ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স ভবনের ১৫৮টি দোকান বা স্পেস বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু, দুই বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক এসএম রাশেদুর রেজা।
তদন্ত শেষ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রোববার (২৬ নভেম্বর) উপপরিচালক এসএম রাশেদুর রেজা দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, আমি বদলি হয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে চলে এসেছি। এই বিষয়ে কিছু জানি না।
মামলায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটির সোপটেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুলশান-১ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জিয়াউল আহসান, ঢাকার বারিধারার গোলাম মোস্তফা কামাল ও মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স ভবনের সাবেক প্রধান প্রশাসক মাহমুদ পারেভেজ জুয়েলকে আসামি করা হয়।
গোলাম মোস্তফা কামালের গ্রামের বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়।
এজাহারে বলা হয়, তারা তিনজন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের স্পেস বরাদ্দ ও সালামি চুক্তি সম্পাদনে একমাত্র বৈধ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ এস এম আলাউদ্দিন। কিন্তু, জিয়াউল আহসান ১০১টি ও গোলাম মোস্তফা কামাল ৪৯টি দোকান/স্পেস বরাদ্দপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তারা দুজনই কোনো সালামি চুক্তি সম্পাদন করেননি। আলাদাভাবে আরও আটটিসহ মোট ১৫৮টি দোকান কোনো বরাদ্দপত্র বা সালামি চুক্তি ছাড়াই গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স ট্রাস্টের পক্ষে সাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহমুদ পারেভেজ জুয়েল স্বাক্ষর করে বরাদ্দ দিয়েছেন, যা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে বলা হয়েছে, ঢাকার রামপুরার ডিআইটি রোডের মেসার্স দি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড আল-হোসাইন ম্যানশনকে গুলিস্তান কমপ্লেক্সের ০.৬১৪ একর জমির ওপর ‘নির্মাণ ও হস্তান্তর’পদ্ধতিতে ২০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আলাউদ্দিনের সঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষে মহাব্যবস্থাপক খন্দকার ফজলুল হক ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মূল চুক্তিপত্র ও ২০০৬ সালের ২৬ জুলাই সম্পূরক চুক্তি সম্পাদন করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলে। দুটি বেইজমেন্টসহ ১১ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়। তারপর ডেভেলপার কোম্পানি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি নির্বাহী কমিটির ২১তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডেভেলপার কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে নির্মাণকাজের বিষয়ে জানাতে নোটিশ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১০ জুলাই দি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের সঙ্গে সম্পাদিত মূল ও সম্পূরক চুক্তিপত্র বাতিল করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট।
অভিযোগের বিষয়ে গোলাম মোস্তফা কামাল মেসেঞ্জারকে বলেন, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আলাউদ্দিন সারাদিন আমার বাসায় এসে বসে থাকতো। তার কোনো কাজ ছিল না। আমার দুইটা বাড়ি মর্টগেজ দিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর তখনকার প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের মাধ্যমে আমি তাকে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ পাইয়ে দিয়েছি। এই মামলায় সেও তো আসামি হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, আলাউদ্দিনের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদেরকে সরিয়ে দিলে লুটু করতে সুবিধা হয়, সেজন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পার্টনার হিসেবে আমরা সাইন করেছি। আমরা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে জজকোর্টে মানিসুট মামলা দায়ের করেছি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ২৮৪ কোটি টাকা আত্মসাতের একটা মামলা দুদকে চলতেছে।
গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, দুদক মামলা দায়েরের পর আমাদেরকে আর ডাকেনি। মাহমুদ পারেভেজ জুয়েল আমেরিকায় আছেন না ঢাকায় আছেন, আমি জানি না।
গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, আলাউদ্দিন ও জিয়াউল আহসান আমার বাসায় এসে কাজের প্রস্তাব দেয়। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কাজটি আনি। তারপর ২০০৮ সালে যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে তখনই তারা সুর পাল্টে ফেলে। আমাকে ডিরেক্টর করার কথা ছিল, সেটা আর করেনি। এখানকার টাকা নিয়ে সি প্যালেস হোটেল নির্মাণ করেছে।
গোলাম মোস্তফা কামালের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে ওয়েস্টার্ন গ্রুপ, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ও কক্সবাজারের হোটেল সি প্যালেসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আলাউদ্দিনকে কল ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সোপটেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল আহসানকে কল করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও কোনো উত্তর দেননি।
মেসেঞ্জার/দিশা