ঢাকা,  সোমবার
৩০ জুন ২০২৫

The Daily Messenger

ঐতিহ্য হারাচ্ছে ১০ টাকা নোটের সেই আতিয়া জামে মসজিদ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ১৭ মে ২০২৪

ঐতিহ্য হারাচ্ছে ১০ টাকা নোটের সেই আতিয়া জামে মসজিদ

ছবি : মেসেঞ্জার

১৯৭৮ সালে গভর্নর খোরশেদ আহম্মেদের সময়ে ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদে প্রথম আতিয়া মসজিদটি স্থান পায়। এরপর ১৯৮২ সালে পরিবর্তিত ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদেও স্থান পায় আতিয়া মসজিদ। এতে দেশবাসীর কাছে সহজেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৮ সালে মসজিদটির দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রততত্ত্ব বিভাগ।

মসজিদটি শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শনই নয় বরং এটি একটি দর্শনীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এই মুসলিম স্থাপত্যটি প্রায় ৪১৫ বছর আগে নির্মিত হলেও মসজিদটির কারুকাজ এখনো সবার নজর কাড়ে।

যে সকল ঐতিহ্যের কারণে টাঙ্গাইলকে সহজেই পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় তার মধ্যে আতিয়া জামে মস্জিদটি একটি। টাঙ্গাইল শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে আট কিলোমিটার দূরে দেলদুয়ার উপজেলায় আতিয়া মসজিদটির অবস্থান। 

পঞ্চদশ শতকে এই অঞ্চলে আদম শাহ বাবা কাশ্মীরি নামের এক সুফি ধর্মপ্রচারক আসেন। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন।

এই পুণ্যবান ব্যক্তি এখানেই সমাহিত। শাহ কাশ্মিরীর অনুরোধে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর সাঈদ খান পন্নীকে আতিয়া পরগণার শাসক নিয়োগ করা হয়। সাঈদ খান পন্নীই করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদটির প্রবেশ পথের মূল ফটকে টাঙানো রয়েছে একটি শিলালিপি।

এই শিলালিপিটি ফার্সিতে লেখা। কোন কারণে আদি শিলালিপিটি বিনষ্ট হলে পরবর্তীকালে মসজিদ মেরামতের সময় বর্তমান শিলালিপিটি লাগানো হয়।

বর্তমানে এ শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে, আতিয়া মস্জিদটি নির্মাণ হয় ১০১৮ হিজরি বা ১৬০৯ সালে । বায়েজিদখান পন্নীর পুত্র সাঈদখান পন্নী মসজিদটি নির্মাণ করেন।

এরপর দিল্লীর একজন নারী বণিক  রওশন খাতুন চৌধুরানী ১৮৩৭ খ্রি.  এবং দেলদুয়ারের জমিদার আবু আহমেদ গজনবী খান ১৯০৯ খ্রি. মসজিদটির পূণঃ সংস্কার করেন। 

দৃষ্টিনন্দন ওই মসজিদটি লাল ইট দ্বারা নির্মিত। মসজিদটির পূর্ব ও উত্তর পার্শ্বের দেয়ালে রয়েছে আকর্ষণীয় খোদাই করা নকশা অলংকিত। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে  দুইটি করে দরজা রয়েছে এবং পূর্ব দিকে তিনটি দরজা রয়েছে। 

আকষর্ণীয় কারুকার্যে  নির্মিত আতিয়া জামে মসজিদ সহজেই দর্শনার্থীদের নজর কারে। আকারে ছোট হলেও মসজিদটি দেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন এই মসজিদের দৈর্ঘ ১৮.২৯ মিটার ও  প্রস্থ ১২.১৯ মিটার এবং দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার।

এছাড়া বারান্দার দৈর্ঘ ৩.৮২ মিটার , প্রস্থ ৭.৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪৪ ফুট। মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ৪টি বিশাল আকারের অষ্টকোণাকৃতির মিনার। স্ফীত রেখার সাহায্যে অলঙ্কৃত মিনারগুলো ছাদের অনেক উপরে উঠে গেছে। চূড়ায় রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর ছোট ছোট গম্বুজ।

গম্বুজগুলোর গায়ে বিভিন্ন রকমের কারুকার্য  মসজিদটির সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। মস্জিদটির প্রধান কক্ষ ও বারান্দা দুই ভাগে বিভক্ত। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে আছে ৩টি সুন্দর মেহরাব।

মাঝখানের প্রবেশপথের উপরের অংশের একটি শিলালিপি রয়েছে। অথচ পরিচর্যার অভাবে দেয়ালের খোদাই করা নকশাতে শেওলা ধরে মসজিদটির প্রকৃত রঙ ও  কারুকার্য  মুছে যাচ্ছে।

ফলে মসজিদটি প্রকৃত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। জরুরী ভিত্তিত্বে সংস্কার করা না হলে মসজিদটি একসময়ে পুরোপুরি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে। এমনটাই বলছেন দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা।

টাঙ্গাইলের আতিয়া জামিয়া মসজিদটি দেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন। তবে মসজিদের দেয়ালের উপর যে চিত্র ফলক ছিল তা বহুলাংশে নষ্ট হয়েছে।

মসজিদ টি কতটা কারুকার্যময় ছিল তা বোঝা যায় এর নির্মাণশৈলী ও চিত্রফলক দেখে। এটি বাংলাদেশের অন্যান্য মস্জিদ থেকে একটু ভিন্ন। মসজিদের প্রায় লাগোয়া পশ্চিম দিকেই রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের অতি প্রাচীন একটি পুকুর।

এটি উত্তর-দক্ষিণে মাঝারি আকারের মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। আতিয়া জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার স্থানজুড়ে বহু প্রাচীন কীর্তি ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন রয়েছে। মোঘল আমলে এটি ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রাচীন হিন্দু-বৌদ্ধ-সুলতানী আমল ও ইংরেজ আমলের প্রথম দিকেও এ স্থানের প্রাধান্য ছিল।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রততাত্মিক বিভাগ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে স্থানীয়রা মসজিদটির কোন সংস্কার করতে পারছে না। প্রততত্ত্ব বিভাগও জোড়ালো কোন সংস্কার পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে মসজিদটির কারুকাজ।

আতিয়া জামে মসজিদ কমিটির সহসভাপতি আশরাফ হোসেন  মানিক জানান,  প্রায় ৮ মাস আগে মসজিদটির চুনকাম ও রঙের কাজ করা হয়েছে। অল্প দিনেই  তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া মসজিদটির কারুকার্যও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সংস্কার না হলে একসময় মসজিদটি ঐতিহ্য পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি মসজিদটির দ্রুত পুরোপুরি সংস্কাররের মাধ্যমে পুরানাকৃর্তিটি সংরক্ষণের দাবী জানান।

মেসেঞ্জার/রেজাউল/তারেক