
ছবি : মেসেঞ্জার
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের হলে বিভিন্ন থানায় ও পুলিশের ওপর হামলা-ভাংচুর-অগ্নি সংযোগের পর থমকে যায় সব থানার কার্যক্রম। আতঙ্কে গা-ঢাকা দেন পুলিশ সদস্যরা। তারপর থেকে বন্ধ ছিল গাজীপুরের বিভিন্ন থানার কার্যক্রম।
থানাগুলোতে প্রায় ৭ দিন ধরে পুলিশী কার্যক্রম না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ বেড়েছে আশংকাজনকভাবে। জনমনে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ রকম অবস্থায় সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ও নেতৃবৃন্দের সহায়তায় বন্ধ থাকা থানার মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ৯ টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সীমিত পরিসরে এসব থানার কার্যক্রম শুরু হলেও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখনো ভীতি রয়ে গেছে, কাটেনি আতঙ্ক।
থানার নিরাপত্তায় সেনা সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িতরাও পালাক্রমে পাহাড়া দিচ্ছেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও মহানগরের ১৩ টি থানার মধ্যে ৯ টি থানায় সীমিত পরিসরে পুলিশী কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এ থানাগুলো মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটোন পুলিশের গাজীপুর সদর থানা, টঙ্গী পূর্ব থানা, টঙ্গী পশ্চিম থানা, পূবাইল থানা, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর, গাছা এবং জেলা পুলিশের কাপাসিয়া থানা ও কালিগঞ্জ থানা রয়েছে।
সূত্র জানায়, এসব থানার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এবং পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি থানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি করে টিম মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে থানাগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং সাধারন জনগনও তাদের কাঙ্খিত নাগরিক সেবা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাকী থানাগুলোর কার্যক্রমও শুরু হবে বলে জানা গেছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) সরেজমিনে কয়েকটি থানার কার্যক্রম দেখা হয়। মহানগরীর পুবাইল থানায় দেখা গেছে পুলিশ সদস্যরা নতুন উদ্যমে তাদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। সেবা গ্রহীতারাও থানায় এসেছেন তাদের প্রয়োজনীয় আইনী সেবা নিতে।
তবে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক এখনো কাটেনি। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এ থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, আমি দায়িত্ব গ্রহনের পর সর্ব প্রথমেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করেছি, তাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অবস্থিত মহানগরীর বাসন মেট্রো থানা ও জেলা পুলিশের জয়দেবপুর থানা একইভাবে আক্রান্ত হয়। দুস্কৃতিকারীরা হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের কারনে অনেকটা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে দুটি থানার ভবন। এগুলো মেরামত করে সম্পূর্ণ উপযোগি করতে কিছু সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। তবে থানার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর জন্য বিকল্প ভবন খোঁজা হচ্ছে।
শনিবার সকালে বাসন থানা ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সদস্য থানা ভবনের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন। তার নাম ওহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, ভবনের নিরাপত্তা প্রদানে আমরা শিফট করে দায়িত্ব পালন করছি। থানার কার্যক্রম যতদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক না হবে, ততদিন আমাদের কার্যক্রম চলবে।
যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আহবার উজ্জামান জানান, গাজীপুর মহানগরীর ৮টি থানার মধ্যে বাসন থানা ব্যাতীত অন্যান্য থানাগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শনিবারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানাগুলির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে সেনা সদস্যদের সহায়তায় পুলিশ সদস্যগন থানায় দায়িত্ব বুঝে নিবেন।
ইতিমধ্যে থানাগুলিতে কর্মকর্তাগণ পৌঁছেছেন। মহানগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কগণ ও অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেছেন। সকলেই থানাগুলোতে পুলিশের কার্যক্রম শুরু করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় মানুষজনের সাথে পুলিশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মহানগরের ছয়টি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে রদবদল করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, সকলের সহযোগিতায় থানা পুলিশের কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, সেনা সদস্যদের সহায়তায় গাজীপুর জেলা পুলিশের অধীনস্থ কাপাসিয়া ও কালিগঞ্জ থানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে ১০ জন সেনাসদস্য ও পাঁচজন আনসার সদস্য পুলিশের সাথে সহযোগিতা করবেন।
প্রাথমিক অবস্থায় কোনো নাগরিক যদি কোন সাধারণ ডায়েরি বা এফআইআর করতে আসেন পুলিশ সেগুলো যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরবর্তীতে যদি কোন গ্রেপ্তার বা অন্যান্য কার্যক্রম করতে হয় সেটি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন কার্যকর করা হবে।
তিনি আরো জানান, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর থানার কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব শুরু করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতৃস্থানীয় ও দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক সমাজের সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জেলাবাসীর প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না, পুলিশ আপনাদেরই ভাই সন্তান। পুলিশকে আইন অনুযায়ী কাজ করতে সহায়তা করুন। যেকোনো ধরনের আইন বিরোধী কাজ বন্ধ করতে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মেসেঞ্জার/সাদ/আপেল