ছবি : মেসেঞ্জার
কেউ মেরামত করছেন নৌকা। কেউ বুনছেন জাল। আবার কেউ নৌকা ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত। বড় ট্রলারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার নিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা। সুনসান ঘাটগুলো হয়ে উঠছে কর্মচঞ্চল। নদীতে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রোববার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে। রাত ১২টার পর মাছ শিকারে মেঘনা নদীতে নামবেন লক্ষ্মীপুরের প্রায় লক্ষাধিক জেলে।
স্থানীয় জানান, চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছোট-বড় অনেক ঘাট রয়েছে। এইসব ঘাটে রয়ে অসংখ্য নৌকা। এইসব নৌকায় প্রায় ১ লাখ মানুষ মাছ ধরার সাথে জড়িত রয়েছেন। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
সময় শেষ হওয়ায় রোববার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন এসব জেলে। এতে জেলেপল্লিতে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশে। ঘাটে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। সকাল থেকে বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে দেখা যায় জেলেরা নদীতে যাওয়ার সবশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে খালের মধ্যে ইঞ্জিন চালু করে ট্রলার চালিয়ে পরীক্ষা করে নিচ্ছেন। বড় বড় মাছ ধরার ট্রলারগুলোয় নেওয়া হচ্ছে বরফ।
মতির হাট ঘাটের ট্রলারের মাঝি লিয়াকত আলী জানান, রাতে তারা নদীতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ঘাট ছেড়ে যাবেন। এ জন্য নৌকায় খাবার, জ্বালানি তেল ও বরফ নিয়ে নিচ্ছেন। মাছ পাওয়া গেলে আবার তারা ঘাটে ফিরে আসবেন। সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট ঘাটের কয়েকজন জেলে জানান, ২২ দিন বেকার ছিলেন তারা। তাদের আয়-উপার্জন বন্ধ ছিল।
কেউ কেউ অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়লেও অনেকে নিজেদের নৌকা, জাল মেরামতে সময় কাটিয়েছেন। রাত ১২টার সবাই নদীতে নামবেন মাছ শিকারে। এ বছর মৌসুমের প্রথম থেকে ভালো মাছ পাওয়া যায়নি। অনেক জেলে এখনো আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। নিষেধাজ্ঞার পরে নদীতে মাছ পাওয়া না গেলে তাদের পথে বসতে হবে।
রায়পুর উপজেলার আলতাফ মাস্টার মাছ ঘাটের জেলে আফজাল মিয়া জানান, নিষেধাজ্ঞায় বেকার ছিলেন ২২ দিন। কিন্তু দেওয়া হয়েছে কেবল ২৫ কেজি চাল। ছয় সদস্যের পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনতে তাকে টাকা ধার করতে হয়েছে।
তিনি জানান, নৌকায় তিনি ছাড়া আরও ৮ জেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে সরকারিভাবে দেওয়া চাল পেয়েছেন আরও পাঁচজন। অন্য তিনজন কিছুই পায়নি। তাদের এই ২২ দিন দৈনিক মজুরিতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে।
রামগতি উপজেলার ট্রলার মালিক রাজু মিয়া জানান, এখানে গভীর নদীতে গিয়ে মাছ শিকার করার মতো ট্রলার রয়েছে শতাধিক। এসব ট্রলারে করে অসংখ্য জেলে মাছ শিকার করেন। ২২ দিন এসব জেলে পরিবারের ভরণ-পোষণ ট্রলার মালিকদের করতে হয়েছে। এ বছর ট্রলারমালিকেরাও এখনো লাভের মুখ দেখতে পাননি।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। (১৩ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া অভিযান শেষ হবে (৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞা সময়ে নদী, মাছঘাট, আড়ত এবং হাটবাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে মৎস্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে (১৩ অক্টোবর) থেকে (৩ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় মাছ শিকারের দায়ে ৫৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া জরিমানা করা হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে ৬৮৭ কেজি। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে মেঘনায় অভিযান চালানো হয়েছে ২১৩টি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে ১৫টি। অভিযানে জাল জব্দ হয়েছে ১৮ লাখ ৯ হাজার মিটার, এর বাজারমূল্য ২ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজার টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, অভিযানে আটক ৫৯ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। এছাড়া জব্দকৃত জালগুলো পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। তিনি জানান, (৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। তখন জেলেরা আবারও মেঘনায় মাছ শিকারের যেতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, নদীতে ইলিশ সম্পদের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের ২২ দিন মাছ শিকারে বিরত রাখা হয়। এজন্য জেলার ৩৯ হাজার ৭৫০টি কার্ড ধারী জেলে পরিবারের জন্য ৯৯৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা দেয় মৎস্য অধিদপ্তর।
মেসেঞ্জার/শিবলু/তারেক