ঢাকা,  রোববার
২২ জুন ২০২৫

The Daily Messenger

লাখো প্রাণের উচ্ছ্বাসে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো নৌকাবাইচ

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৫:১৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

লাখো প্রাণের উচ্ছ্বাসে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো নৌকাবাইচ

ছবি: টিডিএম

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের কুমার নদে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। উপজেলার হোগলাকান্দি-চকবোনদোলা গ্রামবাসী এ প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। এ নৌকা বাইচ দেখেতে কুমার নদের দুই পাড়ে ভীড় করে লক্ষাধিক দর্শনার্থী। এ উপলক্ষে বসে লোকজ মেলা।

গোপালগঞ্জ নদী ও বিল-বাওড়ের এলাকা হিসাবে পরিচিত। কয়েশ বছর ধরে এসব নদী ও বিল-বাওড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতা হলো অন্যতম। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের কুমার নদে অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত আকর্ষনীয় এ নৌকাবাইচে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ২৫টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, বাছারী, জয়নাগরি, টালী, ও ছান্দী নৌকা অংশ নেয়। হোগলাকান্দি-চকবোনদোলা গ্রামের মহেশপুর সেতু থেকে চকবোনদোলা সেতু পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলে একের পর এক কুচ।

বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ বাইচে ঠিকারী ও কাশির বাদ্যে তালে তালে নেচে “হেঁইও হেঁইও রবে” বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয় চারিদেকে। এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই কুমার নদের দুই তীর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার লক্ষাধিক দর্শনার্থী নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন এ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজার প্রাণের আনন্দ উচ্ছ্বলতায় মেতে ছিলো এলাকার শিশু নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বিশেষ করে নৌকায় ও ট্রলারে করে নৌকাবাইচ দেখতে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে সন্ধ্যায় এ নৌকাবাইচ শেষ হয়।

নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে লোকজ মেলা। মেলায় শতাধিক দোকানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। কিছু দোকানে বাঁশ-বেত, মৃৎ শিল্প, তৈজসপত্র এবং খেলনা শোভা পায়। নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দমত পণ্য কিনে নেন মেলা থেকে।

এ প্রতিযোগিতা কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামের ওসমান শেখ ও বরকত মোল্লার নৌকা যৌথভাবে প্রথম, একই উপজেলার চকবোনদোলা গ্রামের উকিল মিনার নৌকা দ্বিতীয় ও রাব্বি শেখের নৌকা তৃতীয় হয়। পরে বিজয়ীদে হাতে পুরষ্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে মহেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: লুৎফর রহামন লুথু মিয়া।

বাইচে প্রথম হওয়া নৌকার মালিক ওসমান শেখ বলেন, “আমার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হওয়া নৌকাবাইচে অংশগ্রহন করি। এতে শুধু দর্শক নয় আমরাও আনন্দিত হই। পূর্ব পুরুষের ধরে রাখা এ ঐহিত্য আমরাও ধরে রেখেছি। কারন নৌকাবাইচ হলো গ্রাম বাংলার নির্মল বিনোদনের একমাত্র উৎস।”

বাইচে দ্বিতীয় হওয়া নৌকার উকিল মিনা (৫৬) বলেন, “এখন আর তেমন একটা নৌকাবাইচ হতে দেখা যায় না। তবে যেখানে শুনি নৌকাবাইচ হবে সেখানে আমরা চলে যাই। পুরস্কার পাওয়াটা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়, মানুষকে আনন্দ দেয়াটাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।”

নৌকাবাইচ দেখতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী হুমাইয়ারা আক্তার বলেন, “এখানে নৌকাবাইচ হবে শুনে দেখতে এসেছি। সাথে আমার বাবা রয়েছে। কয়েকটি নৌকার আগে যাওয়া যে প্রতিযোগীতা দেখে অনেক ভাল লাগেছে।”

দর্শনার্থী শরীফুল আলম (৬০) বলেন, “অনেক আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৌকাবাইচ হতো। তবে এখন তার তেমন একটা চোখে পড়ে না। এখানে নৌকাবাইচ হবে শুনে দেখতে এসেছিলাম। নৌকাবাইচ দেখে যেন চোখের খোড়াক মিটলো।”

নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির প্রধান গিয়াস উদ্দিন গালিব বলেন, “প্রতি বছর আমরা নৌকা বাইচের আয়োজন করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও আয়োজন করেছি। আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। যুব সমাজকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে আগামীতেও এ আয়োজন করা হবে।”

স্থানীয় মহেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান মিয়া লুথু বলেন, “এখনকার দিনে নৌকাবাইচ তেমন একটা আয়োজন করা হয় না। ফলে দেশীয় ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। যার করনে নির্মল বিনোদনেরও উৎস হারিয়ে যাচ্ছে। এতে তরুন প্রজন্ম এখন মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে দেশীয় এ ঐহিত্য ধরে রাখতে এবং তরুন প্রজন্মকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, “৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশে মাদক, জঙ্গিবাদসহ যুব সমাজের যে অধঃপতন তা এই কারনেই হয়েছে”।

তিনি আরো বলেন, “শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের সংস্কৃতিকে আবার পুনর্জীবিত করেছে। এখন দেশের প্রতিটি জেলার গ্রামগঞ্জে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আগামীতেও এমন খেলা বা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে”।

টিডিএম/এএম