ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

চলচ্চিত্রে নিজের পায়ের ছাপ রেখে চলছেন নির্মাতা সাইফুল ইসলাম

মো : কামরুজ্জামান (মিলু)

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২১:৪৩, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

চলচ্চিত্রে নিজের পায়ের ছাপ রেখে চলছেন নির্মাতা সাইফুল ইসলাম

ছবি : মেসেঞ্জার

সাইফুল ইসলাম মাননু নাট্যকার এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের দর্শক মহলে অতি পরিচিত ও সমাদৃত একটি নাম। আধুনিক নির্মাণ ও গঠনমূলক গল্পের বিন্যাসে নিজের পরিচিতির পাশাপাশি অসংখ্য অভিনেতা-অভিনেত্রীকে প্রতিষ্ঠিত করার কৃতিত্বও রয়েছে তার ঝুড়িতে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘পুত্র’ নির্মাণ করেন। ‘পুত্র’  চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৮ সালে তিনি ১১টি শাখায় জিতে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০২২ সালে ইমপ্রেস টেলিল্ম লি: এর প্রযোজনায় তিনি নির্মাণ করেন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘পায়ের ছাপ’। ‘পায়ের ছাপ’ চলচ্চিত্রের জন্য আবারো তিনি তিনটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ অর্জন করেন। এই মুহুর্তে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। চলচ্চিত্র ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে মুঠোফোন কথা হয় নির্মাতা সাইফুল ইসলাম মানুর সাথে।

প্রথম চলচ্চিত্রে এগারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দ্বিতীয় চলচ্চিত্রে আবার তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।  মাত্র দুটো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ১৪ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। যার মধ্যে ১১ জনই প্রথম বারের মত পুরস্কার পেয়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার গোপন ফর্মুলা মনে হয় আবিষ্কার করে ফেলেছেন এর জাবাবে

তিনি বলেন,  হা হা হা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই জাতীয় কথাটার মধ্যেই কিন্তু গোপন ফর্মুলাটা অন্তর্নিহিত রয়েছে। রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান। আর প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের কিছু দায় থাকে। থাকে দায়িত্ব। বিনোদনের পাশাপাশি যদি সিনেমার মধ্যে সেই দায় এবং দায়িত্বটা তুলে ধরা যায়, তাহলেই হয়ত সেটা পুরস্কারের বিবেচনায় খানিকটা এগিয়ে থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে একজন কাহিনীকার  হিসেবে, একজন নির্দেশক হিসেবে , একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি আমার একটা দায় রয়েছে। সেই দায় এবং দায়িত্বটাই আমি আমার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করি। এটাই হয়ত পুরস্কার প্রাপ্তির অন্তর্নিহিত রহস্য। হাহাহা।

পায়ের ছাপ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ মিউজিক ডিরেক্টরের পাশাপাশি আপনার লেখা গান “এই শহরের পথে পথে আমার পায়ের ছাপ রেখে যাব” শ্রেষ্ঠ সুরকার এবং শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছে। সত্যিই সত্যিইতো আপনি আপনার পায়ের ছাপ রেখে গেলেন।

জবাবে তিনি বলেন,  আমি কোন পেশাদার গীতি কবি নই। ঠিক পারি বলেও মনে হয় না। আমার নিজের নাটক সিনেমার প্রয়োজনে টুকটাক যা একটু গানের কথা লিখি আর কি। আমি আসলেই ভিষন আনন্দিত যে আমার প্রথম চলচ্চিত্র পুত্রতে আমার লেখা গানে কন্ঠ দিয়ে শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমিন আপা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। আবার পায়ের ছাপে আমার লেখা গানের জন্য শওকত আলী ইমন শ্রেষ্ঠ সুরকার এবং আতিয়া আনিসা শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পী পুরস্কার পেয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি আমার জন্য। আর রিপন খান এর পুরস্কারটার মধ্যে আমার অন্যরকম একটা ভালোলাগা আছে। সংগীতের একটি বিশেষ শাখায় উনি গোটা জীবন পার করে দিয়েছেন। একটা রাষ্ট্রীয় স্বিকৃতী ওনার প্রাপ্য ছিলো। পেয়েছেন। আর আমি সেই প্রাপ্তির কারন হতে পেরেছি, মাধ্যম হতে পেরেছি এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! আর পায়ের ছাপ রেখে যাওয়ার কথা বললেন না-। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তা আমাদের অকারন এই পৃথিবীতে পাঠাননি। জন্মের একটা কারন আছে। প্রত্যেকেরই মানুষ হিসেবে জন্ম নেবার মুল মন্ত্রটা খুঁজে বের করে সেই দায়ীত্বটা পালন করা উচিত। পায়ের ছাপ মানে হচ্ছে আপনার কর্ম দ্বারা এই পৃথিবীতে আপনার উপস্থিতির স্বাক্ষর রেখে যাওয়া। যেহেতু আমি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। সেহেতু আমি আমার চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই আমার অস্তিত্ব জানান দিতে চাই। মানে পায়ের ছাপ রেখে যেতে চাই। মরে গিয়েও বেচে থাকতে চাই। ইতিহাস হতে চাই হা হা হা।

