ছবি : মেসেঞ্জার
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ঘরের ভিতরে কিংবা বাইরে সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়ালে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলেন। সেসব চিত্রকর্ম দেখেই বর্তমানে ইতিহাসবিদরা সেই সময়ের মানুষের জীবনাচরণ, কৃষ্টি, সভ্যতা নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। তবে কালের আবর্তনে দেয়াল চিত্রকর্মের পরিমাণ কমার সাথে সাথে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কাজের পরিসর অনেক সংকুচিত হয়ে আসছে।
এমন একটা সময় ছিল যখন বিয়ে বাড়িতে আলপনা আঁকা, সৌখিন ব্যক্তিদের ঘরের ভিতরে এবং বাইরে বিভিন্ন নঁকশা আঁকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডের দেয়ালে শিল্পীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় শোভিত হতো বর্ণমালা বা বিভিন্ন দৃশ্য।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেসব চিত্র এখন বিলুপ্তির পথে। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময় কাজ না পেয়ে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে দেয়াল চিত্র শিল্পীদের। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিপর্যস্ত এই পেশায় অনিশ্চিত ভবিষ্যত দেখে অনেকেই অভাব অনটনে পড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
কথা হয় গাইবান্ধা জেলা শহরে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চারুশিল্পী হিসেবে কাজ করা রাজিব আহম্মেদের সাথে। তিনি বলেন, একটা সময় ছিলো তখন কাজের চাপে নতুন অর্ডার নেওয়া সম্ভব ছিলো না। আর এখন বছর জুড়ে মাত্র ৪ থেকে ৫ টি কাজ পাই।
তিনি আরও বলেন, পিভিসি ফেস্টুন কিংবা ব্যানারে খরচ তুলনামূলক অনেক কম আর রং তুলির কাজ করলে সেখানে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত খরচ আর সময় একটু বেশি লাগার জন্য অনেকেই আর দেয়াল চিত্র শিল্পীদের দ্বারা কাজ করে নেয় না।
সম্প্রতি গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ভবনের দেয়াল ও প্রাচীর জুড়ে আঁকা হচ্ছিলো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিবর্গের ছবি ও তাদের বাণী। রং তুলির আঁচড়ে চোখ, মুখ, নাকসহ মুখের হুবহু অবয়ব ফুটিয়ে তুলছিলেন চিত্রশিল্পী সাদ্দাম ইসলাম। পাশে দাঁড়িয়ে কাজের তদারকি করছিলেন অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোজাম্মেল হক মিলন।
চিত্রশিল্পীদের কাজে মুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, দেয়াল চিত্র আমাদের সংস্কৃতির অংশ এর মধ্যে খুব একটা কৃত্রিমতা নেই। শিল্পীদের কারুকার্য দেখলে মনে হবে ছবিগুলো জীবন্ত। এটা যেহেতু একটা বিদ্যালয় সেই হিসেবে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি ও বিভিন্ন দৃশ্য রঙ তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব দৃশ্য শিশুদের সহজেই আকৃষ্ট করবে তাই খরচ বেশি হলেও দেয়াল চিত্র শিল্পীদের মাধ্যমে কাজটা করছি।
কাজের পরিসর ছোট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী আনিস আহমেদ বলেন, চারুশিল্পের কদর বহুকাল থেকেই আমাদের সংস্কৃতিতে আছে। আগেও যেমন ছিল এখনও আছে কিন্তু মানুষের মধ্যে এখন সংস্কৃতি চর্চার চেয়ে অর্থ সাশ্রয়ের বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়ায় মুদ্রন শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, ফলে সাইনবোর্ড কিংবা বড় বিলবোর্ডের কাজ আমরা আর পাচ্ছি না। কারণ একটা ৫ ফুট বাই ৩ ফুট সাইনবোর্ড তৈরি করতে মজুরি সহ চিত্র শিল্পীদের পিছনে খরচ হয় দেড় হাজার টাকা আর পিভিসি ব্যানারে একই কাজ করলে খরচ পড়বে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা। এই খরচের পার্থক্যের কারণে মূলত দেয়াল চিত্র শিল্পীদের কাজের পরিসর ছোট হয়ে আসছে।
এসময় তিনি বলেন, সরকার যদি বিভিন্ন দপ্তরের কাজগুলো কিংবা সরকারি কলেজ ও বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দৃশ্য আঁকার উদ্যোগ নেয় তাহলে হয়তো এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের দীর্ঘ আক্ষেপ ঘুঁচে আয়ের নতুন পথ তৈরি হবে।
মেসেঞ্জার/আপেল