ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৯ জুন ২০২৫

The Daily Messenger

টাঙ্গাইলের হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে দেখা মিলল বিরল ৫টি চিত্রা হরিণ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি   

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলের হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে দেখা মিলল বিরল ৫টি চিত্রা হরিণ

ছবিঃ মেসেঞ্জার

টাঙ্গাইলে মধুপুর লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে দীর্ঘ ৫৮ বছর পর দেখা মিলল ৫টি চিত্রা হরিণের। প্রায় সাড়ে ২৭ একর জায়গা জুড়ে হরিণের পদচারণায় লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন ৭০ থেকে ৭৫ টি হরিণ আছে প্রজনন কেন্দ্রটিতে। 

স্থানীয়রা বলেছেন সঠিক নজরদারি থাকলে এত বছরে হরিণের সংখ্যা দাড়ানোর কথা হাজারের বেশি। 

জানা যায়, জেলার মধুপুরে ১৯৬৬ সালে জাতীয় উদ্যানে লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সাড়ে ২৭ একর জায়গায় নিয়ে গড়ে উঠে দুই জোড়া প্রাপ্ত বয়স্ক হরিণের যাত্রা। এতে প্রায় ৫৮ বছর পেরিয়ে পাকা বেষ্টনি ঘেরা এই পরিসরে হরিণের দেখা মেলা যেন বিশাক ব্যাপার। 

সাজেদুল ইসলাম রনি বলেন, হরিণ বাড়ে না কমে, সেটিই তো বুঝা দায়। সকাল বিকেল দুবেলা খাবার দেয়। তখন চার থেকে পাঁচটা হরিণ আসে খাবারের জন্য। যত বারই খাবার দেয় তত বারই ঐ চার থেকে পাঁচটা হরিণ আসে। এতে কর্মকর্তারা বুঝায় ধাপে ধাপে হরিণ খাবারের জন্য আসে। যত ধাপই আসুক না কেন ঘুরে ঘুরে ঐ চার পাঁচটাই আসে। 

তিনি আরও বলেন, হরিণ নিয়ে কুমিরের গল্প বুঝায়। শিয়াল পন্ডিতের কাছে কুমিরের চারটি বাচ্চাকে লালন পালন করতে দেয়। শিয়াল পন্ডিত কুমিরের  গল্পের মত বুঝিয়ে কর্মকর্তারা বলেন ৭০ থেকে ৭৫টি হরিণ আছে এই উদ্যোনে । 

মধুপুরে জাতীয় উদ্যানে হরিণ দেখতে এসেছি। তবে হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে দিন দিন হরিণ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক ৫ বছর আগে দু চারটি হরিণ দেখেছিলাম। এবারও হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে হরিণকে খাবার দেয়ার সময় খাবার প্রদানকারী একটি শব্দের মাধ্যমে হরিণদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে আসলো যে খাবার দেওয়া হয়েছে। ঠিক দশ মিনিট পরই ছোট বড় মিলে ৪টি হরিণ খাবারের জন্য আসলো। এই হল দেখা।  এই চারটি এর আগেও দেখেছি। যতবারই খাবার দিবে এখানে চার থেকে পাঁচটি হরিণ আসে।এছাড়াও ৫ বছর আগে এখানে অসংখ্য বানর দেখেছি। এখন সে বানরও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি এদের সংরক্ষিত করার জন্য। হরিণসহ পশু পাখী যত বেশি দেখা যাবে  বনের শোভা ততই ভাল থাকবে ।  তিনি আরও বলেন লহরিয়া প্রজনন কেন্দ্রে যে কটি লোকবল আছে আমার বিশ্বাস ততটি হরিণ আছে।

তিনি বলেন, প্রজনন কেন্দ্র্র টিকে রাখার জন্য হলেও দ্রুত হরিণ প্রজননের মাধ্যমে হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন। 

জাঙ্গালিয়া এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে ব্যাপকভাবে নজরদারি করা উচিত। এখানে হরিণে ভরে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে তুলনায় হরিণ বাড়ছে না। যেহেতু হরিণ দামি তাই পাচার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। মধুপুর বন এলাকায় মাঝে মধ্যেই দু চারটি মায়া হরিণ বনের আশে পাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখতে পাই। অথচ হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে  সরকার নির্দিষ্ট লোকবল দিয়েছে হরিণকে সংরক্ষণের জন্য সেখানে হরিণ দেখা মেলাই কষ্ট।  আমাদের বিশ্বাস অসাধু কর্মকর্তা ও শিকারিদের যোগসাজশে পাচার হচ্ছে হরিণ। 

