
ছবি : মেসেঞ্জার
ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিলে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। সুতরাং আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যেই নিশ্চিত করা হবে বলে ধারণা করছেন রাজনীতিকরা।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শুভ কামনা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন সমর্থকরা। চলছে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ ও তুমুল রাজনৈতিক বিচার বিশ্লেষণ।
এবারে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে প্রথমে আছেন চারজন। তারা হলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বর্তমান সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি। তারা প্রত্যেকেই হেভিওয়েট এবং ধারণা করা হচ্ছে, এ চারজনের যে কারও হাতে যেতে পারে নৌকার বৈঠা।
মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ১৯৯২-৯৪ সেশনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন এবং ১৯৯৬ সালে দলীয় মনোনয়ন নৌকা নিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা ও তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা শাহজাহান চৌধুরীর কাছে ৬ হাজারের কম ভোটে হেরে যান তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি আর মনোনয়ন পাননি। কথিত আছে ১/১১ সরকারের আমলে সংস্কারপন্থীদের তালিকায় নাম লেখান মঈনুদ্দিন। যার কারনে দলের কাছে মূল্যায়ন হয়নি তার।
তবে সংস্কারপন্থীদের তালিকায় সুস্পষ্টভাবে মাঈনুদ্দিন হাসানের নাম কখনো দেখা যায়নি। এ ছাড়াও রাজনীতিকে ব্যবহার করে কখনো কোনো প্রকার অসাধু কর্মকাণ্ডে জড়াননি মঈনুদ্দিন। ফলে রাজনীতিবিদরা বলছেন, স্বচ্ছতা বিবেচনায় এবারে মঈনুদ্দিন হাসানের হাতে আসতে পারে নৌকার টিকিট।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আমিনুল ইসলাম আমিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপপ্রচার সম্পাদক হয়ে বর্তমানে তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে দায়িত্বরত আছেন। রাজনীতিতে তার বিশাল কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে শক্ত অবস্থান। তবে তার বিরূদ্ধেও উঠেছিল অভিযোগ। করোনাকালে মাস্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে যায় তার নাম। কথিত আছে যার প্রভাবে ২১তম আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার একদিন পর তাকে পূর্বের পদে বহাল রেখে নাম ঘোষণা করা হয়। তবে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে তাকে পদোন্নতি দিয়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করা হয়। রাজনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে নৌকার টিকিট পাবে আমিন।
এদিকে আলোচনায় বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীর নাম রয়েছে সর্বাগ্রে। তিনি ২০১৪ সাল থেকেই টানা দুই মেয়াদে এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন জাতীয় সংসদে। এলাকায় তার উন্নয়নের যেমন অভাব নেই তেমনি তাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনারও শেষ নেই। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মাঠের বিতর্কিত বক্তব্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগে নেতাদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল রয়েছে তার। যেটি চট্টগ্রাম-১৫ আসনে এখন ওপেন সিক্রেট।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই জামায়াতসম্পৃক্ততার অভিযোগটি চরমে। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পরপর দুইবার মনোনয়ন দিয়ে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন। কিন্তু টানা তৃতীয়বার মনোনয়ন দিবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তাছাড়া এমপি নদভীর পরিচালিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে বড় অংকের রেমিটেন্স, উন্নয়ন ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের সস্পর্ক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রয়েছে নদভীর। ফলে রাজনীতিবিদরা বলছেন, বিশেষ বিবেচনায় এবারেও মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি।
সবশেষে আলোচনায় রয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। দেশের বিখ্যাত বনফুল কিষোয়ান গ্রুপের কর্ণধার হিসেবে একাধিকবার সিআইপি পদে ভূষিত হয়েছেন। তার রাজনীতির পরিসর ছোট হলেও সস্প্রতি কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের দিন করেছেন বাজিমাত। উপস্থিত লক্ষাধিক নেতাকর্মীর মাঝে এক তৃতীয়াংশ কর্মী ছিল তার সমর্থিত। যেটি চোখে পড়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর।
তবে তার বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। জামায়াত নেতা আপন ছোট ভাইকে ইউপি চেয়ারম্যান বানানো ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে রাজনৈতিক কোন্দল লোকমুখে যত্রতত্র। কথিত আছে, তাকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে একান্তভাবে চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তবে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ী বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে মোতালেবের হাতে যেতে পারে নৌকার টিকিট।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে এবারে নেতৃত্ব বাছাইয়ে তৃণমূলকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতারা। তারা বলেছেন, বিগত নির্বাচনে বিভিন্ন সময় প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে সেসব সংখ্যায় কম হলেও এবারে অন্তত ১০০ আসনে প্রার্থীর পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জন্য কেমন প্রার্থী নির্বাচন করা হতে পারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন কাকে দিবেন সেটা একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন।
তবে এবারের মনোনয়নে যথেষ্ট বিচার বিশ্লেষণ চলবে। মূলত যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করেছে, ৭৫ পরবর্তীও যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, যারা পরবর্তী জোট সরকারের আমলে নির্যাতন নিপীড়নের মধ্যেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে এবং যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দলচ্যুত হয়নি এবারে তাদেরকে প্রাধান্য দিতে পারে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মিশন-ভিশন বাস্তবায়নে যারা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছে তারাই মনোনয়নে অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মেসেঞ্জার/তারেকুল/আপেল