ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

দুই জেলার সীমানা দ্বন্দ্বে খুন-খারাবি, ৪ দশকে মেলেনি প্রতিকার

মানিক লাল সাদিয়াল (পটুয়াখালী)

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দুই জেলার সীমানা দ্বন্দ্বে খুন-খারাবি, ৪ দশকে মেলেনি প্রতিকার

ছবি : সংগৃহীত

বিগত দশক ধরে অস্তিত্বের লড়াই করে যাচ্ছেন চরের কৃষক পরিবারগুলো। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়ন ভোলা জেলার চরফ্যাশন আন্তঃজেলা সীমানা দ্বন্দে চরের কৃষকদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

সরকারের দেয়া বন্দোবস্তের জমিতে আবাদ করাই কাল হয়ে দারিয়েছে দরিদ্র কৃষকদের। জমি চাষ করতে গিয়ে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট মুজিবনগরের লাঠিয়াল বাহিনীর জোর জুলুম, নির্যাতন, খুন-খারাবির শিকার হচ্ছে চরবিশ্বাসের শত শত কৃষক।

এরই ধারাবহিকতায় ২০২০ সালের ২১ অক্টোবরে চরফ্যাশন উপজেলা দুলারহাট মুজিবনগরের লাঠিয়াল বাহিনীর হামলায় খুন হয় কৃষক কাশেম মৃধা, আহত হয় অন্তত শতাধিক। পটুয়াখালী-ভোলা জেলার আন্তঃসীমানা দ্বন্দ্বের ঘটনায় তিন থেকে চার দশক ধরে চলছে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

সীমানা জটিলতার এ দ্বন্দ্ব মেটাতে ভুমি মন্ত্রনালয়, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ এবং ভুমি অফিসে চিঠি চালাচালিসহ থানা পুলিশ এবং স্থানীয় শালিস-বৈঠক হলেও প্রতিকারের বদলে আর্থিক খেসারতসহ নানাভাবে হয়রানি হচ্ছে পরিবার গুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ-পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন থেকে কৃষি জমি বন্দোবস্ত দেয়া হলে চরফ্যাশন উপজেলা দুলারহাট মুজিবনগরের লাঠিয়াল বাহিনী ওই জমি গায়ের জোরে দখলে নিয়ে আবাদ করেন। এসব দখলবাজীর নেতৃত্বে দেন মুজিবনগরের সাবেক ইউপি সদস্য নাবীন বাতানসহ তার লোকজন।

দখলে নেয়া জমির অনুকুলে দখলবাজদের কাছে কোন প্রকার কাগজপত্র না থাকা সত্বেও র্দীঘদিন ধরে জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছেন তারা। সবশেষ উত্তর চরবিশ্বাসের কৃষক পরিবারের উপর চরফ্যাশনের লোকজন জুলুম নির্যাতন না করার শর্তে নিহত কাশেম মৃধা খুনের মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা ভঙ্গ করে তাদের জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। এসব অভিযোগ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন থানা পুলিশের কাছে গেলে আইনের নানা ফাকফোকর দেখিয়ে তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত করেন।

সরেজমিনে গেলে গলাচিপা উপজেলার উত্তর চরবিশ্বাসের একাধিক কৃষক বলেন, কয়েকটি ধাপে উত্তর-চরবিশ্বাসের একাধিক পরিবারকে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। বন্দোবস্ত দেয়া জমি ভোলার দাবী করে দুলারহাট মুজিবনগরের একটি বাহিনী প্রতিবছর তরমুজ মৌসুমে অস্ত্র দেশীয় লাঠিশোঠা নিয়ে হামলা-নির্যাতন জুলুমবাজি করে জমি দখলে নিয়ে তারা আবাদ করেন। এসব ঘটনায় জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ আদালতে মামলা করেও তাদের দাবানো যাচ্ছেনা।

ক্ষতিগ্রস্ত আনোয়ার হোসেন, মান্নান খান, আনিস খান, আসিয়া বেগম, ফাতেমা বেগম, রাহিমা বেগম, করিম দেওয়ান, আদমআলী দেওয়ান, ফজিলাতুনেচ্ছা, জয়নাল দেওয়ান, ফারুক দেওয়ান, কাশেম ফকির, আনোয়ার সরদার, জলিল ফকিরসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী বলেন, নির্বাহী আদালতে মামলা করা হলে আদালতে নির্দেশে বিরোধীয় জমির উৎপাদিত ফসল রক্ষনাবেক্ষনে উপজেলা কৃষি অফিসারকে রিসিভার নিয়োগ হয়।

অথচ আদালতের আইন ভঙ্গ করে তারা গায়ের জোরে সকল ফসল নিয়ে যান তারা। যা উপজেলা কৃষি অফিসার আরজু আক্তার লিখিত প্রতিবেদনে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে অবগত করেছেন। তবুও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্টরা।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, বর্তমান গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন আল হেলাল চরফ্যাশন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়াতে তিনি নিজ এলাকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমশি করছেন।

এসব প্রসঙ্গে গলাচিপা থানা পুলিশ এবং চরকাজল পুলিশ ফাড়ীর ইনচার্জ এসআই মোক্তার আলীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বিষয়টি যেহেতু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধিনে। তাই পুলিশের ভুমিকা উপজেলা প্রশাসনের উপর নির্ভর করে।

এসব প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, উল্লেখিত জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে।

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নবীন বাতেন গং ৮৬ একর জমি দখলে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাছারা এ ঘটনায় থানা পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত নবীত বাতান বলেন, ভোলার জমি পটুয়াখালী থেকে বন্দোবস্ত হওয়ায় আমরা সেই জমির দাবি করছি। জড়িপে তা প্রমানিত, অথচ উত্তর চর বিশ্বাসের লোকজন তা না মেনে জমির দাবি করছেন। আমার কোন বাহিনী নেই এবং কাউকে মারধোর করিনা।

মেসেঞ্জার/আপেল