ঢাকা,  শনিবার
২০ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংশোধনের দাবীতে মানববন্ধন

রাঙামাটি প্রতিনিধি;

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ১ ডিসেম্বর ২০২২

রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংশোধনের দাবীতে মানববন্ধন

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তির পূনমূল্যায়ন করার দাবীতে মানববন্ধন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পূর্বেই বলা হয়েছে, শান্তিচুক্তি হচ্ছে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের একটি আকাংখা।কিন্তু সেই চুক্তিতেই এমন কিছু ধারা সংযোজিত হয়েছে যা বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান ও প্রচলিত বহু আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। একই সাথে তা বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক। ইতোমধ্যে শান্তি চুক্তির বিভিন্ন ধারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে।

এই রিটের রায়ে উচ্চ আদালত শান্তিচুক্তির অনেকগুলো ধারা অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্যবাসীর সাথে আলোচনা করার দাবি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য ২৬টি জাতীয় আইন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট ১২টি আইনসহ মোট ৩৮টি আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।সরকার চাইলে আমরা পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকল সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট্য প্রস্তাবনা সরকারকে দিতে প্রস্তুত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও মহিলা পরিষদ।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদা আক্তার ও সঞ্চালনা করেন রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোঃ হাবীব আজম। এসময় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা সহ-সভাপতি মোঃ নাদিরুজ্জামান,  কাজী মোঃ জালোয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকী,প্রচার সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন।

বক্তারা আরো বলেন, চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে একে একে কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস (সন্তু),জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। তাদের কাছে পাহাড়ী-বাঙালী সবাই জিম্মি। পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির মূলে রয়েছে পাঁচটি সশস্ত্র গ্রুপ। এ পাঁচটি গ্রুপের মধ্যে যতদিন সশস্ত্র সংঘর্ষের অবসান না হবে ততদিন পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে না। তাই তাদের নির্মূল করা জরুরী বলেও মানববন্ধনে দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তির পুর্ণঃ মূল্যায়ন করার দাবীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপনে ব্যর্থ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার অপসারণ, পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও স্থানীয় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প পূণঃস্থাপনের জোর দাবী জানান।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ধারা অনুযায়ী অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প অপসারণের কথা বলা হয়েছে। জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমা ও তাদের সমর্থক সুশীল সমাজ পার্বত্য চুক্তির এই শর্ত বাস্তবায়িত হয়নি বলে ব্যাপক সমালোচনা করলেও সরকারের দাবি, এই শর্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, চুক্তির শর্তানুযায়ী সরকার ইতোমধ্যেই একটি ব্রিগ্রেডসহ (কাপ্তাই) প্রায় ২৫০ এর মতো নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, সরকার যেসকল নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিয়েছে, উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কৌশলে সেসকল নিরাপত্তা ক্যাম্পের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নিয়েছে।

তাছাড়াও পার্বত্য চুক্তির পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যাহারকৃত ৬৯টি সেনাক্যাম্প উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কৌশলে দখল করে নিয়েছে। কোথাও ধর্মীয় স্থাপনা, কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোথাও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব নিরাপত্তা ক্যাম্প দখল করে নিয়ে তাদের অস্থায়ী গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর ব্যাপক হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, ক্যাম্পগুলোর ভূকৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব এলাকা থেকে সেনাক্যাম্প উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, সেসব এলাকা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় এলাকাবাসী পুনরায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে।

জেএসএস (সন্তু) কৌশলে তার সবচেয়ে চৌকস যোদ্ধাদের শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী আত্মসমর্পণ করায়নি, অন্যদিকে অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো জমা না দিয়ে ভাঙাচোরা, পুরাতন আর অকেজো অস্ত্র জমা দেয় সরকারের নিকট। সন্তু লারমা নিজেও একসময় সেকথা স্বীকার করেছেন। ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক শামিমা বিনতে রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্তু লরমা সকল অস্ত্র জমা দেয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তাই নেতৃবৃন্দরা বলেন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে পাহাড়ে সকল মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে।

ডেইলি মেসেঞ্জার/এএইচএস

dwl
×
Nagad