
ছবি : টিডিএম
অবহেলা আর অযত্নে ধুকছে রংপুরের বদরগঞ্জের ঐতিহাসিক ঝাড়ুয়ার বিল-পদ্মপুকুর বিল বধ্যভূমি। সংরক্ষণের অভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমির স্থাপনাটি কেবল ১৬ ডিসেম্বর এবং ১৭ এপ্রিল ছাড়া বাকি সময়টা ব্যবহার হচ্ছে গরু-ছাগলের চারণভূমি, ধান, কাপড় শুকানো ও ময়লার ভাগার। ফলে মূল স্থাপনাটিতে বিভিন্ন ধরণের আঁকাআঁকি, দাগে মুল সৌন্ধয্য হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুত বিল না দেয়ায় লাইন কাটায় গত ১০ বছর ধরে জ্বলছে না হ্যালোজেনসহ বাতি। নস্ট হয়ে যাচ্ছে ৩৪ লাখ টাকা ব্যায়ের স্থাপনাটি।
শহীদদের নামের তালিকা থেকে মুছে যাচ্ছে শহীদদের নাম। এখানেই দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাকিস্তান হানাদারবাহিনী নারকীয় হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে সব বয়সি ৪০০ গ্রামবাসিকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন প্রকাশিত রংপুর জেলার ইতিহাস, মুনতাসির মামুন সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খন্ড), মুক্তিযুদ্ধে রংপুর গ্রন্থ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান বাহিনী হামলা চালায় ঢাকায়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও জগন্নাথ হলে তারা নির্বিচানে হত্যাকান্ড চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পরে সারাদেশে।
তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট ছিল রংপুর ও সৈয়দপুরে। সেখান থেকে মুক্তিকামী বাঙালি সৈনিকরা বের হয়ে আশ্রয় নেয় বদরগঞ্জের রামনাথপুরে। রংপুর থেকে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট যাওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে যমুনেশ্বরী নদীর পশ্চিমে মুক্তিবাহিনী শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। একসময় তারা পাকিস্তানিদের সৈয়দপুর যাওয়ার পথও বন্ধ করে দেয়। ৮ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে হয় তাদের বাঙ্গালী সেনাদের।
ইতিহাসের সূত্র মতে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল যেদিন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে মুজিবনগর নামকরণে অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। ঠিক সেদিনই রংপুরের বদরগঞ্জের রামনাথপুর ও বিষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে হত্যাযজ্ঞ চালায় দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। ওইদিন দুপুরে পাকিস্তানি হানাদাররা তিনটি ট্রেনে করে রামনাথপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া, ট্যাক্সেরহাট ও কিসমত ঘাটাবিল এলাকার ঝাকুয়াপাড়া সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নেয়।
এরপর তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়। একটি দল বদরগঞ্জ রেলস্টেশনের পশ্চিমে ১ কিলোমিটার দুরে বৈরাগীর ঘুমটির কাছ থেকে দক্ষিণ বুজরুক হাজিপুর পর্যন্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। আরেকটি দল খোলাহাটি স্টেশনের পূর্বদিকে ট্যাক্সেরহাটের রেল ঘুমটির কাছে দক্ষিণে করতোয়া নদীর গা ঘেঁষে বকশিগঞ্জ স্কুল পর্যন্ত অর্ধবৃত্তাকারে ঘেরাও করে ফেলে।
তারা হামলা চালিয়ে জ্বালিয়ে দেয় রামনাথপুর ইউনিয়নের কিসমত ঘাটাবিলের কোনাপাড়া, মন্ডলপাড়া, গয়দাপাড়া, কুটিরপাড়া, খিয়ারপাড়া, খালিশা হাজীপুরের পাইকপাড়া, তেলীপাড়া, বাজারপাড়া, বানিয়াপাড়া, কামারপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, মাষাণডোবা, সরকারপাড়া, বাঁশবাড়ি, ঘাটাবিল, খিজিরেরপাড়া, মধ্যপাড়া, বালাপাড়া, বিত্তিপাড়া। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুক বাগবাড়, মণ্ডলপাড়া, দোয়ানী হাজীপুর, সর্দারপাড়া, খোর্দ্দবাগবাড়ি আশেপাশের গ্রামগুলোতে।
