ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

বাঁশখালীতে চেয়ারম্যানের চাল চুরি ঠেকালেন সংসদ সদস্য!

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ১২ জুন ২০২৪

বাঁশখালীতে চেয়ারম্যানের চাল চুরি ঠেকালেন সংসদ সদস্য!

ছবি : মেসেঞ্জার

বাঁশখালীতে সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপির নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে এক ট্রাক সরকারি ভিজিএফ চাল জব্দ করা হয়েছে। একই সাথে সরকারি ভিজিএফ চাল আত্মসাতের অভিযোগে ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন সাংসদ।

এদিকে এমপির অভিযানের পর খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার গায়েব করা চাল ফেরত এনে জেলেদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করলেও এ নিয়ে বাঁশখালী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, বুধবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে টায় খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি।

সেখানে আগে থেকেই জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণের কথা ছিল। খানখানাবাদ ইউনিয়নের হাজার জেলের জন্য মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে ৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে চালের বস্তা খোলা শুরু করেন। সংসদ সমস্য চালের বস্তা খোলার আগে সব বস্তা গুণে তারপর বিতরণের কথা বলেন।

এসময় উত্তেজিত জনতার উদ্দেশ্য সাংসদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি বাদী, পরিষদ বিবাদী, ফয়সালা দিবে আদালত।’ এই কথা বলার পর উত্তেজিত জনতা শান্ত হন।

বিষয়ে সাংসদ মুজিবুর রহমান তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইলে পরিষদের পক্ষ থেকে তারা তাৎক্ষণিক কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এসময় এমপি মুজিবুর রহমান জেলের চাল আত্মসাতের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সেখানে ট্রাক ভর্তি টন চাল জব্দের নির্দেশ দেন। পরে সেগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়।

এসময় জনসমুক্ষে সব বস্তা গুণার পর ১৬ টন চাল কম পাওয়া যায়। অপরদিকে খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দারের কাছ থেকে চাল বুঝে পাওয়ার রশীদ চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

বিষয়ে সাংসদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি ওখানে কাউকে হেনস্তা করার জন্য যাইনি। জনসাধারণের অধিকার আদায়ে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য গিয়েছি। সেখানে গিয়ে চালের বস্তা গণনা করে ২৬ টন চাল কম পেয়েছি। এই অনিয়মের পর সারা বাঁশখালীর সব ইউপি চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছি, আমার অনুপস্থিতিতে চাল বিতরণ না করার জন্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খানখানাবাদ ইউনিয়নের হাজার জন জেলের জন্য গত জুন ত্রাণ দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬ টন অর্থাৎ ১৪৫৫ বস্তা চাল বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়। ৫৬ টনের বরাদ্দটির চেয়ারম্যান করা হয় খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দারকে।

সেই স্বারক অনুসারে গত জুন বাঁশখালী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ জহিরুল হক স্বাক্ষরিত বিলি আদেশে জুন চাঁনপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিপু চন্দ্র দাশ স্বাক্ষর করেন।

ওই বিলি আদেশে (ডিও) স্বাক্ষর করে চালগুলো বুঝে নেন খানখানাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার। ওইদিন প্রকল্পের চেয়ারম্যান হিসাবে ৫৬ টন চাল জসীম উদ্দিন হায়দারের জিম্মায় চলে যায়।

খানখানাবাদ ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, খানখানাবাদে হাজার পেশাদার জেলে নেই। সব চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয়-স্বজন অনুগত লোক। যদিও প্রকৃত জেলেরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা ৩৫ টন। সেখানে ৪০ টন চাল ১০ তারিখ রিসিভ করে পরিষদে নিয়ে আসা হয়। বাকি ১৬ টন চাল বুধবার আসার কথা। ভোরে এমপি মহোদয় ঘটনাস্থলে যখন আসেন তখনও একট্রাক চাল খাদ্যগুদাম থেকে খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে আসে।

তিনি জানান, ৫৬ টন চাল বুধবার সারাদিন বিতরণ করা হয়েছে। চাল আত্মসাৎ কিংবা চাল চুরির প্রশ্নই আসে না। একটি মহল এমপি সাহেবকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের হয়রানি করছে’।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘আমি থানার দায়িত্বে আছি। বাঁশখালীতে কি হয়েছে আমি অবগত নই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলেও জানান খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহির’।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘খানখানাবাদ ইউনিয়নে চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন।

চাল বিতরণের সময় পুলিশী সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমার পুলিশ সবসময় সেই সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। চাল আত্মসাৎ কিংবা কোন অনিয়ম সংশ্লিষ্ট দফতর থানা পুলিশকে জানালে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব’।

মেসেঞ্জার/বেলাল/আপেল