ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১২ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

সাতক্ষীরার শাহিন বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরবেন উপকূলের কথা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৯ নভেম্বর ২০২৪

সাতক্ষীরার শাহিন বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরবেন উপকূলের কথা

ছবি : মেসেঞ্জার

উপকূল থেকে জলবায়ু নিয়ে কথা বলতে এবার কপ-২৯-এ যাচ্ছেন সাতক্ষীরার জলবায়ু যোদ্ধা শাহিন আলম (২৩)। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে আগামী (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু এই সম্মেলনে শাহিন তুলে ধরবেন জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের ব্যাজ নিয়ে ন্যাচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের (ন্যাকম) অর্থায়নে কপ-২৯ এ অংশ নিতে যাওয়া শাহিন আলম পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস'র ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয়কারী। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

যখনই উপকূলের মানুষ বিভিন্ন দুর্যোগ কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে তখনই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শাহিন। আইলা, আম্ফান, বুলবুল, দানা সহ অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী এই তরুণ জলবায়ু কর্মী হয়ে দৌঁড়ে বেড়িয়েছেন উপকূলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। উপকূলের অবহেলিত কিশোরীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন। এছাড়াও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে শাহিন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ নামে।

উপকূলের অস্বাভাবিক পরিবেশই আমাকে একজন জলবায়ু কর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে ২৩ বছরের এই তরুণ বলেন, উপকূলবাসীর দুঃখ-দুর্দশাকে নিজের মনে করেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছি। কখনো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য খাবার পানি, কখনো শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার কিংবা খেলনাসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি এটা উপলব্ধি করতে পারি যে আমরা নিজেরা একে অন্যের পাশে না দাঁড়ালে কেউ আমাদের পক্ষে লড়বে না।

প্রথমবারের মতো বিশ্ব মঞ্চে নিজের অঞ্চলের মানুষের কথা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। সম্মেলনে কোন কোন বিষয়গুলোকে তুলে ধরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শুধু একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ নয়, বরং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার সংকটের গল্প বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার একটি বিরাট সুযোগ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। এটা এখন বাঁচা-মরার লড়াই। এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সামনে আমাদের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরবো। দাবি একটাই উন্নত দেশগুলো যেন তাদের অতীতের ভুলগুলোর মাশুল আমাদের উপরে চাপিয়ে না দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমাদেরকে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, যা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে আশার আলো দেখাবে। উন্নত দেশগুলোকে তাদের দেওয়া অনুদানের প্রতিশ্রুতি ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে শূন্যে আনতে হবে বলেও জানান তিনি।

নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলের মানুষ পাবে একটু বেঁচে থাকার স্বপ্ন, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হওয়া উপকূলবাসীকে যেন প্রতি দুর্যোগে ঘর ছেড়ে যেতে না হয়, অন্যের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়, শিশুরা যেন ঝরে না পড়ে, তাদের ভবিষৎ যেন সুন্দর হয়, এমনটাই চাওয়া শাহীনের।

এর জন্য সামনের দিনগুলোতেও এ অঞ্চলের মানুষের কাঁধে হাত দিয়ে তাদের এক ভরসাস্থল হয়ে উঠতে কাজ করে যেতে চান বলেও জানান এই ‘উপকূল এক্সপ্রেস’।

মেসেঞ্জার/আসাদ্দুজামান/তারেক