
ছবি : মেসেঞ্জার
পুলিশের গুলিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ, ফল ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলাম মিরাজ এবং শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির নিহতের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি পুলিশ কমিশনার, সাবেক এমপি ববিসহ স্থাণীয় আওয়ামীলী ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের নামে মামলা করা হয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) রংপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতের বিচারক রাজু আহমেদের কাছে পৃথকপৃথকভাবে এই মামলা দায়ের করা হয়। বিচারক মামলা ৩ টি গ্রহণ করে তাজহাট এবং কোতয়ালী থানায় ট্রিট ফর এজাহার এফআইআর গ্রহণ করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।
আদালত থেকে পাওয়া তথ্য মতে, পুলিশের গুলিতে নিহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের সাবেক আইজিপি, ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ ১৭ জনের নামে মামলা করেছেন সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।
এই মামলার আইনজীবি রায়হান কবির জানান, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১ নং আসামী করা হয়েছে তাজহাট থানার বরখাস্ত হওয়া এএসআই সৈয়দ আবু তাহেরকে।
এছাড়াও এই মামলায় আসামী করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনেস্টবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতি ভুষণ রায়, ওসি রবিউল ইসলাম, মহানগর পুলিশের কোতয়ালী জোন এসি আরিফুজ্জামান, পরশুরাম জোন এসি আল ইমরান হোসেন, ডিসি (ক্রাইম), রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার রায়, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, লোক প্রশাসন বিভাগের আসাদুজ্জামান মন্ডল, প্রক্টর অফিসের কর্মচারী রাফিউল হাসান রাসেল, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান, ডিআইজি আব্দুল বাতেন এবং আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে।
তিনি জানান, মামলাটি গ্রহন করে তাজহাট থানা পুলিশকে ট্রিট ফর এজাহার এফআইর হিসেবে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছে।
গত ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হনর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এ ঘটনার পর কোটা আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।
অন্যদিকে, একই আদালতে বেলা ১২ টায় রংপুর মহানগর পুলিশের সদস্য কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের ৭ কাউন্সিলর, সাবেক মহিলা এমপি নাসিমা জামান ববি স্থানীয় আওয়ামী লীগের ২১ নেতাকে আসামি করে ফল ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম মিরাজ নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করেছেন তার মা আম্বিয়া খাতুন।
এই মামলার আইনজীবি শেখ মেজবাহুল মান্নান জানান, ১৯ জুলাই বিকেলে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচার গুলিতে শহীদ হন ফল ব্যবসায়ি মেরাজুল। ওই ঘটনায় মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার পাল, এসি ইমরান হোসেন, এসি আরিফুজ্জামান, ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মামুন, কোতয়ালী থানার এসআই গনেশ চন্দ্র, মজনু মিয়া, সাবেক মহিলা এমপি নাছিমা জামান ববি, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, শাহজাদা আরমান, শাহাদত হোসেন, হারুণ অর রশিদ, জাহাঙ্গীর আলম তোতা, মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি রমজান আলী তুহিন, জেলা যুবলীগের সভাপতি বাবু লক্ষিণ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিক রনি, জেলা যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, মহানগর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, যুবলীগ নেতা নেংরা মামুন, আওয়ামীলগি নেতা নবিউল্লাহ পান্নাকে।
এই আইনজীবি জানান, মামলাটি গ্রহন করে আদালতের বিচারক কোতয়ালী থানায় এজহার হিসেবে গন্য করে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা চাই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাতকারী এসব অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
এদিকে, পলিটেকনিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্র, আইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের উর্ধতন ৬ কর্মকর্তা, ৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংঠনের ৪০ নেতাকে আসামী করে মামলা করেছেন তার পিতা আব্দুর রহমান।
এই মামলার আইনজীবি মাহমুদুল হক সেলিম জানান, গত ১৯ জুলাই রাজা রামমোহন মার্কেট এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্বিচারগুলিতে শহীদ হন আব্দুল্লাহ আল তাহির। এ ঘটনায় প্রধান আসামী করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
এছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিছুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডিআইজি আব্দুল বাতেন, মহানগর পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি উৎপল কুমার রায়, এডিসি ডিবি নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতয়ালী থানার ওসি মোন্তাসির বিল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক দেলোওয়ার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগ আহবায়ক একেএম ছায়াদাত হোসেন বকলু, যুগ্ম আহবায়ক মাজেদ আলী বাবলু, আইনজীবি সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রামানিক, মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সাবেক মহিলা এমপি নাছিমা জামান ববি, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, শাহজাদা আরমান, শাহাদত হোসেন, হারুণ অর রশিদ, জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ইদ্রিস আলী, মহানগর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, জেলা যুবলীগ সভাপতি লক্ষিন চন্দ্র দাস. সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি নাসিম আহমেদ ছনু, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মানিক, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি শাহজাহানুর ইসলাম সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাব্বির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তানিম আহসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আরিফ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ সদস্য মামুনের নাম উল্লেখ করে আমরা মামলা দিয়েছি।
এছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জন ছিলেন। এই আইনজীবি জানান, আমরা ন্যয় বিচার পাবো। আমরা চাই দ্রুত আসামীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচারের দাবি জানান।
মেসেঞ্জার/মাজহারুল/আপেল