ঢাকা,  শনিবার
২৭ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

ঘুরে এলাম নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ঘুরে এলাম নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল। ছবিঃ সৌজন্য

মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টার, অ্যাসাইনমেন্ট প্রেজেন্টেশনের প্রচণ্ড চাপের ভিতর মনে হলো দিনের জন্য হলেও আমার পাহাড়ে যাওয়া দরকার। তিন বেলা নিয়ম করে পেটের ক্ষুধা মেটাতে ভাত খাওয়ার মতো কিছুদিন পর পর মনের ক্ষুধা মেটাতে আমার পাহাড়ে যেতে হয়।

যেহেতু ক্লাস চলছে তাই খুঁজছিলাম মাঝে শুধু শুক্রবার রেখে কীভাবে দিনে ট্যুরের পরিকল্পনা করা যায়।  ঘোরার জন্য আমার সঙ্গীর অভাব কখনই হয়নি। কেউ না কেউ প্রতিবার জুটে গেছে এই ভ্রমণপ্রেমীর ভাগ্যে। সেবার জুটেছিল আমার চাকরিজীবী বান্ধবী যাদের ছুটি শুধুমাত্র শুক্রবার। ঠিক হলো বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঢাকায়, সেখান থেকে রাতের বাসে সীতাকুণ্ডচট্টগ্রাম। যাওয়ার আগেরদিন সঙ্গে পেলাম ভার্সিটির সবথেকে কাছের বান্ধবীকে। মজার বিষয় গন্তব্যস্থল না জেনেই সে রাজি হয়েছিল, ঢাকায় যাওয়ার পথেই জেনেছে কোথায় যাওয়া হচ্ছে। খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে শুনলাম চট্টগ্রামের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দুশ্চিন্তার বদলে আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল, মনে হয় ব্যস্ততা থেকে ছাড়া পাওয়ার খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছিলাম। শেষমেষ বান্ধবী জোগাড় করলো বাসের একদম পেছনের দিকে টি টিকিট। তখনো জানি না ঢাকার জ্যাম ঠেলে ঠিক সময়ে সীতাকুণ্ডের বাস ধরতে পারব কি না। তবে জ্যাম আর বাধা হলো না। কোনোমতে রাত সাড়ে ১১ টায় শুরু হলো আমাদের টি মেয়ের সীতাকুন্ডের উদ্দেশে যাত্রা। 

ট্রেইলের শুরু। ছবিঃ সাদিয়া ইসলাম মুমু

শেষ রাতে আলো ফোটার আগে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হলো মিরসরাইয়ে। একটিমাত্র দোকান খোলা ছিল, সেখানেই বসে হালকা নাস্তা করে ঠিক হলো নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে যাব। সাতটা বাজার অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম ট্রেইলে, সঙ্গে নেওয়া হল একজন গাইড। শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং৷

খুব ভোরে যাওয়ায় পুরো ট্রেইল ফাঁকাই পেয়েছিলাম।  গাছের ঘন পাতার মাঝ দিয়ে আসা সূর্যের রশ্মি, ঝিরির ঠান্ডা পানি, দূর থেকে ভেসে আসা পাখির ডাক আর মাঝেমধ্যে চোখে পড়া ঝিরির পানিতে কাজ করা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সমন্বয় তৈরি করেছিল অপার্থিব দৃশ্যের। নিরিবিলি  ট্রেইলে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম ভয়ংকর কুপিকাটা খুমে। গাইডের দেওয়া বিগত দিনগুলোতে খুমের পানিতে সাতার কাটতে গিয়ে কয়েক জনের মৃত্যুর খবর আর পাশে থাকা সতর্কীকরণ বার্তা আমাদের বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল পাহাড়ের ভয়ংকর দিকের কথা। সেখান থেকে একটু উপরে উঠেই দেখা মিললো নাপিত্তাছড়া ঝর্নার।

কুপিকাটা খুম। ছবিঃ সাদিয়া ইসলাম মুমু

পানি যদিও তেমন পাইনি তবে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না ভরা বর্ষায় কী ভীষণ সুন্দর রূপ ধারণ করে নাপিত্তাছড়া। হাড় কাপানো ঠান্ডা পানির ধারায় প্রত্যেকেই মাথা পেতে বসে ছিলাম, খুব সম্ভবত সবাই শহুরে জীবনের জঞ্জাল ঝর্ণার ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিচ্ছিলাম,আর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আবার ব্যস্ততাপূর্ন  জীবনে ফেরার। ফেরার পথে পাহাড়ের পাদদেশের এক বাড়িতে দেশি মুরগী আর ডাল খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। পাহাড়ের খাবারের স্বাদের সঙ্গে কেন জানি অন্য খাবারের তুলনা দিতে মন টানে না। সব সময় অল্প খাবার পাতে নেওয়া আমি বেশ কয়েকবার ভাত নিয়ে প্রমাণ করেছি পাহাড়ের রান্না অতি সুস্বাদু। হাত ধুতে যখন বাইরে গিয়েছি তখন একটু দূরের পাহাড়ে সাদা পাখির ঝাক মনের ভেতর আফসোস এনেছিল। কেন এই দৃশ্যের দেখা আমার চোখ প্রতিদিন পায় না।

নাপিত্তাছড়া ঝর্না। ছবিঃ সাদিয়া ইসলাম মুমু

এরপর গিয়েছিলাম গুলিয়াখালী বিচে, ওখানে মানুষের ভিড় আর রোদের কারণে খুব একটা সুবিধা করে প্রকৃতি উপভোগ করা হয়নি। সবশেষে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করে ছুটে গিয়েছিলাম মহামায়া লেকে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় কায়াকিং না করার আফসোস নিয়ে ফেরত এসেছিলাম বাস স্ট্যান্ডে। তারপর ক্লান্ত শরীর বাসে এলিয়ে পরদিন ফিরেছিলাম খুলনাতে।

মেসেঞ্জার/মুমু