ঢাকা,  সোমবার
২৩ জুন ২০২৫

The Daily Messenger

তীব্র শিক্ষক সংকটে ভুগছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ

দ্বিপাল ভট্টাচার্য্য, সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ২ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৮:১৮, ২ মার্চ ২০২৪

তীব্র শিক্ষক সংকটে ভুগছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ

ছবি : মেসেঞ্জার

দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক সংকটে ভুগছে হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ভরসাস্থল সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ। শিক্ষক সংকটসহ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত কলেজটিতে ধুঁকে ধুঁকে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলার প্রাচীন বিদ্যাপিঠ হিসেবে হাওর পাড়ের শিক্ষার্থীরা এই কলেজ থেকে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখেন। অন্য কোথাও গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ কিংবা সামর্থ্য না থাকায় প্রতি বছর এই কলেজে হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে ভর্তি হওয়ার পরেই ঘটে বিপত্তি। না পান পর্যাপ্ত ক্লাস, না পান উচ্চ শিক্ষার কোনো সুযোগ সুবিধা। যার ফলে ফলাফলে ঘটে বিপর্যয়।

জেলায় কিছুটা ভাল করলেও বিভাগীয় পর্যায়ে বরাবরেই পিছিয়ে থাকে কলেজটি। জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের কেন এমন অবস্থা? এই উত্তর জানতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেন দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকটের কথা। তাঁরা জানান, শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও সংকটের সমাধান হয়নি।

শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে তারা কখনোই রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পান না। যার ফলে শেষ হয় না সিলেবাস। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য আবাসন সুবিধা না থাকায় যে কয়জন শিক্ষক আছেন তাঁদের বেশিরভাগই সিলেটে থেকে আসা যাওয়া করেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্নিত হয় পাঠদান। সব মিলিয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাওরাঞ্চলের বৃহত্তম এই কলেজের দিকে নজর নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। আর তাঁদের নজর নেই বলেই বছরের পর বছর বহুমুখী সংকটে ধুঁকছে কলেজটি। ফলে মানসম্মত শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাওর পাড়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যা মেনে নেওয়া কষ্টকর।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, পদ অনুযায়ী শিক্ষক থাকার কথা ৫২ জন কিন্তু আছেন মাত্র ২৮ জন। অন্যদিকে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।

শিক্ষক সংকটের চিত্র তুলে ধরে কলেজটির অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুল আলম বলেন, 'জেলার বৃহত্তম বিদ্যাপিঠে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে সেটি অনেকাংশেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কলেজে শিক্ষক সংকট দূর করা সহ নতুন পদ সৃষ্টি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।

অধ্যক্ষ জানান, ভাইস প্রিন্সিপাল ( প্রশাসনিক পদ) সহ ২২ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিপরীতে ইন্টার, অনার্স, ডিগ্রি, মাস্টার্স মিলিয়ে ১০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী। বিপুল পরিমাণ এই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক সংকট দূর করা অতি জরুরী। এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন।"

শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ জমসিদ আলী বলেন, 'কলেজে যে-সকল বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে সেই সকল বিষয়ের জন্য শিক্ষক প্রয়োজন ৭ জন। আর মাস্টার্স কোর্সের সহ শিক্ষক প্রয়োজন হয় ১২ জন। অথচ কলেজের ১০ টি বিষয়ে অনার্স ও ৪ টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ২ জন বা ১ জন করে। কোনো কোনো সময় দেখা যায় একজনও থাকেন না। এমতাবস্থায় কলেজের পাঠদান বিঘ্নিত হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নে অনতিবিলম্বে শিক্ষক সংকট দূর করা প্রয়োজন।"

কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহীম মিয়া জানান, 'কলেজে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে ক্লাস না পেয়ে ঘুরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে যায়। ফলে প্রান্তিক জেলার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় কলেজের ফলাফল খারাপ হচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি অনতিবিলম্বে কলেজের শিক্ষক সংকট দূর করা হোক।"

তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৪৪ সালের শেষভাগে আসামের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ সাদউল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে সুনামগঞ্জ কলেজের দ্বার উন্মোচন করেন। এটিই ছিল তৎকালীন আসাম প্রদেশের ১ম প্রাইভেট বিজ্ঞান কলেজ। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়।

কলেজে বর্তমানে ১০ টি বিষয়ে (হিসাব বিজ্ঞান, বাংলা, দর্শন, ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা, ইংরেজি, গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান) অনার্স ও ৪ টি বিষয়ে (হিসাব বিজ্ঞান, বাংলা, ইতিহাস, দর্শন) মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।

এইচএসসি পর্যায়ে মানবিক, ব্যবসায় ও বিজ্ঞান শাখা চালু রয়েছে। আছে ডিগ্রি পাস কোর্সের তিনটি বিভাগও। কলেজে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। কলেজটিতে শিক্ষক থাকার কথা ৫২ জন (সৃষ্ট পদ অনুসারে) কিন্তু আছেন মাত্র ২৮ জন।

শিক্ষক সংকট যে তীব্র সেটা বোঝাই যাচ্ছে। যে সকল বিষয়ে অনার্স চালু আছে সেই সকল বিভাগের জন্য সৃষ্ট পদ ৪ টি কিন্তু অর্থনীতি বিভাগ ছাড়া অন্য কনো বিভাগে সৃষ্ট পদ অনুযায়ী শিক্ষক নেই। প্রায় সকল বিভাগেই চলছে ১/৩ জন শিক্ষক দ্বারা।

ব্যবস্থাপনা ও উদ্ভিদবিদ্যা  বিভাগে আছেন মাত্র ১ জন করে শিক্ষক, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে দুইজন শিক্ষক থাকলেও একজনের সংযুক্তি দায়িত্ব তাই বাস্তবে একজনই। এমতাবস্থায় কলেজের বহুমুখী সংকট সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রত্যাশা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা।

মেসেঞ্জার/আপেল