ঢাকা,  মঙ্গলবার
০৮ জুলাই ২০২৫

The Daily Messenger

মাদক পাচারের নিরাপদ রুট আখাউড়া আজমপুর রেলস্টেশন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:০০, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

মাদক পাচারের নিরাপদ রুট আখাউড়া আজমপুর রেলস্টেশন

ছবি : মেসেঞ্জার

যাত্রীদের কাছে নিরাপদ পরিবহন হিসেবে ট্রেনের সুখ্যাতি বহু আগের। কিন্তু নজরদারির অভাবে সেই ট্রেন এখন মাদক কারবারিদের কাছেও নিরাপদ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। পূর্বাঞ্চল রেলপথের ঢাকা-সিলেট অভিমুখী ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার আজমপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব মাদক যায় ভৈরব, নরসিংদীসহ রাজধানী ঢাকা আশপাশের এলাকায়। মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করা হয় নারীদের।

আজমপুর রেলস্টেশনটি সীমান্ত লাগোয়া। রেলওয়ে পুলিশ নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য এখানে দায়িত্বে না থাকার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মাদক কারবারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ছয়টি ট্রেনের যাত্রাবিরতি রয়েছে আজমপুর রেলস্টেশনে। নিরাপদে ট্রেনে মাদকের চালান ওঠানোর জন্য জনপ্রিয় স্টেশনটি। ট্রেনের কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজমপুর স্টেশন এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, যারা মাদক ব্যবসা করে তারা খুব প্রভাবশালী। তাদের মাথায় প্রশাসনের হাত রয়েছে। আজমপুর স্টেশনের পূর্ব পাশে পেয়ারাবাগান উত্তর-পশ্চিম পাশে কলোনি রয়েছে। ট্রেনে নেওয়ার আগে বাগান কলোনিতে মাদক রাখেন পাচারকারীরা। ট্রেন আসার ১০-১৫ মিনিট আগে স্টেশনে অবস্থান নেয় তারা। শরীরের স্পর্শকাতর স্থান, ব্যাগ কিংবা লাগেজে করে ইয়াবা, গাঁজা ফেনসিডিল বহন করে।

তারা আরও বলেন, মাদক পাচারের জন্য কারবারিরা তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীদের ব্যবহার করে। আর পুরুষ সদস্যরা দূর থেকে তাদের চোখে চোখে রাখে। তাদের অভিযোগ আজমপুর স্টেশন এলাকায় একটি চক্র মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শহিদুল ইসলামের ছেলে আল-আমিন। তার সঙ্গে রামধননগর গ্রামের আওলাদ মোল্লা, রাজাপুর গ্রামের নাসির, বসিরসহ কয়েকজন রয়েছেন। আওলাদ মোল্লার নামে আখাউড়া থানায় ৪টি রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি মাদক মামলা রয়েছে। অপরদিকে আখাউড়া থানায় নাসিরের নামে ৫টি বসিরের নামে ৩টি মাদক মামলা রয়েছে।

অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মাদকের চালান বহন করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেওয়া একজন নারী জানান, হাজার ইয়াবা ঢাকা নিয়ে গেলে হাজার টাকা পাওয়া যায়। তিনি মাসে তিনবার যাতায়াত করেন।

অন্য এক নারী জানান, রাস্তার খরচ ধরা পড়লে সব দায়দায়িত্ব মালিকের এমন শর্তে তিনি ভৈরবে মাদকের চালান পৌঁছে দেন। প্রতি কেজি গাঁজার জন্য ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। তিনি -১০ কেজি গাঁজা বহন করতে পারেন। মাসে - বার যান। কয়েকজন আছেন এক-দুই দিন পরপর মাদক বহন করেন বলেও জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আল-আমিন বলেন, ‘কোনো একসময় মাদক ব্যবসা করতাম। পরে বিদেশে চলে যাই। আবারও বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা জমা দিয়েছি। প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্ব আছে। তারা শত্রুতা করে অপপ্রচার করছে।

আরেক অভিযুক্ত আওলাদ মোল্লা বলেন, ‘আমি মাদক কারবারের সাথে জড়িত না’। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়রানি করার জন্য মাদক পাচারের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে’।

অপর দুই অভিযুক্ত নাসির বসিরের বাড়িতে কয়েকবার গেলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অবস্থান জানাতে কিংবা মুঠোফোন নম্বর দিতে পরিবারের সদস্যরা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আজমপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মাদকের বিষয়টা আসলে আমাদের দেখার কথা নয়। তবে ট্রেনের আগে মাঝে মাঝে রেলওয়ে পুলিশ আসে দেখি। তারা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে মাদকদ্রব্যসহ ধরে নিয়ে যায়। বিষয়ে পুলিশও আমাদেরকে কিছু বলে না, আমরাও তাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করি না।

জানতে চাইলে আখাউড়া রেলওয়ে থানার (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আজমপুর স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশ থাকে না। প্রয়োজন হলে পাঠানো হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে’।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাদক পাচারের কাজে রেলওয়ে পুলিশের সহযোগিতার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেসেঞ্জার/এনায়েত/আপেল