
ছবি : টিডিএম
পটিয়া-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে মহাসড়কের ক্রসিং হতে মনসা বাদামতল পযর্ন্ত সড়কের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। যা চলতি রমজান ও আসছে ঈদে বাড়ী ফেরা মানুষের মাঝে ভোগান্তী অনেকাংশ কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা।
এর আগে, মহাসড়কটির উভয় পাশে ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিটে উন্নীতকরনের জন্য ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি প্যাকেজ এ দরপত্র আহবান করেছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পটিয়া ক্রসিং থেকে উপজেলার বাদামতল পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৬ কিলোমিটার সড়ক ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিট প্রশস্ত করে স্ট্যান্ডার্ড টু লাইনে উন্নীত করা হয়েছে। দশটি বাঁক সরলিকরণের কাজ ও শেষ হয়েছে।
একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে মহাসড়কের পটিয়া মনসা বাদামতল থেকে ইন্দ্রপুলের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত ৫.৮ কিলোমিটার সড়কটিও প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিট প্রশস্ত করে টু লাইনে উন্নীত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এ মহাসড়কটির আরো ১৫ কিলোমিটার অংশে সড়কটি ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিটে প্রশস্ত করে স্ট্যান্ডার্ড টু লাইনে উন্নীত করতে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। বুধবার দরপত্র উন্মুক্ত হওয়ার ফলে আগামী মে মাসে এ তিনটি প্যাকেজের আওতায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ।
দোহাজারী সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজের ৩টি প্যাকেজের কাজগুলো হচ্ছে পটিয়া ইন্দ্রপুল থেকে শ্রীমাই পর্যন্ত, বিজিসি ট্রাস্ট হতে চন্দনাইশের মক্কা পেট্রোল পাম্প পয়র্ন্ত ও মক্কা পেট্রোল পাম্প থেকে সাতকানিয়া মৌলভীর দোকান পর্যন্ত। আগামী মে মাসের মধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণে কাজ শুরু হবে। এছাড়াও সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। ঈদুল ফিতরের আগে পটিয়া-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশ সড়কটি ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিটে প্রশস্ত করে স্ট্যান্ডার্ড টু লাইনের কাজ শেষ হবে।
দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, মহেশখালীতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্টসহ মহেশখালী ও কক্সবাজারে সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। এসব প্রকল্প শেষ হলে পটিয়া-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর যানবাহনের চাপ বাড়বে। যেহেতু সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য জাইকা এখনো পর্যন্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি সেহেতু সড়কটি ১৮ ফিট থেকে ৩৪ ফিটে প্রশস্ত করে স্ট্যান্ডার্ড টু লাইনে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে করে অন্তত যানজট নিরসন হয়ে জনদুর্ভোগ কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণে একটি প্রকল্প জাইকার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে এখনো কোনো ধরনের সম্মতি বা কিছু জানায়নি। সম্মতি দিলে প্রকল্পটি সংযোজন-বিয়োজন করে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে সম্মতি না দিলেও সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হতে পারে। আগামীতে টানেল চালুসহ নানা কারণে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পাবে। তাই বিষয়টি বিবেচনা রেখে চার ধাপে ‘স্ট্যান্ডার্ড টু লেন সড়ক’ নির্মাণকাজ চলছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সড়কটি যানবাহনের বর্ধিত চাপ নিতে পারবে।
এদিকে, দেশের পর্যটন খাতের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দেখতে আসা পর্যটকরা। সেইসঙ্গে চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা বান্দরবান এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন এ মহাসড়ক। বছরজুড়ে এ সড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও সড়কটি এখনো সীমাবদ্ধ দুই লেনেই। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি।
অন্যদিকে, মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চারটি স্থানে ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চন্দনাইশের বরুমতি খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শেষ। পটিয়ার ইন্দ্রপুল, দোহাজারীর শঙ্খ নদী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর তিনটি ব্রিজ নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। নির্মাণ করা হবে ছয় লেনের বাইপাসও। ১৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ মহাসড়ক সম্প্রসারণে এরই মধ্যে চারবার সমীক্ষা চালিয়েছে দেশি-বিদেশি চার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোনো সমীক্ষাই আলোর মুখ দেখেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এ মহাসড়কের পটিয়ার শান্তির হাট, মুন্সেফ বাজার, থানা মোড, ডাকবাংলা, বাস স্ট্যান্ড, দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলীতে যানজট চরম আকার ধারণ করে। কর্ণফুলীর শাহ্ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার দূরত্বের ২০টি পয়েন্টে সড়কের দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে গাড়ির স্ট্যান্ড, গ্যারেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর ৯টি পয়েন্টে বসে নিয়মিত হাটবাজার। এ অংশের সড়কে ৪৫টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। ফলে সড়কটিতে রীতিমতো যানজট সৃষ্টিসহ দুর্ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির পটিয়া মইজ্জার টেক, পটিয়া-আনোয়ারা ক্রসিং টেক, মনসার টেক, বাদামতল টেক, পটিয়া পোষ্ট অফিস টেক,গৈরালার টেক, আঞ্জুরহাট টেক, পটিয়া পোষ্ট অফিস টেক, আদালত গেইট মোড়, থানা মোড় ডাকবাংলা মোড়, কমলমুন্সির হাট টেক মিলে ২০টি পয়েন্টে এবং চন্দনাইশ থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত ২০টির অধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
এছাড়াও পটিয়ার শান্তির হাট, মুন্সেফ বাজার, থানা মোড, ডাকবাংলা মোড, বাসস্ট্যান্ড, রওশনহাট, বাগিচার হাট, কমল মুন্সির হাট, চক্রশালা, হাসিমপুর, আমজুরহাট, দোহাজারী বাজার, মৌলভীর দোকান, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, ঠাকুরদিঘী, লোহাগাড়া পদুয়া তেওয়ারীহাট, বটতলী, আধুনগর বাজার ও চুনতি, পটিয়া মুন্সেফ বাজারের রাস্তার দু’পাশে অবৈধ দোকানপাট, যত্রতত্র গাড়ি রাখা, গাড়ির গ্যারেজ ও বাজার বসার কারণে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট দেখা দেয়।
গাড়ি চালক মোজাহেরুল ইসলাম বলেন, পটিয়া-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখল ও যত্রতত্র গাড়ি গাড়ি রাখা হয়। সড়কটি এতো বেশি আঁকাবাকা যে প্রতিনিয়ত অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১ ঘন্টার পরিবর্তে ২ ঘন্টার অধিক সময় লেগে যায়। সড়কটির দু’পাশ অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ সোজা এবং চলমান সড়কের প্রশস্তকরনের কাজ বাস্তবায়ন হলে যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।
টিডিএম/এএস