পাক হানাদার বাহিনীর হামলায় এ সময় শতশত এলাকাবাসি প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেন স্থানীয় ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর পাড়ে। খবর পেয়ে ওই এলাকা রেকি করে ফেলে পাক হানাদাররা। আশ্রয় নেয়া নিরীহ গ্রামবাসিকে সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান করে গুলি করে হত্যা করে তারা। ৫ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ সবাই হত্যাকান্ডের শিকার হন।
তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যানুসন্ধান চালিয়ে প্রায় ৪০০ প্রাণদানকারী মানুষের বিবরণ সংগ্রহের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারীভাবে আজও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়নি। জানা যায়নি, ঠিক কতজন মুক্তিকামী মানুষ এখানে শহীদ হয়েছেন।
তবে, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে সেদিনের গণ হত্যায় আত্মাহুতি দিয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভাঙ্গারপাড় এলাকার তানহার হোসেন (৬৭)। সেসময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘বিকেল ৩ টার দিকে ২ টি ট্রেন আসছিল পার্বতীপুর থেকে। একটা খাড়া হইছিল ১০ নম্বর রেলঘুমটিতে। আরেকটা ঝাকুয়াপাড়ায়। আরেকটা ট্যাক্সেরহাটের মাথায়। তিনটা ট্রেন তিনপাক থেকে এসে ঘেরাও করে মাঝে আগুন জ্বালায় আর দৌড়ায়। এসময় মানুষ পদ্মপুকুরপাড়ে বহু মানুষ ঢুকছিল। তখন পাকিস্তার আর্মিরা কাকো বাদ দেয় নাই। পখির মতো গুলি করি সবাইকে মাইরচে। যাকে যেখানে মাইরছে পরে সেখানেই তাকে দাফনও দিচে। আমার বাবা, দাদা আর জেঠাক নিয়ে ধরি নিয়া আসি মাঠে লাইন করাইছিল। পরে সেখান না মারিয়া নিয়া গেইছে ঘুমটির মোড়োত।
কিন্তু কি যে মনে হইচে ওমারগুলাক ছাড়ি দিচে। ওরা বাচি আইলচে। নামাজ পড়ায়া ছাড়ি দিচে। তাদের বয়স হইছিল। আর যারা যুবক ছিল তাদের একটাকো থোয় নাই। সবাইক গুলি করি মারি ফেইলচে।’ ওই ঘটনায় শহীদ হন বানিয়াপাড়া এলাকার মেছের উদ্দিনের মামাতো ভাই ফজলুর রহমান, চাচাতো ভাই আজাদুল, ইসলাম উদ্দিন। মেছের উদ্দিন তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
তিনি বলেন, ‘অনেকের মতো আমরাও আশ্রয় নিই ঝাড়ুয়ার বিলে। ১৭ এপ্রিল দুপুরের পরে শুরু হয় গুলির শব্দ। আমি ও আমার পিতা আব্দুল গফুর কোনোরকমে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচাই। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে পাকিস্তানিরা দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে একটি ট্রেনে এসে রামনাথপুর ঘিরে ফেলে। রংপুর থেকে আসে পাকিস্তান আর্মিদের আরেকটি দল। আশপাশের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার কারণে মৃত্যুভয়ে রামনাথপুর, ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল হাজার হাজার লোক। বিকেলের মধ্যেই পাকিস্তানীরা গুলি চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে।’
মেছেরউদ্দিন আরও জানান, ‘আমার চাচি মোসলেমা বেগম গুলির শব্দে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছিলেন তার পাঁচ বছরের মেয়ে মনসুরাকে। কিন্তু ঘাতকদের গুলি তাকেও বাঁচতে দেয়নি। একটি গুলি চাচির পেছনে ঢুকে চাচাতো বোনের বুককে একইসঙ্গে বিদ্ধ করে বেরিয়ে যায়। ওই অবস্থায়ই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দুজন।’
