ঢাকা,  রোববার
১৩ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

চাটমোহরে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

৫ হাজার বিঘা জমির আবাদ ব্যাহত

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাটমোহরে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

ছবি : মেসেঞ্জার

পাবনার চাটমোহরে বড়াল নদের সাথে সংযুক্ত সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট, ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। শুধু কী তাই, পৌরসভার বাসাবাড়ির বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে সেই খালে। এতে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালটি।

বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় ৫টি বিলের প্রায় পাঁচ হাজার বিঘা জমির ফসল উৎপাদন। কৃষক এবং স্থানীয়রা মানববন্ধনসহ উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন। এতে ক্ষোভ বেড়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চাটমোহর পৌর সদরের নতুন বাজার এলাকায় সরকারি আরসিএন এন্ড বিএসএন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খালটি। যা বড়াল নদের সাথে সংযুক্ত করেছে স্থানীয় ৫টি বিলকে। বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়েই পানি চলাচল করতো। চলতো ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। মৎস্যজীবিরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে নানা ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করতের। কিন্তু বর্তমান চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই; এখানে কোনো খাল ছিল বা আছে!
 
সরকারি এই খালের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, কংক্রিটের ব্রিজসহ নানা স্থাপনা। সাবেক এক সেনা সদস্য বাড়িতে আসা যাওয়া করার জন্য নিজ অর্থায়নে তৈরি করেছে কংক্রিটের ব্রিজ! নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা ইচ্ছামতো দখল করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের।

পানির অভাবে ঊর্বর কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না কৃষকরা। খালের ওপর দোকান করা সিদ্দিকুর রহমান, মানিক শিকদার ও নুর হোসেনসহ অনেকেই বলেন, অবৈধ জেনেও আমরা ক্যানেলের ওপর দোকান করেছি। সবাই করছে দেখে আমরাও করেছি। কেউ অনুমোদন নেয় নাই। আমরাও নেই নাই। সরকারি জায়গার যে যেরকম পারছে দোকান করছে।

সাদী হাসান নামের আরেক দখলদার বাড়ি ও মুরগীর খামার করেছেন খালের মধ্যে। খামারের সব বিষ্ঠা ও ময়লা আবর্জনা খালের মধ্যেই ফেলেন। তিনি বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকতে খালের ওপর দোকান করেছেন। সেটা আর ভাঙা হয়নি। সবাই যেভাবে করেছে, আমিও সেটাই করছি। এছাড়া সাড়োরা গ্রামে আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তি তার বাড়ির সামনে খালের মধ্যে মাটি দিয়ে ভরাট করে উঠোন বানিয়েছেন। তিনি সবাইকে জানিয়েই মাটি ভরাট করেছেন বলে দাবি করেন।

স্থানীয় কৃষক মুকুল সরকার ও আনোয়ার হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমে বড়াল নদের পানি এই খাল দিয়ে স্থানীয় রামের বিল, সাঁড়োরা বিল, জবেরপুর বিলসহ পাঁচটি বিলে চলাচল করায় ফসল উৎপাদন বেশি হতো। দেশী মাছ ছিল প্রচুর। কিন্তু বর্তমানে দখল ভরাটের কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার বিঘা জমির ফসল উৎপাদন। পানিশূণ্য বিলে মাছ নেই। মৎসজীবিরা কষ্টে আছেন। কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছে না পানির অভাবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী। এছাড়া বাপার পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মানববন্ধন সমাবেশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। খালের সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। খালের জায়গা কতটুকু, ব্যক্তির জায়গা কতটুকু, তা নির্দিষ্ট নয়। তাই খালের সীমানা চিহ্নিত করার পর আইনী প্রক্রিয়ার দিকে আমরা আগাবো।

মেসেঞ্জার/পবিত্র/আজিজ