ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

তাপদাহে গরু মোটাতাজাকরণে বিপর্যয়  

এম. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা  

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৮ জুন ২০২৪

আপডেট: ২২:৪৭, ৮ জুন ২০২৪

তাপদাহে গরু মোটাতাজাকরণে বিপর্যয়  

ছবি : সংগৃহীত

#কাঙ্খিত ওজন বাড়েনি ৯৯ শতাংশ পশুর 
# ১৮ ডিগ্রির কম তাপমাত্রার পানি খাওয়ানোর তাগিদ
# পানির সঙ্গে ভিটামিন সি, গ্লুকোজ ব্যবহার ও 
কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

প্রচন্ড গরমে এবার গরু মোটাতাজাকরণে কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে হচ্ছে না দেশের বেশিরভাগ খামারির। অনেকক্ষেত্রে তাপদাহে গরু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া গরমে পশু রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে খামারি পর্যাপ্ত খাবার দিতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে, মোটাতাজাকরণে বিঘ্ন হওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়েছেন খামারিরা। এছাড়া গরমে পশু নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়তি মেডিসিনে খরচ বেড়েয়ে প্রায় ২০ শতাংশ। তাই বেশ বেকায়দায় খামারিরা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমে একবার গোসল করানো হলেও পশুর শরীর বারবার ভেজানো উত্তম। এছাড়া স্বাভাবিক পানি বেশি গরম হওয়ায় খাওয়ার পানি ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে খাওয়ানোর পরামর্শ তাদের। পানির সাথে ভিটামিন সি, গ্লুকোজসহ খাওয়ানোর পাশাপাশি কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

জানা গেছে, এক সময় দেশে ঈদুল আজহার আগে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ও মিয়ানমারের গরু দেশে আনা হতো সীমান্ত পথে অবৈধভাবে। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সাল থেকে সরকার সীমান্ত পথে অবৈধপথে গরু আসা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। ওইসময় ভারতের বিজেপি সরকারও গরু পাচার বন্ধে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে। এরপর ২০১৭ সালের পর থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরুর দাম বৃদ্ধি পায় দেশের বাজারে। ফলে, দেশের খামারিদের মাঝে গরু পালনের আগহ বাড়তে শুরু করে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসেসিয়েশনের (বিডিএফএ) তথ্যমতে, দেশে ছোট বড় প্রায় ৯ লাখের বেশি ফ্যাটেনিং ও ডেইরি ফার্মস রয়েছে।

এবার আসন্ন কোরবানির জন্যে ১ কোটি ৩০ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। কোবানীর বাকি আছে আর মাত্র কয়েকদিন। ফলে, খামারি এখন ব্যস্ত গরু মোটাতাজাকরণে। কিন্তু এবার গরু মোটাতাজাকরণে বেশ বেকায়দায় পড়েছে খামারিরা। কারণ, এবার গরম অতিমাত্রায়। এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই সারাদেশে তাপদাহ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তা প্রায় ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে। দেশের ইতিহাসে স্থায়িত্বের দিক থেকে এটি ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চলমান এই তাপদাহে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন দেশের পশু খামারিরা। গরম বেশি হওয়ায় পশু পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করছে না। এছাড়া অনেক খামারে গরু মারাও গেছে। খামারিরা বলছেন, বেশি গরমে তুলনামূলক বড় গরু যথেচ্ছ পরিমাণ খোলামেলা পরিবেশ ও বাতাসের ব্যবস্থা থাকলেও হাঁপানিসহ নানা উপসর্গের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় গরু খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেয়।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় গরমে গত একমাসে ১৩ টি ও ঢাকার সাভারে ৪৫ দিনে ২২ টি গরু মারা যাওয়ার তথ্য দিচ্ছে স্থানীয় পশু সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়। এবাবে সারাদেশেই গরু মারা যাওয়ার খবর পত্রিকায় এসেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী ধামরাইয়ে সমাজ ও জাতি গঠন (সজাগ) নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজারের বেশি গরু খামারিদের কাছে দেয়া রয়েছে প্রতিষ্টানটির। সজাগের পরিচালক আব্দুল মতিন দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, এবার অতিরিক্ত গরমে তাদের সংগঠনেরও কয়েকজন খামারির গরু মারা গেছে। এছাড়া খাবার কম গ্রহণ করায় খামারি টার্গেট অনুযাযী পশুর মাংস বাড়াতে পারেনি। পাশাপাশি গরমে গরুর বাড়তি মেডিসিনে দেয়ায় খরচও বেড়েছে।

খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, শতাধিক গরু মারা যাওয়ার তথ্য আছে তার কাছে। আমার জানার বাইরেও অনেক গরু মারা গেছে বলে অনুমান করছি। তিনি বলেন, টানা গরমে ৯৯ শতাংশেরও বেশি পশুর ওজন কমেছে। গরু সুস্থ রাখতে খামারগুলোতে খরচ বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।

এ বিষষে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) পরিচালক (গবেষণা) ড. নাসরিন সুলতানা দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, এবার গরমে গরু মোটাতাজাকরণে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই।  তিনি বলেন, পশু স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে গিয়ে বাড়তি সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তিনি খামারিদের বিশেষ প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন এবং মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কে. বি. এম. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, টানা দাবদাহ গরুর জন্য মারাত্মক বিপদজনক। ১৫ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা গরুর জন্য সহনীয়। এর মাঝে ২০ ডিগ্রিতে গরু সবচেয়ে ভালো থাকে। আর ২৫ এর উপরে যত বাড়তে থাকে ততো হিট স্ট্রেস হতে থাকে, তবে ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা গরু সহ্য করতে পারে। এর বেশি হলে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে। ৩৬ ডিগ্রির উপরে উঠে গেলে সেটা হল বিপজ্জনক। তারমানে বর্তমানে দেশে যে তাপমাত্রা আছে তা গরুর জন্য খুবই অনিরাপদ। এক্ষেত্রে গরুর বিভিন্ন রোগ হতে পারে, হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

করণীয় নিয়ে তিনি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক সাইফুল বলেন। তিনি বলেন, তীব্র গরমে পশুর খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি পানি খাওয়াতে হবে। পানির সাথে ভিটামিন সি খাওয়ালে ভালো। খামারের চাল টিনের হলে উপরে চট, বস্তা বা কম্বল জাতীয় জিনিস ভিজিয়ে রাখলে ঘরে ঠান্ডা অনুভূত হবে। খামারে বাতাসের জন্য পর্যাপ্ত ফ্যান রাখতে হবে। দিনে একবার গোসল করানো হলেও বারবার শরীর ভেজানো গেলে ভালো হয়। এখন স্বাভাবিক পানিই বেশ গরম। খাওয়ার পানির ১৮ ডিগ্রির নিচে হলে ভালো হয়। তবে বরফের মতো ঠান্ডা যেন না হয়। তাহলে বিপরীত হতে পারে। টিউবয়েলের পানি খাওয়ানো যেতে পারে। পানির সাথে ভিটামিন সি, গ্লুকোজসহ কিছু ওষুধ দিলে একটু স্বস্তি পাবে গরুগুলো। তার পরামর্শ বেশি বেশি কাঁচা ঘাস খাওয়াতে পারলে ভালো। 

মেসেঞ্জার/সজিব