ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

জনগণের ভোটে নির্বাচিত সবচেয়ে কম বয়সী উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু

বাগেরহাট প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ১৪ মে ২০২৪

জনগণের ভোটে নির্বাচিত সবচেয়ে কম বয়সী উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু

ছবি : মেসেঞ্জার

নির্বাচনে জয়ের পর জনপ্রতিনিধিকেই মালা পরান নেতা-কর্মী শুভাকাঙ্খীরা। মালার ভারে কখনো কখনো কোনো কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাঁটাও মুশকিল হয়ে যায়। এবার সেই রেওয়াজের বাইরে বেরিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মেহেদি হাসান বাবু।

উপজেলা নির্বাচনে তিন হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করার পরও নিজে পরেননি বিজয়ের মালা। যা পরিয়েছেন জনগণের গলায়। মালা নিয়ে নিজে ছুটে গেছেন জনগনের দ্বারে দ্বারে। ভোটে নির্বাচিত দেশের সবচেয়ে কম বয়সী এই উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলার সকল এলাকায় গিয়ে মালা পরিয়েছেন সেখানকার বয়োজ্যেষ্টদের। গিয়েছেন পরাজিত তিন প্রার্থীর বাসায়ও।

কচুয়া উপজেলার অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এর আগে এতো সুন্দর আর প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখেনি কচুয়াবাসী। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা করেছেন চারজন।

এদের মধ্যে মেহেদি হাসান বাবু বয়সে সবচেয়ে ছোট। কিন্তু জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। বাবুর বয়স ৩৯ বছর। তিনি উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

তিনি যাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দীতা করেছেন তাদের দুইজনের একজন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আরেকজন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। আর অন্য জন ছিলেন উপজেলার চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও।

গত মে কচুয়া উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ টি কেন্দ্রে ভোট হয়। এই উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৮৯ হাজার ৬৯১ জন। এরমধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫৫ হাজার ৯২৯ জন। বাতিলকৃত ভোট হাজার ৫৮৯ টি। বৈধ ৫৪ হাজার ৩৪০ ভোটের মধ্যে মেহেদি হাসান বাবু দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৯০ ভোট। আর বাকি তিন প্রার্থী মিলে পেয়েছেন ২৮ হাজার ২৫০ ভোট।

মেহেদি হাসান বাবুর নিটকতম প্রার্থী বাগেরহাট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফী জেমস মেহেদি হাসান বাবুর চেয়ে হাজার ৬২৩ ভোট কম পেয়েছেন। তিনি মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৬৭ ভোট।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমস বাগেরহাট প্রেসক্লাবেরও সাধারণ সম্পাদক। জেমসের চাচা মীর সাখাওয়াত আলী দারু বাগেরহাট- (বাগেরহাট-কচুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।

মীর সাখাওয়াত আলী দারুর স্ত্রী ফরিদা আক্তার বানু লুচি বর্তমানে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য। এছাড়া জেমসের আরেক চাচা মীর শওকত আলী বাদশাও বাগেরহাট- আসনে দুই বার সংসদ সদস্য ছিলেন।

ভোটে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমা সারোয়ার। ঘোড়া প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন হাজার ৪৬৫ ভোট। তিনি মেহেদি হাসান বাবুর চেয়ে ১৭ হাজার ৬২৫ ভোট কম পেয়েছেন।

চতুর্থ হয়েছেন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কে, এম, ফরিদ হাসান। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩১৮ ভোট। কে, এম, ফরিদ হাসান ভোটের আগের দিন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফী জেমসকে সমর্থন দিয়ে মাঠ ছেড়ে দেন।

মেহেদি হাসান বাবু বলেন, বিজয় আমার না। বিজয় জনগণের। উপজেলাবাসী আমাকে ভালোবেসে বিজয়ী করেছেন। আমি কখনোই তাদের এই ঋণ শোধ করতে পারবো না। তবে চেষ্টা করবো সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অন্য রকম সুন্দর একটি কচুয়া উপহার দেওয়ার।

কচুয়া উপজেলা বাধাল উইনিয়নের বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, বাবু সব সময় মাঠে থাকে। মানুষের বিপদে আপদে পাশে পাওয়া যায়। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করে আসছেন। নিজের জনপ্রিয়তা এবং তার বাবার জনপ্রিয়তা বেশি কাজে লেগেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- বাবুর বাবা মরহুম এস এম মাহফুজুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিরও দায়িত্ব ছিলেন। ২০২১ সালের মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা সারোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনবছরের জন্য উপনির্বাচনে নাজমা সারোয়ার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান এবং বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন। তারপর এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এস এম মাহফুজুর রহমানের বড় ছেলে মো. মেহেদি হাসান বাবুসহ চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দীতা করেন।

মেসেঞ্জার/রিফাত/আপেল