ছবি : মেসেঞ্জার
চলমান 'সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন'- এর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ,পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবিতে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার বিষয়বস্তু ও পরবর্তী কর্মসূচী জানাতে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন 'সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন' এর শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সমন্বয়ক সুষ্মিতা কর, লিংকন দত্ত, অন্তু রায়, সোহাগ অধিকারী, স্বর্পা রাণী দে, অর্থী দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টাদের সাথে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরনিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা আমাদের সকল দাবিকে যৌক্তিক বলেছেন। তারা দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে তবে একটু সময় দরকার। তাই আমরা তিনদিনের সময় দিয়েছি।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের কাছে তারা সময় চেয়েছেন তাই আগামী ৩ দিন (১৪-১৬ আগস্ট) সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন"-এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন কর্মসূচি থাকছে না।
আর যদি ১৬ই আগস্টের মধ্যে দাবীসমূহের বাস্তবায়নের জন্য কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে "সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন" এর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্দোলন বিষয়ক পরবর্তী ঘোষণা দেওয়া হবে।
লিখিত বক্তব্যে ৮ দফা দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টাদের সাথে আলোচনার সারাংশ তুলে ধরা হয়। সেখানে তারা তাদের দাবি ও দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টামন্ডলীর মন্তব্য তুলে ধরেন এবং সেগুলো নিয়ে মন্তব্য জানান।
সেগুলো হলো:
১। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য "দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল" গঠন করে দোষীদের দ্রুততমসময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে। এই দাবিটি দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
২। অনতিবিলম্বে "সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন" প্রণয়ন করতে হবে। এই দাবিটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য খুব দ্রুত নির্দেশ দেওয়া হবে বলে তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
৩। "সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়" গঠন করতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ গঠন হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যাতে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনকরা হয়, এর জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে বলে জানানো হয়।
৪। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে "হিন্দু ফাউন্ডেশন" এ উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। এই বিষয়ে কীভাবে কাজ করা হবে ওনারা খুব দ্রুত আবার আমাদের সাথে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন সংখ্যালঘু আন্দোলনের শিক্ষার্থী সমন্বয়করা।
৫। "দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন" প্রণয়ন এবং "অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন" যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতিমধ্যেই আইনটি প্রক্রিয়াধীন কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আইনটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তারা।
৬। সরকারি/ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
৭। "সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড" আধুনিকায়ন করতে হবে। এ দুটি দাবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ হওয়ার পরপরই এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
৮। শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে। শারদীয় দুর্গাপূজায় ৩ দিনের ছুটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই সাথে প্রত্যেক সংখ্যালঘুর প্রধান ধর্মীয় উৎসবের তালিকা করে ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলেও তারা জানান।
মেসেঞ্জার/নাকীব/আজিজ