
ছবি : মেসেঞ্জার
বরগুনায় পালিত হলো ৭১ এর শহীদদের স্মরণে জেলহত্যা দিবস। ২৯ ও ৩০ মে বরগুনার মানুষের জন্য শোকের দিন, বেদনার দিন। ১৯৭১ সালে এই দুদিন ইতিহাসের এক বর্বরোচিত ঘটনা সংঘঠিত হয়েছিলো বরগুনার জেলখানায়।
পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয় জেলখানা। বরগুনার জেলাখানাও ছিলো তেমনি একটি নিরাপদ জায়গা। আর সেই জেলখানায় গুলি করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল শতাধিক বাঙালিকে।
হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পূর্বে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণহারে আটক করা হয় কোলে থাকা শিশুসহ নারী ও পুরুষদের। বেশ কিছুদিন নারীদের নির্যাতনের পর ছেড়ে দিলেও আটকে রাখে পুরুষদের।
পরবর্তিতে পাক হানাদার বাহিনীর মেজর নাদের পারভেজের নির্দেশে এবং কুখ্যাত রাজাকারপ্রধান আজিজ মাষ্টারের সহযোগিতায় জেলখানার ভেতরেই চলে এ নূনৃশংস হত্যাকাণ্ড।
পূর্বেই জেলখানার অদূরে তিনটি ডোবা খনন করে রাখা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পর লাশগুলোকে জেলখানা থেকে টেনে হিঁচড়ে এনে সেই ডোবায় ফেলে মাটি চাপা দেয়া হয়।
গুলিতে অর্ধমৃত কেষ্ট ডাক্তার ডোবা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকে কোদাল দিয়ে পিটিয়ে মাথা থেতলে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শতাধিক নিহত ব্যক্তিদের মাঝে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। এদের মাঝে মাত্র ৮৬ জনকে চিহ্নিত করা গেছে।
প্রতিবছরের এই দিনগুলোতে জেলখানায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে জেলহত্যা দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছরই বরগুনা শহীদ পরিবার, বরগুনা প্রেসক্লাব ও বরগুনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নেতৃবৃন্দ এই দিবসটি পালন করে।
বুধবার (২৯ মে) সকাল ৯ টায় তারা শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি, অ্যাড, মোস্তাফা কাদের, সাধারণ সম্পাদক, জাফর হোসেন হাওলাদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বাবু চিত্তরঞ্জন শীল, সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন মিরাজ, বরগুনা শহীদ পরিবারের সন্তান বাবু সুবল তালুকদার, হিমাদ্রি শেখর কেশব, সুভাষ সাহা, সাংবাদিক ফেরদৌস খান ইমন, অর্ণব শরীফ, আরিফ হোসেন মুরাদ। শহীদ পরিবারের সদস্যরা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শহীদ পরিবারগুলো কোনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পায়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমারের স্বাক্ষরিত একটি শোকপত্র পেয়েছেন তারা।
মেসেঞ্জার/কেশব/তারেক