ঢাকা,  রোববার
০৬ জুলাই ২০২৫

The Daily Messenger

দাম কমছে মাছ মাংসের, স্বস্তি নেই সবজিতে

আপেল মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ১৪ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ১৭:১৬, ১৪ জুলাই ২০২৩

দাম কমছে মাছ মাংসের, স্বস্তি নেই সবজিতে

ছবি : টিডিএম

অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে নাকাল সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। হুটহাট দাম বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের। এ নিয়ে ক্রেতাসাধারণের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ।

দীর্ঘদিন পর দুইশো টাকার নিচে নেমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সেইসাথে কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দাম। তবে সবজির বাজারে যেতেই ক্রেতাদের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। সব ধরণের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পরেছে নিম্নআয়ের মানুষ।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল কাঁচা বাজার, কাঠালবাগান বাজার, রামপুরা বাজার ঘুরে দ্রব্যমূল্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র দেখা গেছে।

শুক্রবার সকালে হাতিরপুল কাঁচা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বৃহস্পতিবারও যার দাম ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। একরাতের ব্যবধানে দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির দাম কমায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সার ব্যবসায়ী রহিম শেখ। রহিম শেখের সাথে কথা বললে তিনি ‘দ্যা ডেইলি ম্যাসেঞ্জার’কে জানায়, আমার মতো লোকের গরুর মাংস কেনার মতো সামর্থ্য নেই। গরুর মাংস কিনতে না পেরে আমি ব্রয়লার মুরগি কিনি। কিন্তু গত মাসে সেই মুরগির দামও প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছিল। তখন মুরগিও আর কিনতে পারিনি। কিন্তু এখন মুরগির দাম কমেছে তাই মুরগি কিনতে আসছি।

মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে সব রকম সবজির দাম। কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। যার দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। গাজর বিক্রি হচ্ছে একশো টাকা কেজি। কাঁচা সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম পেঁপে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে হাতিরপুল কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে। এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় ৬০ টাকার কমে বাজারে কোনো সবজি নেই। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুরমুখি।

কোরবানির ঈদের পর বাজারে মাছ ও মাংসের দাম কিছুটা কমলেও সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে কাঁচা মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, ভোজ্যতেল ও চিনি সহ নিত্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের দাম কিছুতেই সাধারণ মানুষের নাগালে আসছে না। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরছেন নিম্নবিত্তরা। দাম বাড়তি থাকায় পকেটের টাকায় তারা কিনতে পারছেন না প্রয়োজনের সব পণ্য।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা ও খোলা পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানোর কথা থাকলেও ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। আগের বাড়তি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

এ বিষয়ে কাঠালবাগান বাজারের ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ ‘দ্যা ডেইলি ম্যাসেঞ্জার’কে বলেন, এখনো নতুন দামের তেল বাজারে আসেনি। কোম্পানি আরও কদিন পর সেগুলো বাজারে ছাড়বে। এখনো পুরোনো তেল বিক্রি করছি, যে কারণে আগের দাম রাখতে হচ্ছে। কোম্পানি দাম বাড়ালে ব্যবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যখন কোনো পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা আসে তখন তা কার্যকর হতে অনেক সময় লেগে যায়। ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকর হতেও এক থেকে দেড় সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

এদিকে খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। গত কদিনের ব্যবধানে চিনির দাম আরও বেড়ে এখন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাওবা ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম রাখা হচ্ছে।

কাঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আদার দাম ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পর্যাপ্ত আমদানির পরও বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

কাঠালবাগান বাজারে কথা হয় ফ্রিল্যান্সার বাপ্পির সাথে। বাপ্পি জানায়, কয়েকটি পণ্যের দাম একদমই নাগালের বাইরে চলে গেছে। এত দামের পণ্য কিনে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পরেছে। অনেক দিন ধরেই আদা ও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। দীর্ঘ সময়েও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। প্রায় হাজার টাকা ছুঁয়ে আসা কাঁচা মরিচের দাম এখনো ৩০০ টাকা কেজি। এটিও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টকর।

বাপ্পি আরও জানায়, এখন ভালো খাবার ছেড়ে সস্তা খাবার খুঁজতে হয়। শুধু চড়া দামের কারণে আমিষ প্রোটিন ভিটামিন জাতীয় খাবার তালিকা থেকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে। বিলাসী পণ্য তো দূরের কথা নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই এখন কিনতে পারছেন না অনেকে। আবার কোনো কোনো পণ্য এত প্রয়োজনীয় যা না হলেও চলে না।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় মাছের দামে কিছুটা স্বস্তি আছে। তাই বেশিরভাগ মানুষই নানানরকম মাছ কিনছে। বিভিন্ন জাতের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সেইসাথে অপরিবর্তিত আছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। দেশি ডিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

কারওয়ান বাজারে হাসান নিটোলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে মাংসের দাম কমেছে। পাশাপাশি কমেছে মাছের দামও। কিন্তু, সবজির দাম বেড়েছে। যেই সবজি গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি কিনেছি সেখানে এখন ৬০ ৭০ টাকা হয়ে গেছে। আলুর দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি। পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন,আদা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।

টিডিএম/এএম