ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

লাভ না হলেও বাধ্য হয়ে ধান চাষ করছে গাইবান্ধার কৃষকরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লাভ না হলেও বাধ্য হয়ে ধান চাষ করছে গাইবান্ধার কৃষকরা

ছবি : মেসেঞ্জার

কৃষি অর্থনীতি নির্ভর উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হলেও সার, কীটনাশক, জমি চাষ, সেচ মজুরের দাম বেশি থাকায় কৃষকের মুখে নেই হাসি।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিঘা প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়েছে। তবে বেশি খরচে ধান আবাদ করে যথাযথ দাম পাবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কিত তাঁরা।

এদিকে জমিতে ধান চাষ না করলে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খেতে হবে ফলে উপযুক্ত দাম না পেলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই ধানের আবাদ করছে কৃষকরা।

মূল্যস্ফীতির অর্থনীতিতে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম হাতের নাগালের বাইরে সেখানে শুধু শুধু বছরে মৌসুমে ধান চাষ করে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা কৃষকদের অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

ধান চাষ নিয়ে গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উৎপাদন খরচ বিক্রয় মূল্যের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য থাকায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, সেচ সাশ্রয়ী নিয়ম মেনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলায় এক লাখ ২৮ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ দশমিক ২২ শতাংশ।

মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে কুয়াশা উপেক্ষা করে ক্ষেতের কাদা পানিতে ব্যস্ত চাষিরা। কেউ ধান রোপণ করছেন, কেউ জমিতে মই দিচ্ছেন, কেউবা জমিতে সার প্রয়োগ করছেন।

কথা হয় সদর উপজেলার আরিফ খা বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক মকছুদার রহমানের সঙ্গে। তিনি তখন জমিতে সার দেওয়া শেষ করেছেন। তিনি জানান, ৩৫ বছর ধরে কৃষিকাজে জড়িত তিনি। চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে ধান আবাদ করছেন।

গত বছর বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে সব খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি তাঁর খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার ৩০০ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এবার জমি চাষ, সার, কীটনাশক, সেচ, মজুরসহ সব কৃষি উপকরণের দাম বেশি। এতে তাঁর বিঘাপ্রতি খরচ বাড়বে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ‘ধান চাষীদের আবাদ করে কোন লাভ নেই। প্রতি বছর সার কীটনাশক আর সেচ পাম্প মালিকরা অযাচিত ভাবে দাম বাড়ায় অথচ ধানের দাম বাড়ে না।

পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কৃষক মজিদুল ইসলাম বলেন, ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। আর এক বিঘা জমিতে ফলন ভালো হলেও সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ মণ ধান পাওয়া যায় যার বাজার মূল্য ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। অথচ এক জমিতে আবাদ করতে সব খরচ মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

একই গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, 'এই মৌসুমে ধান রোপণের পর ধার দেনা করে সার কীটনাশক কিনতে হবে। সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার অতিরিক্ত খরচের ব্যবস্থা ঋণ নিয়ে করতে হচ্ছে। এই ধান কাটা মাড়াই শেষে প্রায় সব টাকা ধার দেনা শোধ করতে চলে যায় তাই পরের মৌসুমের জন্য আবার ঋণ করি।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের চাষিরা যথাযথ নিয়ম মেনে চাষ করলে খরচ ৩০ ভাগ কমানো সম্ভব। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে মজুর খরচও কমে যাবে।‘

আর সনাতন পদ্ধতিতে চাষ আবাদ না করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করলে রাসায়নিক সার কীটনাশকের ব্যবহার কমবে ফলে কম খরচে কৃষকরা লাভবান হবে।

মেসেঞ্জার/সিয়াম/আপেল