ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে রক্ষিত নথিপত্রে জালিয়াতি

নজরুল ইসলাম 

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে রক্ষিত নথিপত্রে জালিয়াতি

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে রক্ষিত দুইটি দেওয়ানী মামলার আরজি, রায়, ডিক্রি এবং প্রথম সহকারী জজ আদালত ঢাকার সেরেস্তায় রক্ষিত দেওয়ানী স্যুট রেজিস্টার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। জাল দলিলকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহারও করা হয়। এই ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলা সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি (নম্বর-৪) দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন, জালিয়াতির সুফলভোগী সুফিয়া বেগম, রাজিয়া খাতুন ও শহিদুল্লাহ আব্দুল মজিদ; ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক জেলা রেকর্ড কিপার রুহুল আমিন ভূইয়া, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক জেলা রেকর্ড কিপার হুমায়ুন কবির, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক সহকারী রেকর্ড কিপার বর্তমানে তৃতীয় সহকারী জেলা জজ আদালতের সেরেস্তা সহকারী আবুয়াল আউয়াল, ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ তৃতীয় আদালতের অফিস সহায়ক বিলাল হোসেন, প্রথম সহকারী জজ আদালতের তখনকার সেরেস্তাদার বর্তমানে প্রথম সহকারী জজ (দোহার) আদালতের সেরেস্তাদার তাহমিনা আক্তার, প্রথম সহকারী জজ আদালতের সাবেক সেরেস্তা সহকারী বর্তমানে সেরেস্তাদার কামরুজ্জামান, প্রথম সহকারী জজ আদালতের সাবেক অফিস সহায়ক বর্তমানে তৃতীয় সহকারী জেলা জজ আদালতের অফিস সহায়ক মহসিন আলী।

তারা দ্য পেনাল কোড. ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা দ্য প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে রেকর্ডপত্র অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির সঙ্গে আদালতের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তারা দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনকালে সরকারি রেকর্ড তথা দেওয়ানী ৪৫৫/১৯৮০ ও ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার নথি দুইটির আরজি, আদেশ, রায় ও ডিক্রি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে মূল নথি দুইটি রেকর্ডরুম থেকে সরিয়ে ফেলে। জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি দুইটি নথি প্রতিস্থাপন এবং প্রথম সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তায় সংরক্ষিত স্যুট রেজিস্টারের সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠাটি পরিবর্তন করে ভিন্ন পাতা সংযোজন করে। 

২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে আসামিরা জালিয়াতি করে পরস্পর যোগসাজশে জাল দলিলকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহারও করেছেন।

২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে রক্ষিত দেওয়ানী ৪৫৫/১৯৮০ ও ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার দুইটি আরজি, আদেশগুলো, রায়, ডিক্রি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে মূল নথি রেকর্ডরুমে থেকে সরিয়ে ফেলে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি নথি দুটি প্রতিস্থাপন করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে তখনকার জেলা রেকর্ড কিপার রুহুল আমিন ভূইয়া, জেলা রেকর্ড কিপার হুমায়ুন কবির ও সহকারী রেকর্ড কিপার আবুয়াল আউয়াল এবং অফিস সহায়ক বিল্লাল হোসেন দায়ী বলে রেকর্ডপত্রে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ঢাকা জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে দেওয়ানী ৪৫৫/১৯৮০ ও ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার মূল নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা নথি সংশ্লিষ্ট স্যুট রেজিস্টার প্রথম সহকারী জেলা জজ আদালতের সেরেস্তায় সংরক্ষিত ছিল ও আছে। ৪৫৫/১৯৮০ নম্বর মামলার বাদী একজন এবং বিবাদী দুইজন, যা অভিযোগকারীর দাখিল করা ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল তারিখের স্যুট রেজিস্টারের সহিমোহর নকল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলাটিতে একমাত্র বাদীর স্থলে আরো অন্যান্য এবং বিবাদী ও অপর একজনের স্থলে বিবাদী ও আরো অন্যান্য পরবর্তীতে লেখা হয়েছে। এছাড়া ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার স্যুট রেজিস্টারের সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠাটি পরিবর্তন করে ভিন্ন পাতা সংযোজন করা হয়েছে। এসব ঘটনা সঙ্গে প্রথম সহকারী জজ আদালতের তখনকার সেরেস্তাদার তাহমিনা আক্তার, সেরেস্তাদার সহকারী কামরুজ্জামান, সেরেস্তাদার অফিস সহায়ক মহসিন আলীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। জালিয়াতির কাজের সুফলভোগী যুগ্ম জেলা জজ আরবিট্রেশন আদালতের দেওয়ানী ০৬/২০১৬ নম্বর মামলার বাদী পক্ষ সুফিয়া বেগম, রাজিয়া খাতুন ও শহিদুল্লাহ্ আব্দুল মজিদ। 

আদালতের রেকর্ড রুমের চার জন এবং প্রথম সহকারী জজ আদালতের তিন জন সেরেস্তাদারের হাতের লেখা সিআইডির হস্ত বিশারদ দিয়ে পরীক্ষা করে রেকর্ড রুমে কর্মরত সহকারী রেকর্ড কিপার আবুয়াল আউয়ালের হাতের লেখার সঙ্গে মিলা পাওয়া গেছে। তার পরস্পরা যোগসাজশে জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে রেকর্ডপত্র অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির সঙ্গে আদালতের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তারা দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনকালে সরকারি রেকর্ড তথা দেওয়ানী    ৪৫৫/১৯৮০ ও ৫৫০/১৯৮৫ নম্বর মামলার নথি দুইটির আরজি, আদেশগুলো, রায় ও ডিক্রি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে মূল নথি দুইটি রেকর্ডরুম থেকে সরিয়ে ফেলে জালিয়াতির মাধ্যমে  তৈরি দুইটি নথি প্রতিস্থাপন এবং প্রথম সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তায় সংরক্ষিত স্যুট রেজিস্টারের সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠাটি পরিবর্তন করে ভিন্ন পাতা সংযোজন করেছেন।

মেসেঞ্জার/দিশা