- আপনার কাছ থেকে এর পরে আমরা কি পাচ্ছি? মানে আপনার তৃতীয় চলচ্চিত্র? উত্তরে বলেন,  আমার তৃতীয় চলচ্চিত্র অনাবৃত[ unveiled] ইতোমধ্য চলচ্চিত্রটির post production সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই সেন্সরের জন্য জমা দেবো।

- প্রথম সিনেমা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদেরকে নিয়ে, দ্বিতীয় সিনেমা নারি ক্ষমতায়ন নিয়, তৃতীয় সিনেমার বিষয় বস্তু কি?

- তৃতীয় সিনেমার বিষয় বস্তু হচ্ছে মানুষ ও মানবতা। আপাতত এর বেশি কিছু বলতে চাই না।

- ওখানেও নিশ্চয়ই আপনার লেখা গান পাবো আমরা? উত্তরে বলেন,  হ্যা। এ সিনেমারও সব গানের কথাও আমার লেখা। গানগুলোর কথা ভিষন অন্যরকম। আশাকরি সবার ভালো লাগবে।

আপনার সব কাজেই অসংখ্য শিল্পীর সমন্বয় ঘটে। এ সিনেমাতেও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম হয়নি! উত্তরে বলেন, অনেক পরিচালককেই শিল্পী নিয়ে অভিযোগ করতে শুনি। এ বিষয়ে আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। বেশিরভাগ শিল্পীই আমাকে ভালোবাসে, স্নেহ করে। ভিষন যত্ন করে কাজ করে। আর সে কারনেই হয়ত আমার যাকে যখন প্রয়োজন, পেয়ে যাই। হ্যাঁ- এই চলচ্চিত্রেও অনেক শিল্পীর সমন্বয় হয়েছে। সবাই এত ভালো অভিনয় করছে, সত্যিই আমি মুগ্ধ। গল্প, অভিনয়, কারিগরি দিক সব মিলিয়ে এটা সম্ভবত আমার অন্যতম সেরা কাজ।

কবে রিলিজ দেবার কথা ভাবছেন? জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে সেন্সরে জমা দেব। সেন্সরের ছাড়পত্র পেলেই রিলিজ এর তারিখ নির্ধারন করবো।

অনাবৃতে কতগুলো শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আশা করছেন? জবাবে বলেন,  হা হা হা। আশা না বলে স্বপ্ন বললে জবাব দিতে সহজ হয়। দেখুন মানুষতো তার স্বপ্নেই বেচে থাকে। যার কোন  স্বপ্ন নাই সেতো মৃত। আমি জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে থাকতে চাই না। স্বপ্নের পাখায় ভর করে উড়ে উড়ে স্বপ্ন পুরনের পাশাপাশি জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করতে চাই। স্বপ্ন ভঙ্গ হলো আরো দুর্বার গতিতে ক্ষিপ্র ঝড়ের মত ছুটতে চাই। আমি ভাগ্যে যেমন বিশ্বাস করি ঠিক তেমনি ভরসা করি নিজের কর্মে। সবাই মিলে কর্মটা মানে সিনেমা আমরা ঠিকঠাক বানিয়েছি। আমরাতো কর্ম করতে পারি মাত্র, ফলাফল ঘোষনার ক্ষমতাতো একমাত্র তারই হাতে। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির বিষয়টা তার উপরই না হয় থাক। ভাগ্য বিধাতা কাউকে তার যোগ্য প্রাপ্তি থেকে কখনো বন্চিত করেন না। আমাকেও নিশ্চয়ই করবেন না।

মেসেঞ্জার/আপেল