়ার পথে কলেজ ক্যাম্পাসে বসে থাকা কিছু বখাটে যুবক আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করত। একদিন আমার ভাইয়ের সাথে হেঁটে যাওয়ার সময় তারা আবারও উত্ত্যক্ত করে। বিষয়টি নিয়ে আমার ভাই প্রতিবাদ করলে ৭ থেকে ৮ জনের বখাটের দলটি আমার ভাইকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহত করে। ঐ ঘটনার পর থেকে আমার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়েছে তাই আমি নিয়মিত ক্লাস করতে পারছি না।

ঐ ছাত্রীর মতো আরও এমন অনেকের অভিযোগ রয়েছে তবে তারা কেউই নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে সাহস পায় না। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বখাটে এসব যুবকের বেশিরভাগ বহিরাগত যারা কেউই কলেজের শিক্ষার্থী না। এদের বাড়িও কলেজ ক্যাম্পাসের আশেপাশে ।মূলত নেশার অর্থ জোগাড় করতেই এমন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খলিলুর রহমান বলেন , কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশে আগের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কলেজ প্রশাসন। কলেজের ক্লাস শেষে বিকেল ও সন্ধ্যার আগে কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় ছাত্র ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ শুনেছি। গাইবান্ধা সরকারি কলেজের কোন শিক্ষার্থী যদি এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ক্যাম্পাসে  বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কলেজের চারদিকে বর্তমানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে দিন রাত ২৪ ঘন্টা কলেজের প্রধান ফটকে নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করে।

মেসেঞ্জার/সিয়াম/ফারিয়া