
ছবি : মেসেঞ্জার
দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই শিরোনাম হয় ‘জ্বীনের বাদশা’ আটকের খবর। এসব ঘটনায় আটক প্রতারকদের বড় অংশেরই ঘাঁটি গাইবান্ধায়। প্রতারক চক্র এখানে অবস্থান করে মোবাইল ফোনে সারাদেশে প্রতারণার জাল বিছিয়ে আসছে।
‘জ্বীন-প্রতারণা’ সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ পেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও তদন্তের অগ্রভাগে থাকে এই জেলা। তাদের নিয়মিত অভিযানে এখান থেকে আটক হয়েছে এমন প্রতারক চক্রের অনেক সদস্য।
তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে জ্বীনের বাদশার প্রতারণার নেটওয়ার্ক বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্রটি। মূলত সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে তাদের সর্বহারা করাই এই চক্রের উদ্দেশ্য।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত ১১ মে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আকলিমা বেগম নামে এক গৃহিণীর কাছে মোবাইল ফোনে ’জিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে তাকে স্বর্ণ ও গুপ্তধন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নগদ ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও হাতে স্বর্ণের বালা ও গলার চেইন নেয় প্রতারক। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উপজেলার দরবস্তু ইউনিয়নের গোবিন্দপুর নলডাঙ্গা এলাকা থেকে সাদ্দাম আলী নামে ওই জিনের বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে সাদ্দামের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা পাঁচটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন কোম্পানির ২২ টি সিম কার্ড, স্বর্ণালংকার বিক্রির ১২ হাজার টাকা, নকল স্বর্ণের মূর্তি, গৃহিনীর খোয়া যাওয়া ২টি স্বর্ণের বালা ও মাটির হাড়ি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে আসা ‘জ্বীনের বাদশা’ গ্রেপ্তারের এমন খবর অহরহই মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, জ্বীনের বাদশা সেজে প্রতারণার শীর্ষে রয়েছে গাইবান্ধা জেলা। এই জেলার সাদুল্যাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কথিত জ্বীনের বাদশার আনাগোনা বেশি।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একজন জিনের বাদশা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, আমরা গভীর রাতে সহজ-সরল মানুষের মোবাইল নম্বরে ফোন করে নানা ধরনের স্পর্শকাতর কথাবার্তা বলে তাদের মাঝে লোভ ও ভীতির সঞ্চার করি। টার্গেট করা ব্যক্তি আমাদের কথার ফাঁদে পড়ে খুইয়ে বসে সর্বস্ব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব প্রতারক চক্র মূলত দৈবচয়ন ভিত্তিতে মানুষকে গভীর রাতে ফোন করে। কথাবার্তার শুরুতেই ওরা বুঝে যায় টার্গেট ব্যক্তির অবস্থান ও মানসিকতা। ওদের কিছু তথ্যদাতা থাকে, যারা ভুক্তভোগীদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে প্রতারণায় সহায়তা করে। ক্ষেত্র বিশেষে ইনফরমাররা মোবাইল ফোন নম্বরও যোগাড় করে দেয়।
টার্গেট স্থির করার পর ওরা ভুক্তভোগীর দুর্বল পয়েন্টে আঘাত করে। উদ্দেশ্য তাকে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলা। এভাবে ওরা টার্গেট ব্যক্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তার ওপর ভয় ও লোভ জাগিয়ে তোলা হয়। এরপর ওরা টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার কামাল হোসেন বলেন, জ্বিনের বাদশাদের অস্তিত্ব বিলীন করতে আমরা কাজ করছি এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর এসব প্রতারক চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিনের বাদশাদের অপকর্ম রুখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মেসেঞ্জার/সিয়াম/আপেল