ছবি : সংগৃহীত
তীব্র রোদ ও ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম। সেই সাথে সীমাহীন লোডশেডিং। এতে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন চাটমোহর উপজেলার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরা। বাদ যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরাও। হাসফাস অবস্থা চারিদিকের সাধারণ মানুষের। তবে পৌর শহরে কিছুটা কম হলেও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকঝে না ঘন্টার পর ঘন্টা। সারাদিনে ৮/১০ বার বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার লুকোচুরি খেলা চলছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে চাটমোহর উপজেলা গঠিত। কৃষিপ্রধান এলাকা হিসেবে চলনবিল অধ্যুষিত এই উপজেলায় বরাবরই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি। এই উপজেলায় পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার আশেপাশের উপজেলা থেকে অনেক বেশি। কিন্তু মাসখানেকের অধিক সময় ধরে এই উপজেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। দিনে ও রাতে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং! এতে তে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
গভীর রাতে পৌরশহর সহ উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামগুলো বিদ্যুৎহীন থাকছে! গ্রামগুলোতে একবার বিদ্যুৎ গেলে আসছে ২/৩ ঘন্টা পর। বিদ্যুৎহীন থাকার কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। অসহনীয় গরম এবং তীব্র লোডশেডিংয়ে ঘা ঘেমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ঘামে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের ফটোস্ট্যাট মেশিন, বাসাবাড়ির টিভি-ফ্রিজ, কম্পিউটার থেকে শুরু করে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন খামার মালিকরা। নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠা বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি খেলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে, পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন চাটমোহর উপজেলায় পিক আওয়ারে (রাতের বেলায়) বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯২ মেগাওয়াট। কিন্তু সেখানে ওই সময় পাওয়া যাচ্ছে ৭০ মেগাওয়াট। অপরদিকে, অফপিক আওয়ারে (দিনের বেলায়) বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৪৮ মেগাওয়াট। মূলত এই কারণেই বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে বলে দাবি করেন পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা।
হরিপুর গ্রামের আজিজুল হক নামের এক ব্যক্তি যুগান্তরকে জানান, দিনে-রাতে মিলিয়ে ৮/১০ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। থাকছে না ঘন্টার পর ঘন্টা। আমার একমাত্র ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। রাতে গরমের কারণে ঘুমাতে পারে না সে। আবার স্কুলেও ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে শরীরে ঘাম বসে কাশি হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। পৌর শহরের বাসিন্দা রনি রায় যুগান্তরকে বলেন, বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা আছেন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার কারণে তীব্র ঘামে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ থাকে না ঘন্টার পর ঘন্টা। স্বস্তিতে ঘুমাতেও পারছি না কেউ-ই। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।
জানতে চাইলে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার শফিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় কিছুটা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমি হেড অফিসে এসেছি। এসব বিষয় নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মেসেঞ্জার/পবিত্র/আজিজ