
ছবি : সংগৃহীত
সুনামগঞ্জ সরকারী সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে কোনো ধরণের রশিদ ছাড়াই নানান খাতের উন্নয়নের কথা বলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করছেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, ক্লাসে ঘোষণা দিয়ে বিদ্যালয়ের ফটক নির্মাণসহ আরো কয়েকটি খাতের কথা উল্লেখ করে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে বাধ্য করছে কর্তৃপক্ষ।
সুনামগঞ্জ সরকারী সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, আমদের কমলমতি মেয়েদেরকে চাপ দিয়ে ৩০০ টাকা করে আদায় করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিম্ন আয়ের আরেক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়েও এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে কয় টাকা রোজি (রোজগার) হয়? মেয়েটা কয়েক দিন ধরেই বলছে স্কুলে ৩০০ টাকা দিতে হবে! অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও তিনি এ উন্নয়ন ফি দিয়েছেন।
এবিষয়ে অনেক অভিভাবক কথা বলতে চায়নি। তাদের দাবি, এসব বললে কিংবা নাম দিলে মেয়েদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে এ ব্যাপরে অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এই ব্যপারে সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, সরকারি স্কুলে কোনো ধরণের রশিদ ছাড়া উন্নয়নের নামে এভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ চাঁদা আদায় করতে পারে না। তিনি 'দ্য ডেইলি ম্যাসেঞ্জার' কে বলেন 'আমি এই বিষয়টি শুনেছি জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। '
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী চাঁদা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এটি বিদ্যালয়ের নানা খাতে ব্যয় করা হবে '। তিনি বলেন, সকলের সম্মেলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই শিক্ষার্থী প্রতি ৩০০ টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে! এসময় তিনি দাবি করেন, ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নেই, তোরণের পাশে গ্যাসলাইনের রাইজার আছে, সেটি সংস্কার করতে হবে আমাদেরকে। এছাড়াও স্কুলের বিদ্যুৎ, কম্পিউটার খাত সংস্কারেও এই টাকা ব্যবহার করা হবে।
সরকারি স্কুলে এভাবে চাঁদা উত্তোলন করতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা আমরা পারি'।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী রয়েছেন ১ হাজার ২৫০ জন। নানা ছুঁতোয় ছাত্রী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে প্রায়ই এই বিদ্যালয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়।
সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে ৩০০ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছেন। স্কুলের ফটক নির্মাণ ও ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার নির্মাণের কথা বলে তিনি এই টাকা ছাত্রীদের প্রতি ধার্য্য করেছেন।
সুনামগঞ্জ শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করছে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর। সরকারি নক্সায় সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এটি নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অন্যায়ভাবে এই টাকা উত্তোলনের নির্দেশনা জারি করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর বাবা জানান, কিছুদিন পরপরই অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ে নানা ছুঁতোয় টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোমলমতি সন্তানের চাপে তারা টাকা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি আশা করি না আমরা। কিন্তু প্রতিনিয়ত এটাই হচ্ছে এই স্কুলে।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে বলেন, শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু স্কুলগুলোতে এমন অনৈতিক কাজ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম মানা যায় না।
সুনামগঞ্জ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা স্কুলের সামনে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করে দিচ্ছি। সরকার পুরো বরাদ্দ দিয়েছে। এই খাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উত্তোলন করা অনৈতিক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হোসাইন মাহমুদ মোজাহিদ বলেন, আমিও শুনেছি উনি ৩০০ টাকা করে নিচ্ছেন। এভাবে তিনি অন্যায়ভাবে ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না। এই বিষয়টি জরুরিভাবে দেখা হবে।
টিডিএম/এফএমটি