ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

পেট্রাপোলে আড়াই কোটি রুপির স্বর্ণ জব্দ, আটক তিন ভারতীয়

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পেট্রাপোলে আড়াই কোটি রুপির স্বর্ণ জব্দ, আটক তিন ভারতীয়

ছবি : সংগৃহীত

বেনাপোল চেকপোস্টের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)

জব্দকৃত স্বর্ণের মূল্য প্রায় আড়াই কোটি ভারতীয় রুপি। পাচারকারী সন্দেহে তিনজন ভারতীয় চোরাকারবারিকে আটক করেছে বিএসএফ। চোরাকারবারিরা এসব স্বর্ণ বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচারের চেষ্টা করছিল।

ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ ১৪৫ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা পৃথক দুইটি অভিযানে ২২টি স্বর্ণের বিস্কুট তিনটি সোনার পেস্ট (গলানো মন্ড) জব্দ করা হয়।

ওপারের বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (জনসংযোগ) একে আর্য জানিয়েছেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি পেট্রাপোলে স্থানীয় সময় রাত ১২টা নাগাদ বেনাপোল বন্দরে পণ্য নামিয়ে দুটি খালি ট্রাক ভারতে ফিরে যাওয়ার সময় সন্দেহ হলে আটকায় বিএসএফ সদস্যরা।

ট্রাকটি তল্লাশির একপর্যায়ে ট্রাকের কেবিনে লুকিয়ে রাখা ২২টি স্বর্ণের বিস্কুট জব্দ করে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁর বাসিন্দা রাজু দাস দমদমের পাইকপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জিত দাসকে আটক করে। তারা দুই জনেই ট্রাক চালক। প্রায় দুই বছর ধরে ভারত বাংলাদেশে মধ্যে যাতায়াত করছেন তারা।

তারা বিএসএফকে জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারি আমদানিকৃত কাপড় ভর্তি ট্রাক নিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছান তারা। সেখানে মালামাল আনলোডের সময়, সেয়াজ উজ্জ্বল নামে দুই বাংলাদেশি তাকে স্বর্ণ দিয়ে বলে, এই স্বর্ণ ভারতে পাঠালে তাকে ১০ হাজার বাংলাদেশি টাকা দেওয়া হবে।

সেয়াজ উজ্জ্বলের কাছ থেকে সেসব স্বর্ণ নিয়ে ট্রাকের কেবিনে তারা লুকিয়ে রাখেন। পেট্রাপোলে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে সেসব স্বর্ণ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল তাদের। তবে ট্রাকগুলো পেট্রাপোলে প্রবেশের পর বিএসএফ এর হাতে ধরা পড়েন তারা।

একই দিনে (১৬ ফেব্রয়ারি) দুপুরের দিকে ইমিগ্রেশনের সময় এক ভারতীয় যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ জব্দ করে বিএসএফ। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে অভিবাসনের সময় যাত্রীটির শরীরে নীচের অংশে কিছু ধাতব পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে বাহিনীর এক সদস্য। যাত্রীটিকে তল্লাশির জন্য টয়লেটে নিয়ে যায়।

এরপর যাত্রীটির মলদ্বার থেকে তিনটি স্বর্ণের দলা উদ্ধার করে। সময় আটক করা হয়। ভারতের তামিলনাড়ুর রামানাথপুরম এর বাসিন্দা মোহাম্মদ রিবায়েদিন।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পেশায় তিনি হোটেলের শেফ। তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে এক বাংলাদেশির কাছ থেকে এসব স্বর্ণ সংগ্রহ করেছিলেন। এসব স্বর্ণ চেন্নাইয়ের ইকবাল নামে এক ব্যক্তির পৌছানোর কথা ছিল। জন্য তিনি ১৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা পেতেন। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের পরই শরীর থেকে স্বর্ণগুলো জব্দ করে বিএসএফ।

বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (জনসংযোগ) একে আর্য জানিয়েছেন, চোরাকারবারিরা গরিব নিরীহ মানুষকে অল্প পরিমাণ টাকার প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে বিএসএফ সজাগ আছে এবং কঠোর পদক্ষেপ অবলম্বন করছে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের চোরাচালান বন্ধে বিএসএফ সম্পূর্ণভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ওপারের একটি সূত্র জানায়, অতীতে কোকেন বা হেরোইন পাচারকারবারীরা এভাবেই পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পাচারের চেষ্টা করত। মাঝে মধ্যে ধরাও পড়ত। ইদানীং একাধিকবার সোনা এবং বিদেশি মুদ্রা পাচারের ঘটনা সামনে আসছে। গরু এবং কয়লা পাচারের ঘটনা সামনে আসার পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সোনা এবং বিদেশি মুদ্রার পাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

তাঁদের মতে, এতদিন দেশের মধ্যে সোনা পাচারের অন্যতম করিডর হিসেবে চিহ্নিত ছিল মুম্বই। সম্প্রতি বনগাঁ সীমান্ত থেকে যেভাবে সোনা এবং বিদেশি মুদ্রা পাচারের অভিনব পদ্ধতি সামনে এসেছে তাতে বাংলাতেও সোনা বিদেশি মুদ্রার পাচারকারীদের রমরমা বাড়ছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

তাদের মতে, যেভাবে পাচারের স্টাইল বদলাচ্ছে তাতে এর পিছনে বড় কোনও চক্র জড়িত থাকতে পারে। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে জেরা করে বিষয়ে কিছু তথ্যও পেয়েছেন বিএসএফ এর কর্তারা। তাঁর ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত তল্লাশি জনালেন বিএসএফের কর্মকর্তা একে আর্য।

মেসেঞ্জার/জামাল/আপেল