ঢাকা,  শনিবার
০৩ মে ২০২৫

The Daily Messenger

সিএনএনে ড. ইউনূসের মেয়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে নানা প্রশ্ন

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সিএনএনে ড. ইউনূসের মেয়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে নানা প্রশ্ন

মনিকা ইউনূস। ছবি: সিএনএন

ইসরায়েলের হয়ে পক্ষপাতমূলক সংবাদ নীতির কারণে নিজ কর্মীদের তোপে পড়া মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন . মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মার্কিন নাগরিক মনিকা ইউনূস। সময় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বাবার পক্ষে কথা বলেছেন তিনি। এতে দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দণ্ড পাওয়া শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ . মুহাম্মদ ইউনূসকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে লবিংয়ে নেমেছেন তার মেয়ে। সম্প্রতি সিএনএন- দেওয়া সাক্ষাৎকার সেটিরই অংশ।

মনিকা এমন এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যা গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের হয়ে পক্ষপাতমূলক খবর প্রকাশ করায় সম্প্রতি নিজস্ব কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছে। সিএননের নিউজরুম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অভ্যন্তরীণ একডজন মেমো ইমেইল ঘেঁটে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, আটলান্টার হেডকোয়ার্টার থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যমটিতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। নিয়ে সিএনএনের এক কর্মী গার্ডিয়ানকে বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ খবর ইসরায়েলের প্রতি নেটওয়ার্কের  পদ্ধতিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্বে প্রভাবিত এটি সাংবাদিকতার অপব্যবহার।

এদিকে . ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে নানাভাবে চলছে আন্তর্জাতিক লবিং। তাকেআইনি হয়রানিবন্ধ করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন হিসেবে একটি যৌথ বিবৃতি ছাপা হয়েছে। যেখানে  বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটর। এর আগে বিচার বন্ধে এমনই বিজ্ঞাপন আকারে বিবৃতি দিয়েছেন কয়েকজন নোবেলজয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ইউনূসের পরিচিত আছে। আর এসব লবিং, বিবৃতি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিচার বন্ধের আহ্বানকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ হস্তক্ষেপের সামিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সবচাইতে মজাদার বিষয় হলো . ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার জন্য বারবার এই ব্যক্তিদের দেখা গেলেও গাজায় ফিলিস্তিনদের ওপর চলা ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কথাই বলেননি এই বিবৃতি দানকারী অধিকাংশ সদস্য। এমনকি বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কোনো বিবৃতি প্রদান করেননি তারা।

. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মনিকা বলেন, অভিযোগগুলো মূলত তার কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেটা সাধারণভাবে দেওয়ানি আদালতেই নিষ্পত্তি সম্ভব। কিন্তু এগুলোকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অর্থহীন। . ইউনূস তার সহকর্মীরা শতভাগ নির্দোষ। আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞরাও বিষয়টি যাচাই করেছেন। তারাও বলেছেন, এই অভিযোগগুলো 'বানোয়াট'

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনিকা ইউনূস যে কথাটা বলতে চাচ্ছেন, তাতে পরোক্ষভাবে উনি স্বীকার করেই নিয়েছেন যে, এখানে শ্রম আইন লঙ্ঘন হয়েছে। শ্রম আইন ২০০৬ বিধিমালা ২০১৫ আইএলও স্বীকৃত এবং সেখানে ফৌজদারি একটা আলাদা চ্যাপ্টার আছে।

গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের ঋণগ্রস্ত করে তুলছে এবং ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন, এমন অভিযোগগুলোর বিষয়ে সাক্ষাৎকারে মনিকার কাছে জানতে চাওয়া হলে জবাবে তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ সুনির্দিষ্ট একটি মডেল, যা সঠিকভাবে অনুসরণ করা না হলে অন্য যেকোনো জিনিসের মতোই তা ব্যর্থ হতে পারে। অর্থাৎ যারা আত্মহত্যা করেছে তাঁরা নিজেদের ভুলের কারণেই করেছে বলে মত দিয়েছেন তিনি।

এদিকে সাক্ষাৎকারে একাধিকবার . ইউনূস কেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার তা জানতে চাইলেও এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মনিকা।

গত জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী . মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে শ্রম আদালত।

ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা কল্যাণ তহবিলে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ না দেয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার মতো অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।

সাজা পেয়ে শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে ইউনূস। তার বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অনেক মামলা। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলায় ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।

মেসেঞ্জার/আল আমিন