ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

দুদক পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে চলছে দৌড়ঝাপ

নজরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১০:২২, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

দুদক পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে চলছে দৌড়ঝাপ

ছবি : সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পরিচালক পদে পদোন্নতি নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কারা এবং কতজন পাচ্ছেন পদোন্নতি এই নিয়ে উপপরিচালকদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তদবিরও করছেন বিভিন্ন জন। দৌড়াচ্ছেন উপর মহলে। সেই মহল থেকে পছন্দের প্রার্থীদের পদোন্নতি দিতে কমিশনের ওপর চাপও দেওয়া হচ্ছে। তবে, কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে কোনো চাপই মানা হবে না।

অভিযোগ উঠেছে, অতীতের মতো টাকার বিনিময়ে কেউ কেউ বাগিয়ে নিতে চান পদোন্নতি। গত ২৩ নভেম্বর পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভা ডাকা হয়। ওই দিনই পদোন্নতি কমিটি সুপারিশ করার কথা ছিল। কিন্তু, আগামী ২৮ নভেম্বর পুনরায় সভা ডাকা হয়েছে। সেজন্য পদোন্নতির সুখবর শোনার অপেক্ষার প্রহর আরো বাড়লো।

পরিচালক পদে পদোন্নতিযোগ্য ৫৯ জন উপপরিচালকের জ্যেষ্ঠতাভিত্তিক নামের চূড়ান্ত তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ১-৬ ক্রমিকের ডিডিরা ৯৫ ব্যাচের, ৭-২১ ক্রমিকের ডিডিরা ৯৪ ব্যাচের, ২২-৩৩ ক্রমিকের ডিডিরা সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ব্যাচের এবং ৩৪-৫৯ নম্বর ক্রমিকের মধ্যে দুইজন বাদে বাকি ডিডিরা ২০১১ ব্যাচের।

তবে, মানবসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক পদে পদোন্নতিযোগ্য উপপরিচালক রয়েছেন ৪৯ জন। কারণ, কারও কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। বরখাস্তও হয়েছেন একজন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ডিপিসি কমিটির সুপারিশই চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন। পদোন্নতির ক্ষেত্রে চুজ অ্যান্ড পিক যেন না হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন পদোন্নতি প্রত্যাশীরা।

দুদক চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে হলে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (নবম গ্রেড) হিসেবে ১২ বছর চাকরির মেয়াদ পার হতে হয়। আর উপপরিচালক পদে কমপক্ষে ৩ বছর পার করতে হয়। পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে পদোন্নতিই প্রথম ধাপ হিসেবে রাখা হয়েছে। আর পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রেষণে বদলির মাধ্যমে এবং প্রেষণে যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালক পদে পদায়ন করা যাবে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে গোলাম ফারুক, মোহাম্মদ জহিরুল হুদা, এস এম শাব্বির হাসান, নাছির উদ্দিন, খান মো. মিজানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ চাকরিতে যোগ দেন। ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি তারা উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। তাদের মধ্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গোলাম ফারুক অবসরে যাবেন।

১৯৯৪ সালের মে মাসে যোগ দেওয়া রফিকুজ্জামান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মোনায়েম হোসেন, মলয় কুমার সাহা, তালেবুর রহমান, আব্দুল মাজেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবুল হোসেন, এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা, মোজাহার আলী সরদার, জালাল উদ্দিন আহমদ, আনোয়ারুল হক ও সেলিনা আখতার ২০১২ সালের মার্চ মাসে, সৈয়দ তাহসিনুল হক ২০১৩ সালের জুন মাসে এবং রেভা হালদার ২০১৪ সালের জুন মাসে ও মাহবুবুল আলম ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে এবং মাহফুজা খাতুন ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। তাদের মধ্যে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোহাম্মদ ইব্রাহিম অবসরে যাবেন।

পিএসসির লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় পরিদর্শক পদে তখনকার দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে যোগ দেওয়া এই কর্মকর্তারা ২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় সহকারী পরিচালক (এডি) পদে পদোন্নতি পান।

মন্জুর আলম ও হেলাল উদ্দিন শরীফ ১৯৮৭ সালে, রফিকুল ইসলাম ও আলী আকবর ১৯৮৯ সালে, আবুবকর সিদ্দিক ১৯৮৪ সালে, দেওয়ান শফিউদ্দিন আহম্মদ ১৯৮৫ সালে এবং ১৯৯১ সালে ফজলুল হক, অজয় কুমার সাহা, নূরুল হুদা ও রিজিয়া খাতুন চাকরিতে যোগ দেন। তাদের মধ্যে মন্জুর আলম, হেলাল উদ্দিন শরীফ, রফিকুল ইসলাম, আবুবকর সিদ্দিক এবং ফজলুল হক ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে এবং অন্যরা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। তাদের মধ্যে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি আবুবকর সিদ্দিক, ৪ ফেব্রুয়ারি আলী আকবর, ৩০ এপ্রিল  দেওয়ান শফিউদ্দিন আহম্মদ ও ১২ মার্চ অজয় কুমার সাহা অবসরে যাবেন।

১৯৯১ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া এস এম রাশেদুর রেজা ২০১৯ সালের আগস্ট এবং আব্দুস সালাম আলী মোল্লা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। আব্দুস সালাম আলী মোল্লা আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন।

প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (নবম গ্রেড) হিসেবে ২০১১ সালে কমিশনের প্রথম ব্যাচ হিসেবে এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন, মাসুদুর রহমান, মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, কামরুজ্জামান, মশিউর রহমান, ফারজানা ইয়াসমিন, ফারুক আহমেদ, সেলিনা আকতার মনি, জাহাঙ্গীর আলম, জাকারিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, আবু হেনা আশিকুর রহমান, নাজমুল হাসান, মুহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজুল ইসলাম, দেবব্রত মন্ডল, নুর-ই-আলম, নাজমুচ্ছায়াদাত, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সালাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ফয়সাল, সুমিত্রা সেন ও শাওন মিয়া সহকারী পরিচালক পদে চাকরিতে যোগ দেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ ফয়সাল, সুমিত্রা সেন ও শাওন মিয়া ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং বাকিরা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ডিএডি পদে যোগ দেওয়া ১৯ জন ২০১৯ সালে এডি পদে পদোন্নতি পান। তারা আগামী জানুয়ারিতে ডিডি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।

চাকরি বিধিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৩ নম্বর বিধিতে নিয়োগ পদ্ধতিতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৬ (৪) ধারামতে এবং তফসিলে বর্ণিত বিধান প্রতিপালন সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে শূন্য হইয়াছে এইরূপ কোনো পদে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে নিয়োগদান করা যাইবে : (ক) সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে; (খ) পদোন্নতির মাধ্যমে; (গ) প্রেষণে বদলির মাধ্যমে; এবং (ঘ) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে। একই অধ্যায়ের ৮ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে, (ক) প্রেষণের সময়কাল, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া তিন বৎসরের অধিক হইবে না; (খ) মাতৃসংস্থার চাকুরীতে কর্মকর্তার পূর্বস্বত্ব থাকিবে এবং প্রেষণের সময়কাল শেষ হইবার পর অথবা তৎপূর্বেই ইহার অবসান ঘটিলে তিনি মাতৃসংস্থার চাকুরীতে প্রত্যাবর্তন করিবেন।

মেসেঞ্জার/দিশা