লিটন ও নাছিরুদ্দিন বলেন, গাছাবাডী বিট এলাকায় যাতায়াতরত অবস্থায় মাঝে মধ্যেই মায়া হরিণগুলো দেখতে পাই। হরিণগুলো অনেক সময় ৪ থেকে ৫ টি দলবেধে ছুটাছটি করে। অনেক সময় শিকারীদের হামলায় গরুর গোয়াল ঘরে গিয়ে গরুর সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর ৫০ বছরে ৫০টি হরিণ তৈরি করতে পারে না হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে। 

লিটন বলেন, কিছু দিন আগেও  আমাদের বাড়িতে গরুর গোয়াল ঘরে উঠেছিল। 

তিনি আরও বলেন, বনের ভিতর হরিণ, বনমোরগ ও বানরদের জন্য বিশেষ নজরদারি করার প্রয়োজন। খাবারের সংগ্রহে শতশত বানর রাস্তায় ছুটে আসে। এরচেয়ে বনের ভিতর যে সমস্ত বন্য পশু রয়েছে সেগুলোকে নজরদারি করেন। ৫ বছর পর দেখবেন বন্য পশুর পদচারনায় বনের শোভা বৃদ্ধি একদিকে বনের ভিতর কোন খাবার নাই অন্যদিকে শিকারীদের হামলায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রানী। 

তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের মত মধুপুর গড়ে বন্যপ্রাণীর জন্য খাবার তৈরি ও  শিকারীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। 

লহরিয়া বিটের গার্ড আ. রহিম বলেন, অমাদের কোন প্রকার তথ্য দেওয়া নিষেধ। তাই বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না। এখানে আমরা চারজন দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। আমি আ. রহিম, মানিক,নজরুল ও বিট অফিসার মো. শাহ আলম খান। আমরা চারজন পালাক্রমে সুযোগ বুঝে হরিণদের সকাল বিকেল দুবেলা খাবার দিয়ে থাকি। খাবারের মধ্যে রয়েছে খৈল,কুড়া, ভুষি ও লবন। দুবেলা খাবারের আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ কেজি দেওয়া হয়। এছাড়াও এখানে বানরদের জন্য কোন প্রকার খাবার দেওয়া হয় না। তবে আগে এখানে অনেক দর্শনার্থী আসতো তখন প্রচুর পরিমাণ বানরও আসতো খাবার খেতে।

লহরিয়া বিট কাম হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকতা মো.শাহা আলম খান জানান, কয়েক মাস আগে গণনা করা হযেছে ৮২টি হরিণ আছে। এরপর তার যোগদানের তারিখ জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রায় এক বছর হল। তখন তিনি বুঝে নিয়েছেন ৭২ টি হরিণ। 

টাঙ্গাইল জেলা প্রানীসম্পাদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা.মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি হরিণ গড়ে প্রতিদিন ২ কেজি সবজি খায় এবং ২ লিটার পানি পান করে। খাবারের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া,লাউ শাখ ও কলা বেশি পছন্দ করে। এচাড়াও তারা দানাদার খাবারের মধ্যে থাকে চালের কুড়া,গমের ভুসি। তিনি মনে করেন সঠিক নজরদারি, নিরাপদ পরিবেশ ও সুষম খাদ্যে নিশ্চিত করা গেলে দ্রুত বাড়বে হরিণের সংখ্যা। 

টাঙ্গাইল বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো.আশিকুর রহমান বলেন, মধুপুরে  দুই জোড়া হরিণ নিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর থেকেই অনেক কর্মকতা সেখানে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছে। হরিণ এক বছরে কোন প্রকার গনণা করা হয়নি। আসলে হরিণের সংখ্যা নিয়ে ইদানিং আলোচনা উঠছে তাই আনুমানিক বলা হচ্ছে ৮২টি আছে। লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে ধারনা করা যায় যে ৩০ থেকে ৩৫টি নারী হরিণ রয়েছে।  এরা প্রতি বছরে একটি করে বা”চা দিতে পারে।  তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে গণনা দিবো। তাহলে আসল সংখ্যা পেয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন বনের ভিতর বানরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। যার কারনে বন থেকে বানর এখন লোকালয় এসে গেছে। এরা রাস্তায় ঘাটে খাবারের সন্ধানে বসে থাকে। 

মেসেঞ্জার/ উজ্জ্বল/ সৌরভ