ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

প্রকাশ্যে আঞ্চলিক মহা-সড়কে কর্মচারি দিয়ে বন কর্মকর্তার চাঁদাবাজি 

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১১:২৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

প্রকাশ্যে আঞ্চলিক মহা-সড়কে কর্মচারি দিয়ে বন কর্মকর্তার চাঁদাবাজি 

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগন্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পদ্দা বাজারে চেকিংয়ের নামে ট্রাক থেকে টাকা আদায়। ছবি :মেসেঞ্জার

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর-রামগন্জ-সরদ-চাটখিল আঞ্চলিক মহা-সড়কের এলাকায় বন বিভাগের কর্মচারি দিয়ে বনজ সম্পদ (কাঠ) চেকিংয়ের নামে যানবাহন থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রামগন্জ উপজেলা বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। রামগন্জ বন কর্মকর্তার নির্দেশে পদ্দা বাজার এলাকার সামনে-কর্মচারী সাইফুল ইসলাম প্রতিদিন ২১-২৫টি গাছবহনকারি ট্রলি ও ট্রাক থেকে ৫০০-৭০০ টাকা করেই  তুলছেন। এ নিয়ে রায়পুর ও রামগন্জের করাতকল মালিক ও লাকড়ি ব্যাবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সোমবার দুপুরে পদ্দা বাজারে সরজমিন ঘটনাস্থল গেলে অভিযোগ সত্যতা পাওয়া যায়। এছাড়াও গত তিন মাস ধরে বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান লাইসেন্স না করায় হুমকি দিয়ে রামগন্জ শহরের সড়কের পাশে লাকড়ি ব্যাবসায়ী মনিরের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে ৩ হাজার টাকা, তার পাশের লাকড়ি ব্যাবসায়ী জসিমের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা আদায় করেন বনকর্মকর্তা। প্রায় ২৫ দিন আগে কাটাখালি এলাকার করাতকল মালিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। দিঘির পাড় এলাকার করাতকল মালিক সেলিমের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাও আদায় করেন।

জানাযায়, রামগন্জ উপজেলা রেঞ্জের আওতায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের পাশে সরকারি বনভূমি রয়েছে। প্রায় ৫০টি করাত কল ও রায়পুর থেকে পানপাড়া হয়ে রামগন্জ ও চাটখিল সড়কে পাশে সরকারি খাসজমিতে ১০জন লাকড়ি ব্যাবসায়ী রয়েছেন।

যানবাহন থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ওই সড়কে চলাচলরত কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, কাঠগাছ ও লাকরিভর্তি যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

পানপাড়া এলাকার ভ্যানচালক আমির হোসেন (ছদ্ম নাম) ও চন্ডিপুর বাজারের ট্রাক চালক সোহাগ মিয়া (ছদ্ম নাম) জানান, রায়পুর থেকে গাছসহ বিভিন্ন কাঠ রামগন্জের পৌরশহর দিয়ে চাটখিল ও হাজিগন্জে নিয়ে আসার পথে পদ্দা বাজার এলাকায় চেকপোস্টের নামে ৫০ --৫০০ ও ৭০০ টাকা করে প্রতি গাড়ি দিতে হয়।

ট্রাক চালক আবদুর রহমান  জানান, প্রতিদিন ৮-১০  ব্যবসায়ীদের গাছ নিয়ে রায়পুর থেকে রামগন্জ শহর দিয়ে চাটখিল ও হাজিগন্জ  যাওয়ার সময় পদ্দা বাজার এলাকায় বন বিভাগের এক কর্মচারিকে ৫শ টাকা করে দিতে হয়। টাকা না দিলে মামলার ভয় দেখানো হয়। সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত (১৯ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সাইফুল ইসলাম (৩০) নামের চতুর্থ শ্রেণীর মাস্টাররোল কর্মচারি যানবাহন থামিয়ে টাকা নিচ্ছেন। এ সময় টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জবাবে বলেন বনকর্মকর্তা মিজানুর রহমান স্যারের নির্দেশে গত তিন মাস ধরে সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সড়কের পাশে বসে থেকে ৫০-৫০০ টাকা করে তুলছি।

রামগন্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মোবাইলে বলেন, আমি কর্মচারি দিয়ে কোন চাঁদাবাজি করছি না। গাছ ও পাচারকারি ধরতে সাইফুল ইসলামকে পাহাড়ায় রাখা হয়। করাতকল মালিক ও লাকড়ি ব্যাবসায়ীরা আমার নামে মিথ্যা বলছে। কয়েকদিন আগে অবৈধ করাতকলে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করায় তারা ক্ষিপ্ত আছে। লক্ষ্মীপুর জেলা বন কর্মকর্তা সাহিন আলম জানান, রামগন্জে পদ্দা বাজারের সামনে কোনো চেকপোস্ট রয়েছে কিনা জানানাই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোয়াখালি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ মোবাইল ফোনে বলেন, রামগন্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সড়কে গাছ বহনকারি ট্রাকসহ যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য- বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রায় তিন মাস আগে রাঙ্গামাটি জেলা থেকে বদলি হয়ে রামগন্জ উপজেলায় যোগদান করেন।

মেসেঞ্জার/সুমন/তারেক