মেছের উদ্দিন আরও জানান, ‘সেদিন সেখানে যাঁরা বয়সে তরুণ এবং যুবক ছিলেন, এ রকম প্রায় ২০০ মানুষকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আলবদরের লোকেরা ধরে নিয়ে যায়। ফিরে আসেনি তারা। শুধু হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কয়েকজনের লাশ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ছিল আমার খালাতো ভাই সমবারু। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম সে সময়ই গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।’
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে বদরগঞ্জ শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে রামনাথপুর ইউনিয়নে ঝাড়ুয়ার বিল বধ্যভূমি ও পদ্মপুকুর এলাকায় ৩৪ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০১৪ সালে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। কিন্ত সেটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন গবাদিপশু চারণভূমি, ধান, কাপড় শুকানো এবং শিশুদের খেলার আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে অপরিকল্পিতভাবে শহীদদের নাম লেখা হলেও নামগুলো মুছে যাচ্ছে।
নাম ফলকের ওপরে কোন ছাউনি না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে নাম মুছে যাওয়ার পাশাপাশি তালিকা ফলকটি শ্রীহিন হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠার পরে মাস তিনেক আলো জ্বললেও গত ১০ বছর ধরে স্থাপনি রাতের বেলায় থাকে অন্ধকারে। স্মৃতিস্তম্ভ দেখভার করার জন্য কমিটি থাকলেও খোঁজ রাখেন না তারা। শুধু ১৬ ডিসেম্বর ও ১৭ এপ্রিল আসলে ধোয়ামোছা হয়। ফুল দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন প্রশাসন ও রাজনীতিবিদরা।
স্মৃতিস্তম্ভের শহীদদের তালিকার পাশে কথা হয় স্থানীয় ভাঙ্গার পাড় শরিফুল ইসলাম নামের এক গ্রামবাসির সাথে। তিনি জানান, ‘এখানে সরকারি লোকজন বছরে একবার আসে। এসে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে। ফুল দিয়ে চলে যায়। তারপর আর কেউ আসে না। খোঁজও রাখেন না।
তখন মানুষ এখানে গরু, বাছুর রাখে। গেটে তালা নেই বহু দিন। রাতের বেলা বিভিন্ন ধরণের বখাটে লোকজন আসে। অনেকেই নেশাও করে। দিনের বেলা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আড্ডা জমায় এখানে। কাপড় শুকনো হয় বাউন্ডারী ওয়ালে। আমরা যদি বাঁধা দেই, তারা শোনে না। তখন তারা বলে, এটা কি তোর বাবার।’
ঝাড়ুয়ার বিল এলাকার জাকির হোসেন নামের আরেক গ্রামবাসি জানান, ‘শুধু দিবস আসলে এখানে কমিটি এবং সরকারি লোকজন আসে। তাছাড়া এদিকে কেউ আসে না। এটা সংরক্ষণ করা না গেলে নস্ট হয়ে যাবে।’
আকলিমা নামের এক গ্রামবাসি, স্মৃতি স্তম্ভের সামনেই তার বাড়ি। তিনি জানান, ‘আমি সবে দেখছি। বিভিন্ন ছেলেরা আসি স্মৃতিস্তম্ভের অনেক কিছু ভেঙ্গে ফেলছে। ইট নিয়ে যাচ্ছে। গেটা ভেঙ্গে ফেলছে। বাঁধা করি। কিন্ত ওরা বাঁধা শোনে না। মাঝে মাঝে আমি পরিস্কার করে দেই।’ পাশের বাড়ির মোবারক হোসেন জানান, ‘এটা সংরক্ষণ করার জন্য যদি সরকারিভাবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতো। তাহলে সব ঠিক থাকতো। এখন কারো দায়িত্ব নাই। সরকারিভাবে কিছু পায় না, তাই কেউ দেখেও না। তিনি বলেন, যখন স্মৃতি স্তম্ভটি হয়, তখন থেকে ২ মাস বাতি জ্বলেছে। তারপর থেকে বাতিও জ্বলে না। আমরা শুনছি, বিল দেয়না সেজন্য লাইন কেটে দিয়েছে। সেজন্য নাকি বাতি জ্বলে না।’
রামকৃষ্ণপুর মাসানডোবার বাসিন্দা স্মৃতিস্তম্ভের সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর হোসেন। ঘটনার দিন পাকিস্তানীরা তার তিন আপন চাচা ওমর আলী, রজব আলী ও রহিদুল প্রামাণিককে গুলি করে হত্যা করে। স্মৃতিস্তম্ভটির সংরক্ষণ জটিলতা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান, ‘প্রথমে ২৬ লাখ টাকা ব্যায়ে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মান হয়। পরে পরে ৮ লাখ বাজেট আসে টাইলস লাগানোর জন্য। এসময় বিদ্যুতের দরকার হয়।
