ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চবি সাংবাদিক সমিতির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৪:১৬, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চবি সাংবাদিক সমিতির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ছবি : মেসেঞ্জার

২৭ বছর পেরিয়ে আটাশে পদার্পণ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। বর্ণাঢ্য আয়োজনে 'আটাশে চবিসাস, প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস' স্লোগানে উদযাপিত হয়েছে ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় পদযাত্রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও প্রবন্ধ উপস্থাপন।

চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. বশির আহাম্মদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার ও সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়া।

অনুষ্ঠানে 'সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাংবাদিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ও করণীয়' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবিসাসের দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আজহার।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন চবিসাসের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন মাসুদ, আশহাবুর রহমান শোয়েব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের চৌধুরী ও চুয়েট সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান। উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি ইমরান হোসাইন, সৈয়দ বাইজিদ ইমন, সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন ও যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ রাকীব।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আমীর মুহাম্মদ মুছা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু তৈয়বসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

চুয়েট সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, চবিসাসের প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকায় আজকে এখানে ছুটে এসেছি। চবিসাসের সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের প্রতিবাদ প্রথমেই যেন চুয়েট থেকে আসে এ বিষয়ে আমরা সবসময় আন্তরিক।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের চৌধুরী বলেন, সারাদেশে সাংবাদিকতার একটা বিরাট সংকট দেখা যাচ্ছে। এতো প্রতিযোগিতার মধ্যে পেশা হিসেবে এতে সংকটও তৈরী হয়েছে। দেশের ভালো সাংবাদিকরা ক্যাম্পাস থেকেই গড়ে ওঠেন। এ সংকট যেন খুব দ্রুত কেটে যায়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

চবিসাসের সাবেক সভাপতি আশহাবুর রহমান শোয়েব বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করতে অনেক সাংবাদিকের রক্ত ঝরেছে, যা অন্যকোনো সংগঠনের ক্ষেত্রে ঘটেনি। কিন্তু আমাদের উপাচার্য ইতিবাচক চিন্তা করে সংবাদ করার কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম হিসেবে ইতিবাচক কিছু ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতিবাচক কিছু ঘটলে তা খুঁজে বের করাই সাংবাদিকদের মূল কাজ। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা না করে সহযোগি হিসেবে বিবেচনা করা। তাহলে আপনারা সাংবাদিকদের থেকে ইতিবাচক সহযোগিতা পাবেন। আর সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম তুলে ধরবেন এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।

সাবেক সভাপতি হুমায়ুন মাসুদ বলেন, সাংবাদিকরা কখনো হলুদ সাংবাদিকতা করেন না। যারা হলুদ সাংবাদিকতা করেন তারা সাংবাদিক না। ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে হলুদ সাংবাদিকতা করার সুযোগ কখনই নেই। এ সাংবাদিক সমিতিই বিশ্ববিদ্যালয়কে গত ২৭ বছর ধরে বিশ্বের সামনে ব্র্যান্ডিং করে যাচ্ছে যা আর কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন করতে পারেনি।

'সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩: সাংবাদিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ও করণীয়' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনে সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা অনেকটা জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো। তবে এটা ব্যক্তিগত বিরোধ নয়, পেশাগত বিরোধ। যা সত্যকে তুলে ধরতে গিয়ে তৈরী হয়। এটাই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার বাস্তবতা। স্বাভাবিক অবস্থার ব্যতিক্রম হওয়াটাই হচ্ছে সংবাদ, যা মানুষ জানতে চায়।

তিনি আরও বলেন, ২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে অনেক মানুষকে মামলা দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকায় সরকার চাপের মুখে পড়ে এটি পরিবর্তন করেছে। সাংবাদিকতা বর্তমানে ভেতর ও বাহির থেকে চাপে আছে। আবার বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হয়েছে। এছাড়াও সংবাদমাধ্যমগুলো বিভিন্ন আদর্শে বিভাজিত হয়ে আছে। সংবাদমাধ্যমের মধ্যে কোনো একতা নেই। ফলে সরকারও এমন আইন করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. নূরল আজিম সিকদার বলেন, ১৯৯৬ সালে শুরু হওয়া এ সংগঠনের আজ আটাশ বছর পূর্তিতে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা চাই আপনারা বিশ্ববাসীর কাছে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরবেন। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে তৈরী করতে নিরলসভাবে কাজ করছি। স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার আপনারা। আমরা আপনাদের মতো স্মার্ট সাংবাদিকদের নিয়ে গর্ববোধ করি। আশাকরি আপনারা সাংবাদিকতার সকল মৌলিক গুনে নিজেদের গুণান্বিত করবেন।

জাদুরঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. বশির আহমেদ বলেন, আজকের সংবাদপত্র আগামীদিনে ইতিহাস হয়ে যাবে। একটি সংবাদমাধ্যম, একজন সাংবাদিক অন্য দশজনের মতোই রাজনীতি নিয়ে দলবাজি করতে পারেন না। তবে তাদেরও রাজনীতির অধিকার আছে। সংবাদপত্রে বিভিন্ন সংবাদ আসবে, কিন্তু সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠতা পাঠককে নির্ধারণ করতে হবে৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে যেসকল পত্রিকা বের হতো সেগুলোর ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সেন্সরশিপ আরোপ করেছিল। ফলে কলকাতার সংবাদপত্রগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিন্নধর্মী সংবাদ প্রকাশ করেছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকেন তারা তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য যেসব কৌশল ব্যবহার করেন সেসব রীতি পূর্ব থেকেই চলে এসেছে। বর্তমানে সংবাদমাধ্যমগুলোকে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বলে সংবাদমাধ্যম দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সাংবাদিকতা থেমে যাবে। এখন একটা ক্রান্তিকালীন সময় চলছে। তবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার মাধ্যমে এ পেশাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে এগিয়ে নিতে হবে। আপনারা ভয় নিয়ে বসে থাকবেন না। ভয় শীঘ্রই কেটে যাবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির ২৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দকে দেখে ভালো লাগছে। সাংবাদিকেরা জাতির বিবেক। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই জাতির সম্মুখে তুলে ধরেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সংবাদ পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলতে হবে। আমাদের খারাপ কাজ কতটুকু হয়েছে জানিনা, কিন্তু ভালো কাজের নিদর্শনও কম না। ব্যক্তিকে অপছন্দ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের। তাই ইতিবাচক লেখাগুলোও তুলে ধরতে হবে।

মেসেঞ্জার/জিল্লুর/আপেল