ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

বিজয়ী প্রার্থীর গলায় ফুলের মালা দিলেন ওসি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২২ মে ২০২৪

বিজয়ী প্রার্থীর গলায় ফুলের মালা দিলেন ওসি

ছবি : মেসেঞ্জার

দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে কুষ্টিয়া- (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বেসরকারিভাবে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।

জয়লাভের পর মঙ্গলবার রাতে উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে নবনির্বাচিত প্রার্থীকে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ফুলের মালা পরিয়ে শুভেচ্ছা জানান। যার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, ওসি হাসিমুখে ফুলের মালা পরাচ্ছেন নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে। সময় পাশে ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের।

বিজয়ী প্রার্থীকে ফুলের মালা পরানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশ সদস্যের এমন কর্মকাণ্ডে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই এই বিষয়ে বলেন, ঘটনায় অনেক কিছু বোঝা যায়। যেহেতু এই উপজেলা নির্বাচনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিসুর রহমান কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া এবং প্রশাসনের নীরব ভূমিকার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন। সেহেতু অভিযুক্ত প্রার্থী জয়ী হওয়ার পরপরই ওসির এমন কর্মকাণ্ড প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

নির্বাচনে দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ চৌধুরী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আনারস প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯৭ হাজার ২৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আনিসুর রহমান পেয়েছেন হাজার ৩৮৬ ভোট।আনিসুর উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক।

ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরাজিত প্রার্থী আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশের ইউনিফর্ম পরে ওসি সাহেব বিজয়ী প্রার্থীর গলায় ফুলের মালা দিয়েছে। নির্বাচনের সময় পুলিশের ওই কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আমি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ভোটের দিন দুপুর আড়াইটার দিকে আমি ভোট বর্জন করেছি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় আমাকে আমার কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা ভোট দেয়ার কাজে বাধা দেয়া হয়েছে। পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দিলেও কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

আমাদের অসহযোগিতা করা হয়েছে। ভোটে ব্যাপক অনিয়ম পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। কেন্দ্র দখলে নিয়ে জাল ভোট দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে যদি কেউ নির্বাচিত হয়ে যান, তাহলে নিরপেক্ষতার আর কী থাকে? আপনি যখন চেয়ারম্যান হয়ে যান, তার সঙ্গে আর নিরপেক্ষতার কী থাকে। তার সঙ্গে তো আমাদের চলতে হবে।

বিষয়ে উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আপনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলুন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পোশাক পরা অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোনো অবস্থাতেই একজন নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধির গলায় ফুলের মালা দিতে পারেন না। এটা করলে ওই এলাকায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এটা ঠিক নয়।

বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) পলাশ কান্তি নাথ জানান, খোঁজ নিয়ে দেখছি বিষয়টি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল ওয়াদুদ বলেন, কুষ্টিয়ার চার উপজেলায় সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর অভিযোগ নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। নির্বাচনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

মেসেঞ্জার/রাজু/আপেল