ঢাকা,  শুক্রবার
০৩ মে ২০২৪

The Daily Messenger

২৩ বছরেও সংস্কার হয়নি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

২৩ বছরেও সংস্কার হয়নি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

ছবি : মেসেঞ্জার

দীর্ঘ ২৩ বছরেও সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক হাউস। ঘরগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে থাকে। পলেস্তারা খসে পড়া সিমেন্টের খুঁটির উপর নড়বড়ে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে এখানকার ঘরগুলো।

১৯৯৮ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ব্যারাক হাউজটি নির্মিত হয়। প্রকল্পটির অবস্থান ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার নায়ইবের পোল এলাকায়।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুই একর জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক হাউজ নির্মিত হয়। হতদরিদ্র ভিটাবাড়ি হারা ৪০টি পরিবারের জন্য প্রকল্পের ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পে ৪০টি পরিবারের জন্য দুইটি শৌচাগার দুটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়। পরিবারগুলোর জন্য দুইটি নলকূপ দেওয়া হয়। কিন্তু গত ১৬ বছর আগে নলকূপ, শৌচাগার ঘরসহ অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ব্যারাকের প্রতিটি ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘরের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই অঝোরে পানি পড়ে। সেগুলো বন্ধ করতে পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর ইট চাপা দেওয়া হয়। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে বহু আগে। এসব দরজা-জানালা বন্ধ করার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে চটের বস্তা টানিয়ে।

শৌচাগারটির ভেঙে যাওয়া দরজা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছে বাসিন্দারা। একটি নলকূপ অকেজো হয়ে রয়েছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে বর্তমানে ব্যবহার অযোগ্য এসব ঘরে ৩৪টি পরিবারে নারী শিশুসহ অন্তত ২২০ জন বসবাস করছেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন আশ্রয়হীন পরিবারগুলো। এমন দুর্ভোগের জীবন সহ্য করতে না পেরে কয়েক বছর আগে ৬টি পরিবার চলে গেছে।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রিত বৃদ্ধ আবুল কালাম। ১৭ বছর আগে লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নে বাবার ভিটায় বসবাস করতেন। বাবা দেনার দায়ে বসত ভিটি বিক্রি করে দিলে বিচ্ছন্ন হয়ে পরে তার পরিবার। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় মেলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

ছেলেরা অন্যত্র চলে গেলেও বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন প্রকল্পের একটি ঘরে। কয়েক দশক মেরামাত না হওয়ায় জরাজীর্ণ ঘরে এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরায় মাথা গোজার শেষ ঠাঁইটুকু এখন কালো অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমাগো কষ্ট কেউ দেহেনা। বৃষ্টি আইলে চাল (ছাউনি) দিয়া পানি পইরা কাঁথা-বালিশ ভিইজ্যা (ভিজে) যায়। মাইনষ্যের (মানুষের) গরুঘরও এর চেয়ে ভালা থাহে।'

তিন সন্তানের জননী বিউটি বেগম বলেন, 'বৃষ্টি আইলে রানদনের (রান্না) পাতিল নিয়া বইশ্যা থাকি। বৃষ্টির কোপে টিন ফুটা হইয়্যা বিছনায় পানি পড়ে সব ভিইজ্যা (ভিজে) যায়। আমাগো ঘরগুলা দশ বছর আগে ভাইংগা (ভেঙে) গেলেও ঠিক করে নাই। আমাগ (আমাদের) খোঁজ কেউ নেয় না। সরকারের কোন সহায়তা পাই নাই।'

আশ্রিত ময়ফুল বেগমের শ্বাশুড়ি, স্বামী দুই সন্তান মিলে পাঁচজনের সংসার। আঠারো বছর ধরে দুই কক্ষের একটা ঘরে বসবাস করলেও প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি কক্ষের ছাউনির টিন মড়িচায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ওই চাউনির টিন না থাকায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে কক্ষটি। বৃষ্টি হলে ঘরের এক কোনে বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। তাই একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে পাঁচজনের এই পরিবারটিকে।

ব্যারাক হাউজের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'সামনে দুর্যোগ মৌসুম। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরগুলোতে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বসবাস করছে আশ্রিতরা। এসব জরাজীর্ণ ঘর টয়লেট, টিউবওয়েল মেরামত করা প্রয়োজন। আমরা সরকারিভাবে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। নেই শিশুদের কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা। এ বিষয়ে উপর মহলকে একাধিকার জানিয়েও কোনো সুফল পাইনি।'

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অনিছুর রহমান বলেন, 'আপাতত পুরানো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের কোন উদ্যেগ নেই। সরকার উদ্যোগ নিলে সংস্কার হতে পারে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, 'ইতিপূর্বে পুরানো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কার চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ হলে আশ্রীতদের বসবাসের অনুপযোগী ঘরগুলো মেরামত করা হবে।'

মেসেঞ্জার/সাইফুল/আপেল

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700