ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

আধুনিকতায় বদলে যাচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দরের চেহারা

মো. জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আধুনিকতায় বদলে যাচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দরের চেহারা

ছবি : মেসেঞ্জার

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলও বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু বন্দরের পুরনো অবকাঠামোয় পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছিল। তবে দুই দেশের বাণিজ্যে আরো গতি আনতে স্থলবন্দরে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল। এর আগে পুরনো টার্মিনালের পরিবর্তে নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বাস ও যাত্রী টার্মিনাল। পণ্য রাখার শেড ও ইয়ার্ডও বদলে যাচ্ছে এখানে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণে বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়ছে।

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে ২শ’ ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান হচ্ছে বৃহত্তম ভেহিকেল ট্রাক টার্মিনাল। বন্দরের আধুনিকায়নে ২৪ একর জমির উপর টার্মিনালের নির্মাণ কাজ হাতে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হলে এখানে একসঙ্গে এক হাজার ২শ’ ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়াতে পারবে। বেনাপোল স্থলবন্দরে অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে রাজস্ব আয় এবং আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে নানা প্রতিবন্ধকতা চলে আসছিল দীর্ঘ দিন। বন্দরের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরো সহজ করবে ও বদলে যাবে বেনাপোল স্থলবন্দরের চেহারা বলে আশা করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোল স্থলবন্দর বর্তমানে ১২৭ একর জমির ওপরে নির্মিত। এখানে ৫০টি শেড ও ইয়ার্ড রয়েছে। এসব শেড ইয়ার্ডে পণ্য রাখার ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু ভারত থেকে প্রতিদিন যে পণ্য আমদানি হয় তার পরিমাণ দৈনিক প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সরকারের বড় অংকের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আসে। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে বিগত সরকারগুলোর সময়ে বন্দরটি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না থাকায় বাণিজ্য ও রাজস্ব দুটাতেই কাঙ্খিত অর্জন আসতোনা। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব অনুধাবন করে অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দেয়। গেল ১৫ বছরে বন্দর আধুনিকায়নে সরকারি ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ব্যয় করা হয় ৬৮৫ কোটি টাকা। যা ইতিপূর্বের সরকারগুলো এ উন্নয়ন করতে পারেনি। উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ২শ’ ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল। ঢাকার এস এস আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একটি কার্গো ভেহিকেল ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করে। যেটির কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। যেটি নির্মান কাজ শেষ হলে এক সাথে ১২০০ ট্রাক পার্কিং করতে পারবে, ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১ একর জমি অধিগ্রহন, ১৯৩ কোটি টাকার আন্তর্জাতিক বাস ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ৩০ কোটি টাকার জায়গা অধিগ্রহন, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা, ৩৯ কোটি টাকার সুউচ্চ বাউন্ডারী ওয়াল, ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে স্টাফ ডরমিটোরি ভবন এবং ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় পণ্য পরিমাপের দুইটি স্কেল। এসব অবকাঠামো ও অটোমেশন সুবিধায় ইতিমধ্যে রাজস্ব ও আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি বেড়েছে বন্দরে।

বন্দরের পরিসংখ্যান মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ১২ লাখ টন থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ টন। 

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, এসব কাজ শেষ হলে বন্দর আধুনিকতায় পূর্ণতা পাবে। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ, অপারেশন বিল্ডিং নির্মাণ, নুতন শেড নির্মাণসহ নানাবিধ কাজ হাতে নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব কাজ শেষ হলে বন্দর আধুনিকতায় পূর্ণতা পাবে। চলতি কার্গো ভেহিকেল ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণকাজ আগামী ২৪ সালের জুন নাগাদ  শেষ হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএসআরের জিএম মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন জানান, কার্গো ভেহিকল ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে। তারা দিনরাত কাজ করে চলেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার আশ্বাস দেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তখন বদলে যাবে বন্দরের চিত্র।

জানতে চাইলে বন্দরের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, বন্দরে সুউচ্চ বাউন্ডারি ওয়াল, স্টাফ ডরমিটোরি ভবন এবং পণ্য পরিমাপের দুটি স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। বাকি কাজ দ্রæতগতিতে চলছে। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা ও রাজস্ব আয় দুটোই বাড়বে। বন্দরের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরো সহজ করবে।

এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, গত ১৫ বছরে বন্দর আধুনিকায়নে সরকারি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬৮৫ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। সরকার আন্তরিক হওয়ায় এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন অধিকাশ শেষ হয়েছে কিছু চলমান আছে। ২৪ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন ভেহিকল ট্রাক টার্মিনালের কাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। টার্মিনালটি চালু হলে বেনাপোল বন্দরে কোনো যানজট থাকবে না।

মেসেঞ্জার/শাহেদ