
ছবি : মেসেঞ্জার
টাঙ্গাইলে শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দূর্গোৎসবের দেবীপক্ষ। বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে টাঙ্গাইল পৌর শহরের থানাপাড়া সর্বজনীন মন্দিরে শুভ মহালয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হিন্দু ছাত্র মহাজোট টাঙ্গাইল জেলা শাখার আয়োজনে চন্ডি পাঠের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শুভ মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা।
ভক্তদের অংশগ্রহণে করা হয় দেবী দূর্গার আবাহন। শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন অমরত্ব লাভের মধ্যদিয়ে স্বর্গলোকে মহিষাসুরের অত্যাচার, দেবী দূর্গার আবির্ভাব ও মহিষাসুর বধের কাহিনী।
শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী সুর বেজে উঠেছে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল-তর্পণ করা হয়। পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা। আগামী (৯ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে আগামী (১২ অক্টোবর) দশমী পূজায় সম্পন্ন হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
এবার দেবীর আগমন ঘটবে ‘দোলায়’। শাস্ত্রমতে, দোলায় আগমনের অর্থ পৃথিবীতে মড়ক দেখা দিতে পারে। রোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা হানাহানিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। দেবী গমন করবেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের মৃৎ শিল্পীরা। হাতের নিপুন ছোঁয়া ও রং-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরি দিয়ে গড়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে।
এছাড়া কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা। সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের তারটিয়া পাল পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা শিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরিতে আবার কেউবা রং করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। দিনরাত এর পেছনে সময় ব্যয় করছেন তারা।
প্রতিমা শিল্পীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আগের চেয়ে কাজ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি পারিশ্রমিক। এছাড়াও প্রতিমা তৈরির উপকরণের দামও চড়া। উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে।
প্রতিমা শিল্পী সুমন পাল বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন রকম পরিবেশ চলছে। এ কারণে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে। গতবছর ১০টা মণ্ডপের কাজ করেছি। এবার ছয়টি বানিয়েছি। মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতেই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি।
প্রতিমা শিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছি। রঙের কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমাগুলোকে অলংকার দিয়ে সাজিয়ে পূজারিদের বুঝিয়ে দিয়ে দিব। তিনি আরও বলেন, আমরা আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫৫০-৬৫০ টাকায় কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেত, আর এখন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খড় লাগে।
খড়ের পরিমাণ একই, কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা। তা এখন খরচ হয় এক লাখ টাকার উপরে। প্রতিমা শিল্পী সন্তোষ পাল বলেন, বংশ পরম্পরায় আমি এই মৃৎ শিল্পের কারিগর। আমার বাপ-দাদারা এই কাজ করে গেছেন। এই কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজও তেমন পারি না। বছরের এই সময়ে আমাদের খুব ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর বাকি সময় টুকটাক কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। এবার পরিস্থিতি তেমন ভালো না দেখে ছয়টি প্রতিমা তৈরি করেছি। আমরা ভয়ে ছিলাম এবার পূজা হবে কি না। যে উপকরণ আগের বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছি, সেটা এবার ২৫ হাজার। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতাম, সেটা এখন ২০০-২৫০ টাকা। সেই হারে পারিশ্রমিক যদি বাড়তো, তাহলে পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করতে হতো না।
কারিগর সজীব পাল বলেন, প্রতিমার কাজ শেষ করেছি চারদিন হলো। এখন চলছে রঙ ও সাজসজ্জার কাজ। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রং-বেরঙের শাড়ি, অলংকার ও মাথার মুকুট দিয়ে গিয়েছে। আমরা এখন আস্তে আস্তে সেগুলোর কাজ করতেছি। প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত এক বস্তা মাটির ৫০ কেজির দাম দুই হাজার টাকা সাথে পরিবহন খরচ আছে। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গুণ ঝন্টু বলেন, ইতিমধ্যে পূজা উদযাপন কমিটি ও সর্বদলীয় লোকদের সাথে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের দূর্গা উৎসব সুন্দর ও স্বার্থক হবে আশা করি।
এর মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেছে সারাদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য। কিছু কতিপয় দুষ্কৃতিকারী আমাদের কিছুটা ক্ষতি করার চেষ্টা করতেছে। আমরা সমাজের সব লোক নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পাহাড়ার মাধ্যমে আমাদের দূর্গা পূজা যেনে সুন্দর ও স্বার্থকভাবে সম্পন্ন হয় সেটা আমরা করব।
মেসেঞ্জার/মোস্তফা/তারেক