ঢাকা,  মঙ্গলবার
২০ মে ২০২৫

The Daily Messenger

বরিশালে ৫ কোম্পানির এলপিজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:৫০, ১৬ আগস্ট ২০২৩

বরিশালে ৫ কোম্পানির এলপিজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

ছবি: টিডিএম

বরিশালে বসুন্ধরাসহ ৫ কোম্পানির এলপিজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আর সরবরাহ অব্যাহত থাকা কোম্পানিগুলো চাহিদার চারভাগের একভাগও দিতে পারছে না। ফলে বরিশালের বাজারে এলপি গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এতে বেশি বিপাকে পড়েছেন সরবরাহ বন্ধ থাকা কোম্পানির ভোক্তারা। 

এ মাসের প্রথম ১৫ দিনেই দুইদফায় মোট দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। তাদের সিলিন্ডার বদল করে অন্য কোম্পানির গ্যাস দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি নেয়া হয়। 

বরিশাল নগরীর রুপাতলীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, পরিবারে রান্নায় বসুন্ধরা কোম্পানির এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছেন বহুবছর। বসুন্ধরা কোম্পানির ২টি সিলিন্ডার রয়েছে তার। পনের দিন যাবত বিভিন্ন খুচরা দোকান ঘুরে বসুন্ধরার এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে না পেরে ওই সিলিন্ডার বদল করে অন্য কোম্পানির গ্যাস দিতেও রাজি হননি কোনো বিক্রেতা। বাধ্য হয়ে ২ হাজার ৪০০ টাকায় ওমেরা কোম্পানির ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনেছি। 

একই পরিস্থিতির শিকার বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের আরেক গ্রাহক নগরীর নবগ্রাম সড়কের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহসিন সিকদার। বসুন্ধরা কোম্পানির ১টি সিলিন্ডার রয়েছে তার কাছে। ওই কোম্পানির গ্যাস না পেয়ে সিলিন্ডার বদল করে অন্য কোম্পানিরটা আনতে চেয়েছিলেন। বিক্রেতরা বদল করে দেননি। বাধ্য হয়ে ওমেরা কোম্পানির আরেকটি সিলিন্ডার কিনে নিয়েছেন। এই দুইজনের মতো সমস্যায় পড়েছেন বরিশাল নগরীতেই শত শত এলপি গ্যাস ব্যবহাকারীরা। গোটা দক্ষিণাঞ্চলে এর সংখ্যা কয়েক হাজার। 

বেসরকারী গ্যাস কোম্পানির বরিশালের একাধিক পরিবেশক এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রতিটি কোম্পানি বিদেশ থেকে এলপি গ্যাস আমদানি সংকটে পড়েছে। ফলে তারা পরিবেশকদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না। পরিবেশকরা দিতে পারছেন না খুচরা ব্যবসায়ীদের। যার চুড়ান্ত বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। পরিবেশকরা বলেছেন, সংকট অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে আরও দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।  

বসুন্ধরা গ্যাস কোম্পানির বরিশালের পরিবেশক মো. রাসেল বলেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চাহিদার তিনভাগের এক ভাগ সরবরাহ পাচ্ছিলেন কোম্পানি থেকে। গত ৪ আগস্ট থেকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পেট্রোগ্যাস কোম্পানির পরিবেশক পিযুস বলেন, ৩দিন সরবরাহ বন্ধ থাকার পর সোমবার এক ট্রাকে ৪২০টি সিলিন্ডার দিয়েছে কোম্পানি। তার চাহিদা ছিল ৬০০ সিলিন্ডার। 

একই কথা জানিয়ে অরিয়ন কোম্পানির পরিবেশক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেড়শ টাকা এবং গত সপ্তাহে আরও ৫০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি সিলিন্ডারে।  

বরিশাল নগরীর গোঁড়াচাঁদ দাশ রোডের এলপি গ্যসের খুচরা বিক্রেতা চৌধুরী ট্রেডার্সের মালিক মো. জহিরুল ইসলাম জানান, প্রায় দুইমাস যাবত স্থানীয় পরিশেকরা চাহিদা অনুযায়ী সিলিন্ডার দিচ্ছেন না। অন্য কোম্পানির সিলিন্ডার বদল করলে পরিবেশকরা দেড়শ থেকে দুইশ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন। এতে দীর্ঘদিন সরবরাহ বন্ধ থাকা কোম্পানির ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। জহিরুল ইসলাম জানান, বসুন্ধরা কোম্পানির সরবরাহ বন্ধ প্রায় দুইমাস। এ মাসে আরও ৪-৫টি কোম্পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সীমিত আকারে সরবরাহ অব্যাহত থাকা কোম্পানির কাছে খুচরা বিক্রেতা ও গ্রাহকরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন। 

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, এলপি গ্যাস নিয়ে ভোক্তাদের কাছে প্রায়ই তারা অভিযোগ পাচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। পরিবেশকদের কাছে গেলে তারা মূল কোম্পানি থেকে বেশি দামে কেনার ভাউচার দেখান। সেক্ষেত্রে তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা। সম্প্রতি পাওয়া অভিযোগগুলো নিয়ে দুই-একদিনের মধ্যে বাজার মনিটরিয়েং নামবেন বলে জানান তিনি।

টিডিএম/এএইচ