ছবি : মেসেঞ্জার
নীলফামারীর ডিমলায় নারী কেলেঙ্কারি, চুরি, প্রক্সি পরীক্ষাসহ একাধিক ফৌজদারি মামলা জড়িত ও সাজাপ্রাপ্ত এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে, তার পরেও বহাল তবিয়তে বসে রয়েছেন নিজ চেয়ারে। নেই কোনো বিভাগীয় তদারকি, জন্ম দিতেছেন একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষক হলেন- ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী শহিদ স্মৃতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।
সর্বশেষ শনিবার (১৬ মার্চ) শেষ রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছিনতাইয়ের মামলায় ডিমলা থানা পুলিশের একটি আভিযানিক দল নীলফামারী সদর উপজেলা থেকে আটক করেন তাকে। আটককৃত শহিদুল ইসলাম উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম খড়িবাড়ি গ্রামের শামসুল হকের ছেলে।
২০২৩ সালে আগস্ট মাসে ডিমলা উপজেলার পশ্চিম খড়িবাড়ী রহমানগঞ্জ বাজার থেকে মজিবর রহমান নামের এক বিকাশ এজেন্টের দোকানের সামনে থেকে ফিল্মি স্টাইলে একটি সুজকি মোটর সাইকেল, ব্যাগে থাকা ৩ লাখ ৭২ হাজার টাকাসহ ব্যাগে থাকা পূবালী ব্যাংকের চেক বই ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ছিনতাই করলে স্থানীয় গ্রাম আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।
মজিবর রহমান সেখানে সুরাহ না পেলে তিনি বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন বিজ্ঞ আদালত। ওয়ারেন্ট তামিলে শনিবার (১৬ মার্চ) শেষ রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছিনতাইয়ের মামলায় ডিমলা থানা পুলিশের একটি আভিযানিক দল নীলফামারী সদর উপজেলা থেকে তাকে আটক করে।
মামলার বাদি মজিবর রহমান ‘দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে’ বলেন, শহিদুল ইসলাম আমার দোকানের সামনে থেকে মোটর সাইকেল, ব্যাগে থাকা ৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা, পূবালী ব্যাংকের চেক বইসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায়। চলিত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নালিশ দায়ের করলে সে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি ধামকি দিয়ে বেড়াত। আমার দাবি, আদালত যেন তার সঠিক বিচার করেন।
এদিকে ২০২৩ সালে ৬ ডিসেম্বর শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের তিন সন্তানের জননী সহকারী শিক্ষক রাসলিয়া আক্তার সন্ধ্যার পরে থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন ওই শিক্ষিকার স্বামী মহির উদ্দিন বাদী হয়ে ডিমলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। এ বিষয় নিয়ে এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা সৃষ্টি হয়।
ওই শিক্ষিকার স্বামী বলেন, ‘শিক্ষকের স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও আমার তিন সন্তানসহ স্ত্রীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে। সুস্থ অবস্থায় আমার স্ত্রী-সন্তানদের আমি ফেরত চাই। শিক্ষক নামের ওই অমানুষের কঠিন বিচার চাই।‘
তিনি জানান, ওই শিক্ষক এর আগেও প্রথম স্ত্রী ও সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
শিক্ষকের প্রথম স্ত্রী বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু বিয়ে করেছি, সে কারণে মুখ বন্ধ করে সব সহ্য করে এসেছি। বিয়ের ২০ বছর পর ২০২০ সালে এক মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে।
পরবর্তী সময় পরিবার ও আমার অনুরোধে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়। এখন তার সহকর্মী ওই শিক্ষিকাকে তিন মাস আগে তৃতীয় বিয়ে করেছে বলে জানতে পেরেছি।’
এর আগে লালমনিরহাট জেলার রিতি আক্তার নামের এক মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় বিয়ের পিরিতে বসতে হয় শহিদুল ইসলামকে। বিয়ের কিছু দিন পরেই সেই কিশোরীকে তালাক প্রদান করেন তিনি।
শহিদুলের নামে চেক ডিজঅনারের মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০২২ সালে ডোমার উপজেলার ছোটরাউতা (আন্ধারুর মোড়) গ্রামের শাহিনুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৯ লাখ টাকা একটি চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের করেন। সেখানে নিম্ন আদালত তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করলে তাকে স্থানীয় থানা পুলিশ আটক করলে পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তা মিমাংসা করেন তিনি।
অপর আরেকটি ঘটনায় ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাদশা নামের এক ব্যক্তি ৩৩ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করেন, সেই মামলায় আদালত তা কাছে থেকে ৩৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
প্রক্সি পরীক্ষায় ও সেরা এই শহিদুল। ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পোস্টম্যান/পত্র বিলিকারী পদে লিখিত পরীক্ষায় চাকুরি প্রত্যাশী আব্দুর রউফ নামে একজনের প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাকে হাতে-নাতে ধরে দোষী সাব্যস্ত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট ১৫ দিনের সাজা প্রদান করেন। যা ফৌজাদারি আইনের আদলে পড়ে। এছাড়াও একাধিক কর্মসংস্থানে প্রক্সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের নজির কেড়েছেন তিনি।
শহিদুলের বিপক্ষে এসব অভিযোগ থাকার পরেও শিক্ষা বিভাগ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সেই সময়ে কর্মরত জেলা শিক্ষা কমর্কতা নবেজ উদ্দিন বাণিজ্যিকভাবে ৪-২৪ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখিয়ে নাম মাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেও সাজাপ্রাপ্তের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তিনি। পরবর্তীতে কোনো পদেক্ষেপ নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে।
সেই সময়ে সহকর্মী রাসলিয়াকে নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাজ্জাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, ওই দুই সহকারী শিক্ষকের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত থাকলে আদৌও তা বাস্তবায়ন হয়নি, ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি রিতি আক্তারের ঘটনায় বিদ্যালয় ফাঁকির।
আটক ও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতের জন্য গয়াবাড়ী শহিদ স্মৃতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়েন উদ্দিনকে একাধিক বার মুঠোফোনে কল করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপ পরিচালক মোহম্মাদ মুজাহিদুল ইসলাম টিডিএমকে জানান, ইতোপূর্বে ফৌজদারী মামলায় তার সাজা হয়েছে সে বিষয় আমাদের জানা ছিল না। বর্তমানে যে তিনি কারাগারে রয়েছেন বিষয়টি জেনে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেসেঞ্জার/রিপন/আপেল