
ছবি: মেসেঞ্জার
ভারতের চেরাপুঞ্জি ও গতরাতে সুনামগঞ্জে অস্বাভাবিক অব্যাহত বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি আসছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদী দিয়ে। ফলে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি প্রবেশ করছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায়। প্লাবিত হতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল।
এছাড়াও জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলার অন্তত শতাধিক অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টিপাত আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সবাইকে নিরাপদে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
সোমবার (১৭ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, শহীদ আবুল হোসেন রোড, আরপিননগর, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, ডিএস রোড, ষোলঘর, সবজি বাজার, শান্তিবাগ সহ বিভিন্ন সড়কে পানি উঠেছে। অনেকের দোকানর জিনিসপত্র ভিজে গেছে। ভোর থেকেই দোকানের মালামাল উপরে তোলা অথবা স্থানান্তর করছেন দোকানীরা। কোনো কোনো বাসায় প্রবেশ করেছে পানি
সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালীকৃষ্ণ পাল বললেন, জলাবদ্ধতা দূরিকরণের জন্য প্রথমে ক্লিনিং করতে হবে। ড্রেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। কামারখাল ড্রেন সুনামগঞ্জ শহরের মূল ড্রেন, এটা সচল রাখতে হবে। আমরা সচল রাখার ব্যবস্থা করছি- অনেক জায়গা পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে- সে সব এলাকার জলাবদ্বতা দূর করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অচিরেই ড্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কিছু কিছু জায়গায় পানি বৃদ্ধি পেলেও খুব বেশী বৃদ্ধি পাবে না। স্থিতিশীল অবস্থায় বেশী থাকবে। বর্তমানে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে পানির লেভেল ৮ মিটার, অর্থাৎ বিপদসীমার ২০ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি। গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণেই মূলত নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার ৩০ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুনামগঞ্জের বন্যা হয় চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাতের উপর। গত ২৪ ঘন্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১২৬ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেহেতু বৃষ্টি ২০০ মি.মি নিচে সেহেতু আমাদের জন্য ঝুঁকির নয়। আমাদের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এজন্য মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল। আজ সুনামগঞ্জ সদর ও পৌরসভার কিছু নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে ভোর রাতের দিকে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি কমতে শুরু হয়েছে। আগামী তিনদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।
মেসেঞ্জার/দিশা