ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

মেঘের রাজ্যে ‘মিরিঞ্জা ভ্যালী’  

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা-আলীকদম (বান্দরবন)

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

মেঘের রাজ্যে ‘মিরিঞ্জা ভ্যালী’  

ছবি : মেসেঞ্জার

 

পাহাড়, মেঘ আর আকাশের মিতালি। নীলাকাশে সাদা বকের ওড়াউড়ি। চোখ জুড়ানো সবুজের আস্ফালন। চারদিক থেকে ধেয়ে আসা বিশুদ্ধ হাওয়া। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৭শত ফুট উচ্চতায় মেঘের উপর থেকে দিগন্ত দেখার অনুভূতি। এই যেন কল্পনা বিলাসী কোনো লেখকের নিখুঁত বর্ণনাই হয়তো মনে হবে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষেই আশ্চর্যময় সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি ‘মিরিঞ্জা ভ্যালী’। যেখানে মিশে আছে পাহাড়, মেঘ আর আকাশ!

বান্দরবানের লামা উপজেলা লামা-চকরিয়া সড়কের পাশেই অবস্থিত এক মনোহরিণী স্থান ‘মিরিঞ্জা ভ্যালী’। যেখানে গেলেই দেখতে পাবেন সারি সারি পাহাড় মেঘের সাথে মিতালি করে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো কখনো আপনি নিজেই মেঘের ভেলা উপরে ভাসবেন। মেঘ আপনাকে ছুঁয়ে দিবে। শীতল এই পরশে জুড়িয়ে যাবে হৃদয় ও মন। মেঘ আর কুয়াশার এই লুকোচুরি খেলার দেখা মিলবে একদম ভোরে বা সন্ধ্যায়। বর্ষাকাল হলে সারাদিনই দেখা মিলবে মেঘ আসা যাওয়া খেলা। 

গাড়ি থেকে মিরিঞ্জা পাহাড়ে নামার পর থেকেই শুরু হয় নাগরিক কোলাহলমুক্ত, দূষিত বাতাসমুক্ত ও যান্ত্রিকতার দাবানলমুক্ত স্নিগ্ধ-সুশোভিত এক নতুন পথচলা। পাহাড়ের চূড়া ও সবুজের মাঝ দিয়ে দুই পাশের দিগন্ত দেখতে দেখতে কখন যে মিরিঞ্জা ভ্যালীতে পৌঁছে যাবেন, বুঝতেই পারবেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে গেলে দিনের প্রথমভাগে গিয়ে সন্ধ্যার আগে ফেরাই ভালো। তবে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই এখানে। 

মিরিঞ্জা ভ্যালীর সবচেয়ে সুন্দর সময় সকালের সূর্যোদয় ও বিকেলের সূর্যাস্তের দৃশ্য। সকালটা এত সুন্দর, আপনি পৌঁছা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাবেন। তবে এখানে প্রবেশে বা সৌন্দর্য অবলোকন কোন টাকা খরচ হবেনা। শুধু কিছু খেতে চাইলে দোকান থেকে কিনে নিতে পারেন। 

ব্যক্তি মালিকানা জায়গা হওয়ায় ও পর্যটকদের সরব উপস্থিতির কারণে মিরিঞ্জা ভ্যালীর মালিক মো: জিয়াউর রহমান নতুন করে দুইটি মাচাং ঘর ও খাওয়ার দোকান করেছেন। রয়েছে ৫০ এর অধিক তাবু ক্যাম্পিং এর সুবিধা। প্রতিদিনই দেশের দূরদূরান্তের ভ্রমণপিপাসু মানুষ খোলা আকাশের নিচে তাবু ক্যাম্পিং করে মিরিঞ্জা ভ্যালীর সৌন্দর্য ও জোৎস্না মাখা রাতের রূপ দেখতে আসেন। 

মিরিঞ্জা ভ্যালীর মালিক মো: জিয়াউর রহমান বলেন, এখানে একটি মাচাং ঘরে পরিবার নিয়ে রাত্রিযাপনের সুবিধা রয়েছে। চাইলে ৬/৭ জন বন্ধু মিলেও মাচাং ঘরটি থাকতে পারেন। প্রতি রাতের জন্য আপনাকে গুণতে হবে ১ হাজার টাকা। পর্যটকরা চাইলে নিজেরা রান্না করে খেতে পারেন অথবা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। খুবই কম খরচে আপনি অনুভব করবেন দার্জিলিং বা নেপাল ভ্রমণের স্বাধ। 

ঢাকা মিরপুর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালীতে ঘুরতে আসেন আরমান মাহমুদ, আনোয়ার মৃধা, শরিফুল ইসলাম। তারা বলেন, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে এত সুন্দর, তা বর্ণনা করা যাবে না। আমরা তিন বন্ধু মিলে এখানে তাবু ক্যাম্পিং করে থাকতে এসেছি। রাতের জোৎস্না মাখা সৌন্দর্য দেখে সত্যি আমরা বিমোহিত। 

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, আমি নিজেও কয়েকবার মিরিঞ্জা ভ্যালীতে গিয়েছি। জায়গাটি সবসময় সুন্দর। লামা পর্যটন শিল্পে মিরিঞ্জা ভ্যালী অবদান রাখবে। 

যেভাবে যাবেন:-

সারাদেশ থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। সেখান থেকে লামা-আলীকদম পথে জীপ, বাস বা সিএনজি করে মিরিঞ্জা ভ্যালীতে যাওয়া যায়। লামা আলীকদম সড়কে মিরিঞ্জা পাহাড়ের চূড়ায় গাড়ি থেকে নেমেই ১০ মিনিট হাঁটলেই মিরিঞ্জা ভ্যালী। চাইলে মোটর সাইকেল নিয়ে স্পটে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে মিরিঞ্জা পাহাড়ের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। বাস বা জিপ গাড়িতে ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। চাইলে সিএনজি বা প্রাইভেট গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন। যাওয়ার রাস্তাও খুব সহজ, তেমন একটা কষ্টের পথ নেই। কারণ সবটা পথ গাড়িতে গিয়ে শুধু ১০ মিনিট হেঁটেই যাওয়া যায়। এখন জায়গাটি খুবই পরিচিত। আর মিরিঞ্জা পাহাড় থেকে লামা শহরের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। যদিও মিরিঞ্জা ভ্যালীতে দাঁড়িয়ে লামা শহরটি দেখা যায়। একইসাথে দিকজোড়া দিগন্তে আলীকদম ও থানচি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দেখতে পাবেন ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে।

যা যা সঙ্গে নেবেন:-

সুন্দর মুহুর্তগুলো ধরে রাখতে ক্যামেরা বা ভালো একটি মোবাইল, সারাদিন থাকতে চাইলে দুপুরের খাবার (চাইলে ওখানে অর্ডার দিয়েও পারেন), পানি, হালকা নাশতা, এডভেঞ্চার ভ্রমণে লুঙ্গি বা থ্রি কোয়ার্টার, মোবাইলের পাওয়ার ব্যাংক। 

সাবধানতা: মিরিঞ্জা ভ্যালী পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় দলবেঁধে চলা ভালো। দু’পাশে খাড়া গভীর গিরিখাদ। অসতর্ক থাকলে পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মেসেঞ্জার/জিয়া/আপেল