
ছবি: ডেইলি মেসেঞ্জার
রাজনীতি ও দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে মহাসংকটে পড়েছে বিএনপি। দীর্ঘ সময় কারাগারে থেকে গৃহবন্দি রয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেশের বাহিরে পলাতক রয়েছেন চেয়ারম্যান তারেক রহমান। টানা প্রায় দেড় যুগেরও বেশী সময় ক্ষমতার বাহিরে রয়েছে দলটি। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিষয় নিয়ে ভেতরে বাহিরে চলছে আলোচনা। খোঁজা হচ্ছে খালেদা -তারেকের বিকল্প নেতৃত্ব। রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে,বাংলাদেশে যেহেতু দীর্ঘ সময় নারী নেতৃত্বে চলে আসছে, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের যদি কোনো গতিপথ পরিবর্তন হয়; তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসেবে আবারও নারী নেতৃত্বই চূড়ান্ত হবে। কুটনীতি ও রাজনীতির অন্দর মহল থেকে নারী নেতৃত্বের প্রেশক্রিপশন সব বড় দলগুলোর কাছেই রয়েছে।
দলটির নির্ভরযোগ্য নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া যেহেতু অসুস্থতা এবং বয়সের ভারে অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছেন তিনি আর বড় দায়িত্ব নেবেন না-এমন ইঙ্গিত দলের শীর্ষদের বহুবার দিয়েছেন। সেই থেকে দলের অভ্যন্তরে এক প্রকার স্নায়ু লড়াই চলছে। একাদশ কিংবা দ্বাদশে যদি বিএনপির ভাগ্য পরিবর্তন হতো তাহলে তারেক রহমান তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সামনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল। এখন যেহেতু বড় একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে এখন তিনি তার কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নিয়েই পরিকল্পনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে এবার খালেদা জিয়াও অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন। গত এক দশক তিনি দলীয় হাইকমান্ডকে জানিয়েছিলেন- ঘরের পুত্রবধুদের রাজনীতিতে নিয়ে আসবেন না। কিন্তু তার বন্দিজীবনের পূর্ব চিন্তা থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। কারাগারে এবং গৃহবন্দি অবস্থায় দুঃসময়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গী ছিলেন ছোট ছেলে কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তিনি বিদেশ থেকে বার বার এসে খালেদা জিয়ার সেবা করেছেন, দেখাশোনা করেছেন।
বিএনপির বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই তার মুক্তির পথ কীভাবে হবে তার সুনির্দিষ্ট ছক দলের স্থায়ী কমিটিকে দিয়ে যান। কিন্তু তার মুক্তির আন্দোলনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির নেতারা। এরপর কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের মাধ্যমে তারেক রহমানকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। দেওয়া হয় আন্দোলন এবং একাদশ সংসদে নির্বাচনী ছক। সেটিও অজানা কারণে তারেক রহমান বাস্তবায়ন করেননি। তখনি দলের একাংশ থেকে অভিযোগ উঠে বিএনপির হাইকমান্ডসহ বড় অংশই খালেদা জিয়ার সাজার মাধ্যমে মাইনাস প্রক্রিয়ায় হেঁটেছেন। অভিযোগ রয়েছে, খালেদা জিয়ার বন্দি অবস্থায় দুটো জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়েছে এর মধ্যে আসন ভিত্তিক বড় ধরনের লেনদেনে যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। এবং খালেদা জিয়ার যারা অনুসারী ছিল তাদের বড় অংশকেই তারেক রহমান মাইনাস করেছেন। যারা যুগ যুগ ধরে খালেদা জিয়ার অনুসারী ছিলেন শেষবেলায় এসে বহিষ্কার আতঙ্কে কেউ আর তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেননি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, তারেক রহমান তার স্ত্রীকে রাজনীতিতে আনার আগ্রহ থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন কন্যাকে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে চুড়ান্ত নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে দুঃসময় কাছে পাওয়া নিয়ে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিকে সম্মানজনক পদ দিয়ে যেতে চাচ্ছেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ বন্দি জীবনে শর্মিলাকে কাছে পেয়ে তিনি সন্তুষ্ট।
বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিয়া পরিবারের বাইরে দলের নেতাকর্মীরা অন্য কারো নেতৃত্ব মেনে নেবে না। এজন্য বিএনপির নেতৃত্ব জিয়া পরিবারের বিকল্প নেই। তারেক রহমানই দলের প্রথম পছন্দ। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার আগ্রহ কূটনৈতিক কিছু বিষয় যুক্ত হলে নারীদের মধ্যে থেকেও কেউ সামনে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জোবাইদা রহমান মনে হয় আর সামনে আসবেন না। তবে তার কন্যা জাইমা রহমান, ও পুত্রবধু শর্মিলা রহমানের বিষয়ে চিন্তা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে কাউকে চাচ্ছেন আমি এমন কিছু জানি না, শুনিওনি। ভবিষ্যতে কে আসবে ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। আগাম কিছু আমি জানি না। তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব এখনো অক্ষুন্ন রয়েছে সরকার এই দলটিকে ভাঙতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপিতে কোনো সঙ্কট নেই।
উল্লেখ্য বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এই কমিটি নির্বাচিত হবে তিন বছরের জন্য। তবে ৯ বছরের মধ্যে একটি কাউন্সিলও হয়নি।
মেসেঞ্জার/হাওলাদার