ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

দুদক মামলা দায়েরের আগেই আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন পাউবো প্রকৌশলী শহিদুল

নজরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ০৯:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

দুদক মামলা দায়েরের আগেই আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন পাউবো প্রকৌশলী শহিদুল

ছবি : সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা দায়েরের আগেই অবসরে চলে গেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যান্ত্রিক সরঞ্জাম বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকায়। গত ২৮ নভেম্বর কমিশন সভায় তাদের দুই জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, তার স্ত্রী গৃহিনী আক্তিয়ারা বানুর নামে ১ কোটি ৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকার ও শহিদুলের নামে ২৮ লাখ ২৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক এ কে এম তানভীর আহমেদ দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় দুইটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন।

উপপরিচালক এ কে এম তানভীর আহমেদ কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, মামলা অনুমোদনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। শহিদুল আমেরিকায় চলে যাওয়া বিষয়েও কিছুই জানি না।

পাউবোর মহাপরিচালক এস, এম, শহিদুল ইসলাম মেসেঞ্জারকে বলেন, ‘গত জুনে যান্ত্রিক সরঞ্জাম বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম অবসরে গেছেন। তিনি আমেরিকায় থাকেন।’ শহিদুলের বিরুদ্ধে দুদকে চলা অনুসন্ধান ও মামলা অনুমোদনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

পাউবোর সাবেক এক ডিজি জানান, গত এপ্রিল মাসে শহিদুল ইসলামের স্ত্রীও আমেরিকায় চলে গেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা আরও আগেই আমেরিকায় চলে গেছে। অভিযোগটির প্রথম অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম।

দুদক ও এনবিআর সূত্রে দেখা গেছে, প্রকৌশলী শহিদুল ও তার স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে সোয়া পাঁচ শতাংশ জমি ও বহুতল ভবন এবং মিরপুর ৫৩৫/১ এ যৌথ নামে ৭ তলা বাড়ি (প্রতি তলা ১৯৫০ বর্গফুট) রয়েছে। যদিও সম্পদের দায় এড়াতে ২০২০ সালে তা কন্যাদের নামে দান করে দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে প্রকৌশলী শহিদুলের নামে মিরপুরের সেনপাড়ায় ১৫ শতাংশ জমির মালিকানা রয়েছে। যা তিনি ২০০৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ক্রয়সূত্রে মালিক হয়েছেন।

এছাড়া স্ত্রী আক্তিয়ারা বানুর নামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়ার সেনপাড়ায় ৬ তলা ভবনসহ ৬.৬০ জমি (বাড়ি নং ৮২৭/২/৫) ছিল। যার প্রতিটি ফ্লোর আড়াই হাজার বর্গফুটের। ওই ভবনও ২০১৯ সালে তাদের দুই মেয়েকে দান করেন। প্রকৃতপক্ষে শহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আক্তিয়ারা বানুর অর্জিত সম্পদ মেয়েদের নামে দান করেছেন। এছাড়া আক্তিয়ারা বানুর নামে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ক্রয় সূত্রে প্রায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ জমি মালিকানার অস্ত্বিত্ব পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, তাদের সম্পদের মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম কাজিপাড়ায় দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের ৭ তলা বাড়ি, মিরপুরের মনিপুরে ৬ তলা বাড়ি, দক্ষিণ মনিপুরে সোয়া ৫ শতাংশের ওপর একটি বহুতল ভবন। এছাড়া মিরপুরের সেনপাড়ায় ১৫ শতাংশ জমি ও কুষ্টিয়ায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ জমির মালিকানা রয়েছে তাদের।

প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী দুজনেই খুলনার ভেড়ামারা সার্কেলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের ২০১৯-২০২০ সালের আয়কর নথি অনুযায়ী বছরে তার মোট আয়ের পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৯ লাখ ৮২৮ টাকা। এর মধ্যে গৃহসম্পত্তি থেকে আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। যার বিপরীতে তিনি কর দিয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ টাকা। সম্পদের বর্ণনায় মিরপুরে সাত তলা বাড়ি অর্ধেকাংশ, মিরপুরে সেনপাড়ায় তিনভাগে প্রায় ২০ শতাংশ জমিসহ টিনশেট বাড়ি ও কুষ্টিয়ায় কৃষিজমিসহ মোট ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৫ টাকা মূল্যের সম্পদ। এছাড়া স্ত্রীর কাছে লোন ও ব্যাংক ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন আয়কর রিটার্নে।

অন্যদিকে তার স্ত্রীর ২০১৯-২০২০ সালের আয়কর বিবরণী অনুসারে গৃহ-সম্পত্তি, কৃষি ও ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন বছরে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। যার বিপরীতে প্রদেয় কর ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। সম্পদের মধ্যে রয়েছে মিরপুরর কাজিপাড়ায় ৪ কাঠা জমিসহ ৬ তলা ভবন, মিরপুরে সাত তলা বাড়ি অর্ধেকাংশ, ১০ বিঘা কৃষি জমি ও ৮০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মোট ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকার সম্পদের বর্ণনা দিয়েছে আয়কর রিটার্নে।

মেসেঞ্জার/দিশা