বিদ্যুৎ না আসলে টাইলসের ঠিকাদার কাজ না করে চলে যাচ্ছিল। এসময় তখন আমি স্থাণীয় এমপির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ডিজিএম এর সাথে কথা বলার জন্য বলেন। আমি ডিজিএম এর কাছে গিয়ে জানতে পারি, কমিটির নামে মিটার হয় না, মিটার হয় ব্যাক্তির নামে। তখন আমি আমার নাম দিয়ে মিটার নিয়ে বিদ্যুতের লাইন লাগাই। এসময় টাইলসের ঠিকাদার দুই নম্বর টাইলস স্মৃতিস্তম্ভে লাগালে আমি আন্দোলন করে সেসব খোলাই এবং ভালো টাইলস লাগাতে বাধ্য করি।’
তিনি আরও জানান, ‘এরমধ্যে বিদ্যুৎ চলতে থাকে। স্মৃতিস্তম্ভটি আলোকিত করার জন্য চারটি হ্যালেজেন লাইট লাগানো হয়। ৪/৫ মাস পর আমার নামে ২৬ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল আসে। তখন বিল দেয়ার ব্যাপারে আমি এমপির কাছে একাধিকবার যাই। তিনি শুধু বলেন ব্যবস্থা হবে। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা করেন না। পরে ডিজিএম আমার নামে মামলা দেয়ার হুমকি দেয় এবং লাইন কেটে দেয়। তখন আমি সৌর বিদ্যুৎ বরাদ্দ নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভটি আলোকিত করে আসছি। গত প্রায় ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি বিদ্যুতের বিলের বিষয়ে এমপি,
উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করছি। কিন্তু কোন সুরাহা পাচ্ছি না। ফলে হ্যালোজেনগুলো নস্ট হয়ে যাচ্ছে। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের পরামর্শে তিনমাস আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ বিষয়ে সুরাহা করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালুর জন্য আবেদন করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয় নি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ বিদ্যুৎ বিলের কারণে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। বিষয়টি খুব লজ্জাজনক।’
মোজাফল হোসেন আরও বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর এবং ১৭ এপ্রিল আমরা এখানে খুব জাকজমকভাবে পালন করি। সেজন্য সরকারি কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। আমরা এলাকাবাসি নিজেরা চাঁদা দিয়ে সেটা পালন করে থাকি। এমপি এবং প্রশাসনের লোকজন এসে ফুল দিয়ে চলে যান। তার পরে আর কোন খোঁজ খবর রাখে না। এটা সংরক্ষণ করার জন্য কোন সরকারি লোক নাই। ফলে এখানে অনেকেই গরু বাছুরের চারণ ভূমি বানিয়েছেন। ময়লা আবর্জনার ভাগার বানিয়েছেন। কে বা কারা গেটের তালা নিয়ে গেছে। তালা কিনেছি। দ্রুত লাগাবো। এছাড়াও বাউন্ডারী এমনছোটভাবে বানানো হয়েছে যে, গেটে তারা থাকলেও যে কেউ দেয়াল টপকিয়ে স্থাপনার ভিতরে ঢুকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি শহীদ পরিবারের সন্তান। ওইদিন মাসান ডোবায় যে ৯ জন শহীদ হয়েছে। তারমধ্যে আমার আপন চাচাই তিনজন। এখন তাদের অবদান নতুন প্রজন্মকে জানাতে এবং স্মৃতি ধরে রাখতে যে স্তম্ভ করা হয়েছে সেটা যদি সংরক্ষণের অভাবে নস্ট হয়। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সরকার থেকে আমাদের লাভ কি।’
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ জানান, ‘ঝাড়ুয়ার বিল বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য বিষয় কিভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয় কাজ চলছে।’
স্থাণীয় এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের সাথে এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেস্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
টিডিএম/এএম