ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

ফটোগ্রাফির নেশায় পাহাড় জুড়ে সরিষা চাষ

সুপ্রিয় চাকমা শুভ, রাঙামাটি

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ফটোগ্রাফির নেশায় পাহাড় জুড়ে সরিষা চাষ

ছবি : মেসেঞ্জার

অপমান ও জেদ থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ২ নম্বর নানিয়ারচর ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া এলাকায় দুর্গম পাহাড়ে সরিষার বাগান গড়ে তুলেছেন পেশাদার তরুন ফটোগ্রাফার বিভায়ন চাকমা। ৩ একর জমিতে প্রথমবারের মত সরিষার বাগান করে এলাকার মানুষের কাছে আলোচনায় এখন এ তরুন ফটোগ্রাফার। এতে স্থানীদের মাঝেও সরিষা বাগান করার বাড়ছে আগ্রহ। সরিষার বাগানে ছবি তুলতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন ছবিপ্রেমীরা।

৫২ হাজার টাকা খরচ করে ৩ একর জমিতে সরিষার বাগান করে এখন ৩ লাখ টাকার অধিক লাভ হতে পারে বলে জানান বিভায়ন। তবে লাভের আশায় সরিষার বাগান গড়ে তোলা হয়নি বরং তীব্র অপমান আর জেদ থেকে এ সরিষার বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন বিভায়ন। এমনকি শিক্ষিত তরুনদের ঘুষের মাধ্যেমে সরকারি চাকরীর পেছনে না দৌঁড়ে এ ধরনের উদ্যেক্তা হওয়ার আহ্বান করেন। অন্যদিকে শিক্ষিত যুবকদের এমন উদ্যোগে সকল ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস রাঙামাটি জেলা কৃষি বিভাগের।

সরিষার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এ সরিষার বাগান দেখলে মনে হবে সবুজ পাহাড়ের বুকে এ যেন হলুদ গালিচার চাদর পেতে রাখা হয়েছে। সুন্দর এ দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করতে সরিষার বাগানে ছুটে যাচ্ছেন অনেকেই। কথা হয় রাঙামাটি শহর থেকে ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে বিভায়ন চাকমার সরিষার বাগান দেখতে আসা মঙ্গল কুমার চাকমার সাথে। তিনি বলেন- ‘ছবি তোলা এবং ঘুরার জন্য ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে রাঙামাটি শহর থেকে বিভায়নের সরিষার বাগানে আসা। অল্প বয়সে এ ধরনের বিশাল সরিষার বাগান করা যার তার কাছে সম্ভব নয়। তবে জেদ এবং রাগ মানুষকে নিচেও নামাতে পাারে আর অন্যদিকে উপরেও নিয়ে যেতে পারে। বিভায়ন চাকমা সফলতার গল্প শুনেছি। তার মত করে শিক্ষিত বেকার তরুন-যুবকরা এভাবেই উদ্যোক্তা হতে পারবে।’

সরিষার বাগান ঘুরতে আসা জ্ঞান মিত্র চাকমা বলেন,‘বেকার না থেকে এসমস্ত ক্রিয়েটিভ কাজ গুলো করা দরকার। তাকে দেখে আমিও অনেক অনুপ্রাণিত হলাম। পরবর্তীতে আমিও চেষ্টা কববো এ ধরনের সরিষার বাগান গড়ে তোলার।’

কথা হয় সরিষা বাগানের জমি মালিক অমর শান্তি চাকমার সাথে। তীব্র অপমান আর জেদ থেকে
২০২৩ সালের শেষের দিকে তার কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে গড়ে তুলেন সবুজ পাহাড়ের বুকে সরিষা বাগান। এ বাগানেই এখন ইচ্ছে মতো অনেকে ছবি তুলেন বলে জানান অমর শান্তি চাকমা।

সরিষা বাগান গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে বিভায়ন চাকমা জানান,তিন বছর আগে এক সরিষার বাগানে তার মডেলকে ছবি তোলার জন্য ১০ মিনিটের অনুমতি নেন বিভায়ন। ছবি তোলার ২ থেকে ৩ মিনিট অতিরিক্ত সময় লাাগয় বিভায়নকে অপমান করেন সরিষা বাগানের মালিক। সেই তীব্র অপমান ও জেদ ধরেই ৩ একর জমিতে ৫২ হাজার টাকা খরচ করে সরিষার বাগান গড়ে তোলেন বিভায়ন চাকমা। যা বর্তমানে তার সরিষার বাগানে ইচ্ছেমতো ছবি তুলছেন এবং অন্যরাও ছবি তোলার সুযোগ পাচ্ছে।

বিভায়ন চাকমা সেই সরিষা বাগানের মালিককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন,‘অপমানকারী সরিষা বাগানের মালিককে আমি ধন্যবাদ জানায়। কেননা তিনি যদি আমাকে অপমান না করতেন তাহলে আমি নিজে সরিষা বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতাম না। শুধু অপমান করলে সরিষার বাগান করবো তা নয়। শিক্ষিত বেকার যুবকরাও এভাবে সরিষা বাগান করতে পারে।’

অন্যদিকে সরকারি নানান পরিকল্পনা প্রয়োগের কারণে সরিষা চাষ বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের এমন উদ্যোগে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এ বছরে রাঙামাটি জেলায় ৪শ ৮০ হেক্টর জমিতে ৫শ ৭০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরেও সরিষার ভালো ফলন হতে পারে।’

মেসেঞ্জার/ফারদিন