ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

চার দিনের অভিযানে যশোরে মাদক ও অস্ত্রসহ আটক ৬৫, মামলা ৩২

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

চার দিনের অভিযানে যশোরে মাদক ও অস্ত্রসহ আটক ৬৫, মামলা ৩২

ছবি: মেসেঞ্জার

সম্প্রতি যশেরাঞ্চলে অব্যাহত হত্যাকান্ড, অস্ত্রের মহড়া দিয়ে হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ৩ দিনের শুদ্ধি অভিযানে জেলার ৯ থানা এলাকা থেকে ৬৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে অস্ত্রগুলি ও মাদকদ্রব্য। এ ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানাগুলোতে ৩২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা সংক্রান্তে তদন্ত চলছে।

জেলাব্যাপী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস বেলাল হোসাইন। চলমান অভিযানে চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, হত্যার রহস্য উন্মোচনেও কাজ করবে জেলা পুলিশ। এ শুদ্ধি অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কতিপয় ব্যক্তি অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

জেলা পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের গত দেড় মাসে যশোর শহর ও শহরতলী ও বিভিন্ন এলাকাতে খুন, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্রের মহড়া, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পায়। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অস্ত্রের মহড়া ও হামলা চালিয়ে আতংকিত পরিবেশ সৃষ্টি করে অনেকে। যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা, মিছিলে ও শহরের অনেক স্পটে উপস্থিতি জানান দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে অনেক দুর্বৃত্ত। কয়েকটি এলাকায় ওই সন্ত্রাসীরা সরাসরি রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কথা প্রচার করছে। অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর দখলে একাধিক করে আগেয়াস্ত্র রয়েছে এমন তথ্যও রয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অনেকগুলো হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এমন অভিযুক্ত অনেক আসামি এখন প্রকাশ্যে। যশোরের বিভিন্ন স্পটে এবং উপজেলা পর্যায়ের অনেক স্থানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে বিভিন্ন সময়ে। এসব ঘটনাকে সামনে রেখে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ৪ দিনের শুদ্ধি অভিযানে আটক করা হয়েছে ৬৫ জনকে।

এদিকে অভিযানের ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস জানিয়েছেন, চলমান মাদক সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে স্বস্তি ফিরেছে জনগণের মাঝে। পুলিশের অভিযান কোননো ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস, চাদাবাজ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। পুলিশ অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করছে। তার অন্য কোনো পরিচয় পুলিশের কাছে মূখ্য নয়। অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের এই শুদ্ধি অভিযান অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই শুদ্ধি অভিযানকে শ্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কতিপয় ব্যক্তি যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে সে বিষয়ে পুলিশ সচেতন আছি। জেলাব্যাপী এই শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত আছে ও থাকবে। ১৪ থেকে এই অভিযানে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ ৬৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ৩২টি মামলা হয়েছে এবং তাদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এদিকে জেলা পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, যশোরের বিভিন্ন ক্রাইম পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক টিম। চিহ্নিতদের মূলোৎপাটনে মাঠে নেমেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা, পুলিশের বিশেষ শাখা ডিএসবিসহ থানা পুলিশ ইউনিটগুলো। যশোর পৌরসভার ওয়ার্ড ওয়ারী অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩ ডজন স্পটে চলেছে অভিযান। এলোমেলোভাবে চলাফেরা করা অনেকের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। এমনকি ১২ ফেব্রুয়ারি ৩ জন কাউন্সিলরের অফিসে পুলিশ অভিযান চালায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত সস্ত্রাসীদের আটক করতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযান চলে যশোরের পালবাড়ি এলাকায়। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি বারান্দীপাড়া, শংকরপুর, ধর্মতলাসহ অনেকগুলো এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। চলমান অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী, মোস্ট ওয়ান্টেড অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ আটকের টার্গেট রয়েছে। আর তালিকায় কয়েক জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ও মিটিং মিছিলে যোগ দেয়া কতিপয় ক্যাডারও রয়েছেন। সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান জোরদার করতে অতিরিক্ত ফোর্স নিযুক্ত করে সিনিয়র অফিসারদের নেতৃত্বে চালানো হচ্ছে অভিযান। যশোরের ৯ থানার অফিসার ইনচার্জকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে অভিযান পরিচলনা করার জন্য। বিভিন্ন ফাঁড়ি ইনচার্জদেরও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলাব্যাপি অভিযান চলছে। যেখানেই অপরাধ সেখনেই অভিযান আটক অভিযান চলবে।

এদিকে, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোর পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় খুলনা রেঞ্জের বার বার শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবে পুরস্কার প্রাপ্ত এবং আইজিপির আস্থা ভাজন অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার) পিপিএম। তার দিক নির্দেশনায় জেলার প্রতিটি থানা, ডিবি পুলিশ জেলায় সংঘটিত বিভিন্ন চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ অবৈধ অস্ত্রগুলি উদ্ধার করে জনমনে স্বস্তি ও আস্থার স্বাক্ষর রেখে চেলছে।

মেসেঞ্জার/জামাল/তারেক